স্কুল, ক্লাস আর হোমওয়ার্ক নিয়ে বেশ ছিল তনয়া। জীবন চলছিল ‘জীবনের নিয়মে’। এরপরই ঘটে ঘটনাটি। কীভাবে, তনয়া জানে না। শুধু স্কুল ছুটির পর নিজেকে আবিষ্কার করে হোটেল রুমে। সেখান থেকে থানা হয়ে বাড়ি। তবে এই বাড়ি সেই বাড়ি নয়। এত দিন আদরে-ভালোবাসায় তাকে আগলে রেখেছিলেন যে মা–বাবা, তাঁদের কাছে ফেরা হয়নি। বদলে যায় তনয়ার গন্তব্য এবং বদলাতেই থাকে। গল্পটা চরকি ফ্লিকের ‘তনয়া’র হলেও এটা ঠিক গল্প নয়। কারণ, পরিচালক ইমরাউল রাফাত ‘তনয়া’ তৈরি করেছেন সত্য ঘটনা অবলম্বনে। আজ রাত ৮টায় চরকিতে মুক্তি পাবে নতুন এ কনটেন্ট। ইমরাউল রাফাত জানান, ২০১২ সালে ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনা অবলম্বনে সিরিজটি বানিয়েছেন তিনি। যাঁর সঙ্গে ঘটনাটি ঘটে, তিনি পরিচালকের পরিচিত। তাঁর কাছে ঘটনা শোনার পর মনে হয়, গল্পটা দর্শকদের সামনে তুলে ধরা দরকার।
‘তনয়া’ মূলত তনয়ার গল্প। তার চেনা পৃথিবী অচেনা ওঠার গল্প। যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুলতানা মাহিমা। মোটে বছর দুই হলো ক্যারিয়ারের বয়স। টিভি, ওটিটি মিলিয়ে বেশ কয়েকটি কাজ করেছেন। এবারের ঈদেও ছোট পর্দায় দেখা গেছে তাঁকে। তনয়া চরিত্রের জন্য মাহিমাকে কেন নিলেন? রাফাত বললেন, ‘বাস্তবে ঘটনাটি যখন ঘটে, মেয়েটি ক্লাস নাইনে পড়ত। এমন একজনকে খুঁজছিলাম, যার লুক ১৫-১৬ বছরের মেয়ের মতো। এ জন্য ২৫ জন স্ক্রিন টেস্ট দিয়েছে। তাদের মধ্যে মনে হয়েছে, মাহিমা হয়তো চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে পারবে।’
অডিশন দিয়ে চরিত্রটিতে সুযোগ পেয়ে ভীষণ উৎফুল্ল ছিলেন মাহিমা। একই সঙ্গে কাজ করছে একটু শঙ্কাও। কারণটা শোনা যাক তাঁর মুখেই, ‘পর্দার তনয়া আমার থেকে পুরোপুরি আলাদা। প্রথমে তো গল্প শুনেই খুব অবাক হয়েছিলাম—এমনটা কি সত্যিই ঘটেছিল! বাস্তবে আমি মা-বাবার খুব আদরে বড় হয়েছি। তাঁদের সঙ্গে আমার খুব বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু তনয়ার ক্ষেত্রে পুরো আলাদা। এ জন্য চ্যালেঞ্জটা ছিল আরও বেশি। যেমন আমি মা–বাবার হাতে সেভাবে মার খাইনি। কিন্তু তনয়ার কাছে এটা ছিল ডালভাত। তনয়া চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে ক্যামেরার বাইরে ৪০ কি ৫০টি থাপ্পড় খেয়েছি।’
তনয়াকে নির্দ্বিধায় নিজের ক্যারিয়ারে কঠিনতম চরিত্র বলে রায় দিলেন মাহিমা। এই কঠিনতম চরিত্রের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন, জানালেন সেটাও। তিনি বলেন, ‘তনয়ার সঙ্গে মিল আছে বলে মনে হয়েছে, এমন বেশ কয়েকটি সিনেমা-সিরিজ দেখেছি।’ তবে প্রস্তুতি নেওয়া আর শুটিংয়ের সময় পারফর্ম করা তো এক নয়। সেটা সম্ভব হয়েছে পরিচালক আর সহশিল্পীদের কারণে, ‘রাফাত ভাই কাজটা করতে যেভাবে হেল্প করেছেন, তা বর্ণনাতীত। এ ছাড়া বাবু স্যারের (ফজলুর রহমান বাবু) কথা তো না বললেই নয়। অন স্ক্রিন তিনি বাবা ছিলেন কিন্তু অফ স্ক্রিনেও বাবার মতোই গাইড করেছেন। এর আগেও ওনার সঙ্গে কাজ করেছি। কাজের সময় তিনি এতটা সহযোগিতা করেন, বলার নয়। কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলেও উনি যেভাবে প্রেরণা দেন, সেটা অসাধারণ। একই কথা শামীমা আপার (তনয়ার মায়ের চরিত্রে অভিনয় করা শামীমা নাজনীন) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মনে হয়েছে, আমার সত্যিকারের মা–বাবা যেন সেটে এসেছেন।’
‘তনয়া’র টিজার মুক্তির পর থেকে বাবার চরিত্রে নজর কেড়েছেন ফজলুর রহমান বাবু। তাঁর জন্য অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়েছেন তিনি। অভিনেতা জানালেন আগে করা বাবার চরিত্র আর তনয়ার বাবার চরিত্রের মধ্যে পার্থক্যের কথা, ‘বাবার চরিত্র হলেও পরিস্থিতি, চরিত্রের ধরন একরকম নয়। এখানে যেমন আমি এক ভুক্তভোগীর বাবা, যে নিজেও আসলে পরিস্থিতির শিকার। সমাজের নানা মানুষ নানা কথা বলছে। সবকিছু মিলিয়ে পর্দায় আমি এক দিশাহারা বাবা। যে মানুষের বাঁকা কথা সহ্য করতে পারছে না আবার মেয়ের পাশে দাঁড়াবে, সেটাও পারছে না। এটা নিয়ে চরিত্রের মধ্যে একটা জটিল ব্যাপার আছে।’ চরকিতে ফজলুর রহমান বাবু ও ইমরাউল রাফাতের দ্বিতীয় কাজ ‘তনয়া’। আগে রায়হান রাফির ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’তে অভিনয় করেছিলেন বাবু, রাফাত বানিয়েছিলেন ‘তিথির অসুখ’। অন্যদিকে মাহিমার চরকিতে অভিষেক হচ্ছে আজ। তিনি মুখিয়ে আছেন দর্শকদের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য। মজার ব্যাপার, নবাগত মাহিমা আগে রাফাতের সঙ্গে কাজ করেছেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করলেও এবারই প্রথম রাফাতের পরিচালনায় অভিনয় করলেন বাবু।
আবারও চরকিতে ফিরতে পেরে আনন্দিত রাফাত। আরও বেশি খুশি সত্য ঘটনা অবলম্বনে কনটেন্ট নিয়ে আসতে পেরে। পরিচালক বলেন, ‘তনয়ার গল্পটা আড্ডায় শোনা। সাধারণত আমরা যে ফরম্যাটে যাই—গল্প লিখে রাখা, প্রপোজাল জমা দেওয়া; এই গল্পের ক্ষেত্রে তেমন কিছুই হয়নি। গল্পটা মাথাতেই ছিল। ঘটনাচক্রে চরকির সঙ্গে গল্পটা নিয়ে আলোচনা হয়। সত্য ঘটনা নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার জন্য সব সময় ভালো। কারণ, এতে জীবনঘনিষ্ঠ অনেক কিছু পাওয়া যায়। বাবু ভাই, মাহিমাসহ যাঁরা অভিনয় করেছেন, সবাই দুর্দান্ত করেছেন। টিমের সবাই অনেক চেষ্টা করেছেন। ‘তনয়া’ আমার খুব কাছের একটা প্রোডাকশন।’ ‘তনয়া’তে ফজলুর রহমান বাবু, সুলতানা মাহিমা ছাড়া আরও অভিনয় করেছেন এস এস জায়ান প্রমুখ।