‘কালারস অব ইভিল: রেড’–এর দৃশ্য। আইএমডিবি
‘কালারস অব ইভিল: রেড’–এর দৃশ্য। আইএমডিবি

সৈকতে তরুণীর লাশ, খুনি কে?

সমুদ্রঘেঁষা পোল্যান্ডের নিরুত্তাপ শহর ত্রিসিতি। হঠাৎই এক সকালে শহরটিতে শোরগোল পড়ে যায়। সমুদ্রের তীরে আবিষ্কৃত হয় এক তরুণীর মরদেহ। নগ্ন তরুণীর মরদেহটি পড়ে ছিল সমুদ্রসৈকতে। সময়টা ট্যুরিস্ট মৌসুম নয়। তবু সাতসকালে দু-একজন পর্যটক যা ভিড় করেছিলেন, তাঁদের সবাই জড়ো হন কৌতূহল মেটাতে। কে এই তরুণী? ঘটাস্থলে হাজির হন তরুণ পাবলিক প্রসিকিউটর লিওপল্ড বিলস্কি। তিনি কী পারবেন খুনিকে শনাক্ত করতে? এমন গল্প নিয়ে নির্মিত মিস্ট্রি ক্রাইম থ্রিলার সিনেমা ‘কালারস অব ইভিল: রেড’। গত ২৯ মে মুক্তির পর আদ্রিয়ান পানেক পোলিশ সিনেমাটি জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু ওটিটির এন্তার থ্রিলারে ভিড়ে কতটা জমল ছবিটি?

আদ্রিয়ান পানেক নানা ঘরানার সিনেমা বানান, নির্মাণ করেন টিভি সিরিজও। ঐতিহাসিক, ড্রামা নানা ধরনের গল্প তিনি উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। এবার তিনি হাজির হয়েছেন থ্রিলার নিয়ে। গল্প এগিয়ে যেতে যেতে জানা যায়, সৈকতে পাওয়া মরদেহটি মণিকা নামের এক তরুণীর। যার বাবা শহরের প্রভাবশালী আইনজীবী। আরও জানা যায়, মৃত্যুর কিছুদিন আগে থেকেই সে লাপাত্তা ছিল। আরও জানা যায়, শহরের এক নামী পানশালায় কাজ করত সে।

‘কালারস অব ইভিল: রেড’–এর দৃশ্য। আইএমডিবি

যে পানশালায় অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে আগে। যে পানশালার মালিক এক ধনকুবের। অনেক অভিযোগ থাকলেও যে বরাবরই থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই ধনকুবের সঙ্গে কী মণিকার খুনের সম্পর্ক আছে?

এর মধ্যে জানা যায়, খুনের আগে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল মণিকা। খুনের পর নিষ্ঠুরভাবে তার ঠোঁটও কেটে নেওয়া হয়! জানা যায়, পানশালায় কর্মরত আরও তরুণী আগে খুন হয়েছে, কেউ হয়েছে লাপাত্তা। তবে কী এটা কোনো ক্রমিক খুনের কাজ? বিলস্কি কি পারবে এমন জটিল ধাঁধা সমাধান করতে। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন জানা যায়, মণিকার মায়ের সঙ্গে মর্গের চিকিৎসকের গোপন প্রণয়ের কথা।

‘কালারস অব ইভিল: রেড’–এর দৃশ্য। আইএমডিবি

এককথায় ‘কালারস অব ইভিল: রেড’ মাঝারি মানের ছবি। এই সিনেমার বেশ কিছু ভালো দিক আছে। প্রথমত বলতে হয়, অভিনয়ের কথা। মণিকা চরিত্রে জোফিয়া জাস্টবেস্কা ভালো করেছেন। বিশেষ করে আবেগময় দৃশ্যগুলোতে তিনি ছিলেন দুর্দান্ত, তরুণ পাবলিক প্রসিকিউটরের চরিত্রে ইয়াকুব গিয়েরশালের অভিনয়ও ছিল দুর্দান্ত। কখনো পর্দায় তিনি অসহায়, কখনো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, কখনো বাবা; সব ক্ষেত্রেই মানিয়ে গেছেন তিনি। কিছু দৃশ্যে তাঁর কোনো সংলাপ নেই। কিন্তু মণিকার খুনের তদন্ত করতে গিয়ে নিজের শিশুসন্তানের কথা যখন মনে পড়ে, তাঁর এক্সপ্রেশন ছিল দেখার মতো।

সিনেমায় মণিকার মায়ের চরিত্রে দেখা গেছে স্টিভেন স্পিলবার্গের ‘শিন্ডলার্স লিস্ট’ দিয়ে পর্দায় অভিষেক হওয়া মায়া ওস্টাশেভস্কাকে। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে বিষণ্ন মা, যে কি না একই সঙ্গে প্রতিশোধের নেশায় মরিয়া; এমন জটিল চরিত্রে দারুণ করেছেন তিনি।

‘কালারস অব ইভিল: রেড’–এর দৃশ্য। আইএমডিবি

সিনেমাটির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা এর চিত্রনাট্য। আজকাল ওটিটতে এত থ্রিলার হয় যে এই সিনেমার চমক অনেক দর্শকের কাছেই সহজে অনুমানযোগ্য মনে হতে পারে। এ ছাড়া মণিকাকে খুন করার যে কারণ দেখানো হয়েছে ‘উপেক্ষা’, সেটাও ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়নি। ফলে দর্শক খুনির চরিত্রটির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারেন না। অন্য অনেক সিনেমার মতো এখানেও এক বিশ্বাসঘাতক আছে, তবে তাকেও আগেই বুঝে যাবেন।

ছুটির দিনে আপনি যদি হালকা মেজাজের কোনো সিনেমা দেখতে চান, তবে ‘কালারস অব ইভিল: রেড’কে বেছে নিতে পারেন। তবে মনে রাখা ভালো, সিনেমাটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নির্মিত। কিছু অন্তরঙ্গ দৃশ্যের সঙ্গে আছে সহিসংতাও।