‘সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ করিতেছি যে চরকির মিনিস্ট্রি অব লাভ প্রজেক্টের একজন সুযোগ্য মিনিস্টার হিসেবে নিজের দায়িত্ব বিশ্বস্ততার সহিত পালন করিব। ভালোবাসার প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য প্রকাশ করিব; মিনিস্টার অব লাভ হিসেবে আমি কেবল ভালোবাসার গল্পের দিকেই নজর দেব,’ এভাবেই গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার একটি হোটেলে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, শিহাব শাহীন, রেদওয়ান রনি, আশফাক নিপুন, রায়হান রাফী প্রমুখ দেশের শীর্ষ ১২ নির্মাতাকে শপথবাক্য পাঠ করালেন অভিনেতা ও নির্মাতা আফজাল হোসেন।
চরকির ‘মিনিস্ট্রি অব লাভ’ প্রকল্পের আওতায় ১২টি প্রেমের সিনেমা নির্মাণ করছেন তাঁরা। প্রতিটি সিনেমায় নির্মাতাদের ব্যক্তিগত জীবনের প্রেমের ছায়া থাকবে। নির্মাতাদের বলা হচ্ছে, ভালোবাসা মন্ত্রী। মন্ত্রীদের মুরব্বি মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে ‘চিফ মিনিস্টার’ বলে ডাকছেন রেদওয়ান রনি, আশফাক নিপুনরা। কাগজে-কলমে ফারুকী ‘মিনিস্ট্রি অব লাভ’ প্রকল্পের সহপ্রযোজক; প্রকল্পের ধারণাটি তাঁর স্ত্রী অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশার মাথা থেকে এসেছে।
গত বছরের ৮ অক্টোবর চরকি কার্নিভ্যালে ‘মিনিস্ট্রি অব লাভ’ প্রকল্পের ঘোষণা দেন ‘টেলিভিশন’, ‘ডুব’ নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এর ১০ মাস পর গতকাল জমকালো আয়োজনে প্রকল্পের ১২ নির্মাতার নাম ঘোষণা করে চরকি। সিনেমার আর দশটা প্রথাগত সংবাদ সম্মেলনের চেয়ে এটি ছিল আলাদা; এটিকে শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠান বলা হচ্ছে। ভালোবাসা মন্ত্রীদের পরনে ছিল কালো পাঞ্জাবি আর কোটি।
ভালোবাসা মন্ত্রী হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করলেন মন্ত্রীরা। শপথের শেষভাগে আওড়ালেন, ‘পারিপার্শ্বিকতা অথবা ইন্ডাস্ট্রির সবাই বানাচ্ছেন, এই চাপে পড়িয়া গতানুগতিক কিছু চিন্তা করিব না। নিজের জীবনের এক বা একাধিক কিংবা শতাধিক করা প্রেম থেকে যে শিক্ষা গ্রহণ করেছি, সেই শিক্ষার প্রেমময় রিফ্লেকশন আমার ফিল্মে ফুটিয়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করিব। জগতের সকল মানুষ ভালোবাসুক।’
১২ সিনেমার মধ্যে ‘চিফ মিনিস্টার’ মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মাণ করছেন দুটি—‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ ও ‘লাস্ট ডিফেন্ডারস অব মনোগামি’। এর আগে ওটিটিতে ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলমেন’ সিরিজ নির্মাণ করে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। ‘ঊনলৌকিক’, ‘ক্যাফে ডিজায়ার’ নির্মাতা রবিউল আলম নির্মাণ করবেন ‘ফরগেট মি নট’। ‘মায়াশালিক’, ‘সিন্ডিকেট’, ‘মাইশেলফ অ্যালেন’ স্বপন নির্মাতা শিহাব শাহীন হবেন ‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া’ সিনেমার কান্ডারি। ‘উঁকি’ নির্মাণ করবেন ‘চোরাবালি’, ‘আইসক্রিম’ নির্মাতা রেদওয়ান রনি। ‘উই নিড টু টক’ নির্মাণ করছেন ‘মহানগর’ নির্মাতা আশফাক নিপুন। আরও আছে আবু শাহেদ ইমনের ‘অবনী’, রায়হান রাফীর ‘মুহাব্বাত’; শঙ্খ দাশগুপ্ত ও রাকা নোশিন নাওয়ারের ‘ফিফটি ফিফটি’; আরিফুর রহমানের ‘জুঁই’; রেজাউর রহমানের ‘থার্টি সিক্স-টোয়েন্টি ফোর-থার্টি সিক্স’ এবং অনম বিশ্বাসের ‘শোল্ডার ম্যান’।
ইতিমধ্যে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর একটি সিনেমার দৃশ্যধারণের কাজ শেষ হয়েছে; আরও তিনটি সিনেমার দৃশ্যধারণের কাজ শিগগিরই শুরু হবে। ঢাকার বাইরে অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে দৃশ্যধারণ হবে। প্রতি এক মাস বিরতি নিয়ে আগামী দুই বছর ধরে ১২টি সিনেমা মুক্তি পাবে। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ দেশের আট বিভাগেই সিনেমার প্রিমিয়ার হবে, দেশজুড়ে সিনেমার প্রচারণা চালাবে চরকি। ‘মিনিস্ট্রি অব লাভ’-এর দ্বিতীয় মৌসুমও আসতে পারে।
মিনিস্ট্রি অব লাভ
স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের দর্শকেরা ধুন্ধুমার অ্যাকশন, থ্রিলার সিনেমা বেশি পছন্দ করছেন, দর্শকের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো থ্রিলারেই ঘুরপাক খাচ্ছে। চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি জানান, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের কাছ থেকে প্রেমের সিনেমা নির্মাণের তাগিদ পেয়েছেন তিনি।
মতিউর রহমান বলেন, ‘সিনেমার ভাবনা, চিন্তা ও উপস্থাপনা খুবই সুন্দর। এখন ওটিটি মানেই মারপিট, গোলাগুলি। প্রায়ই কথাটি বলতাম, আর কত। শেষ পর্যন্ত মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নেতৃত্বে ১২টি সিনেমা আসছে। আশা করি, প্রতিটি সিনেমাই সফল হবে। মাত্র দুই বছরে বিশ্বজুড়েই সম্মান ও স্বীকৃতি পেয়েছে চরকি। দেশের ১ নম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে চরকি, এটা আমাদের জন্য খুবই আনন্দের।’
মতিউর রহমান জানান, তাঁর জীবনের প্রথম দেখা প্রেমের সিনেমা ‘রোমান হলিডে’। সিনেমাটির কথা এখনো ভুলতে পারেননি তিনি। অড্রে হেপবার্ন ও গ্রেগরি পেকের মধ্যে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব ছিল। অড্রে হেপবার্নের মৃত্যুর পর তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আনএন্ডিং লাভ’ (অনন্ত প্রেম) কবিতা পাঠ করেছিলেন গ্রেগরি পেক।
মতিউর রহমানের দেখা দ্বিতীয় প্রেমের সিনেমা উত্তম-সুচিত্রা জুটির ‘সবার উপরে’। তাঁর ভাষ্যে, ‘উত্তম-সুচিত্রার প্রভাব এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এরপর কত কিছু দুনিয়াতে ঘটে গেল, কিন্তু ঘুরেফিরে আমাদের জীবনে ওই উত্তম-সুচিত্রা। এটা ভাবলে ভালো লাগে, পঞ্চাশ-ষাটের দশকে বিশ্বের সব দেশের সেরা সিনেমাগুলো আমরা দেখতে পেতাম। সেখানে প্রতিযোগিতার একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, যেই জন্য ঢাকার সিনেমা দ্রুত সফল হয়েছিল। তবে সেই ধারাটা আর থাকেনি।’
মন্ত্রীদের শপথবাক্য পাঠ করানোর পর ‘প্রেসিডেন্ট অব লাভ’ আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমার ধারণা ছিল, প্রেমের গল্পের কোনো মূল্য নেই। ২০২৩ সালে দেখা গেল, দেশের সেরা ১২ জন পরিচালক প্রেম নিয়ে কারবার করবেন; এটা আমার খুব ভালো লাগছে।’
‘মিনিস্ট্রি অব লাভ’ প্রকল্পের নেতৃত্বে থাকা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘মানুষের সঙ্গে মানুষের গল্প হারিয়ে যেতে পারে না। অনেকে প্রেমের বর্ণাঢ্য অভিজ্ঞতা নিয়ে নির্মাণে এসেছেন। একেকজন একেক ধরনের গল্প বলবেন।’
চরকির চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি বলেন, ‘ওটিটিতে সব ধরনের দর্শকের জন্য সব ধরনের টেস্টের কনটেন্ট থাকা দরকার। শুধু থ্রিলার বেশি থাকবে, এটা চাই না। বাংলাদেশের দর্শক আসলে ড্রামা দেখতে পছন্দ করে কিন্তু দর্শকের ওপর থ্রিলার চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রেম, ভালোবাসার গল্পগুলো ওটিটিতে আসছে না। সেই কারণেই ভালোবাসার সিনেমা আনছি আমরা।’
১২ সিনেমার নির্মাদের পাশাপাশি শাহরিয়ার শাকিল, শহীদুল আলম সাচ্চু, নুসরাত ইমরোজ তিশা, আরিফিন শুভ, তমা মির্জা, সুনেরাহ বিনতে কামাল, সৈয়দ আহমেদ শাওকী, সানী সানোয়ার, মৌসুমী হামিদসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন অভিনেত্রী সাবিলা নূর ও স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান আমিন হান্নান চৌধুরী।