দেশি ওয়েবে বৈচিত্র্যের রং

চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে সাড়া জাগিয়েছে বেশ কয়েকটি দেশি ওয়েব সিরিজ ও ফিল্ম। এই সময়ে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ও সিরিজের মধ্যে ভিন্নতাও দেখা গেছে। থ্রিলার ছাড়াও সিচুয়েশন কমেডি, ডার্ক কমেডিসহ নানা ধরনের কনটেন্ট দেখা গেছে।

আলোনায় ডার্ক কনটেন্ট

ডার্ক ধরনের কনটেন্ট নির্মাণের জন্য আগে থেকেই সুখ্যাতি আছে ভিকি জাহেদের। ‘পুনর্জন্ম’, ‘রেডরাম’-এ নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ তিনি দিয়েছেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বিঞ্জে মুক্তির পর সাড়া ফেলে তাঁর ওয়েব সিরিজ ‘দ্য সাইলেন্স’। অতিভোজন, হিংসা, ক্রোধ, অহংকার, লোভ, লালসা, অলসতা—এমন ধরনের বিষয় নিয়ে দেশে খুব বেশি কনটেন্ট হয়নি। ‘দ্য সাইলেন্স’ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় ইউটিউবার অরিত্র ব্যানার্জি তাঁর রিভিউয়ে বলেছিলেন, ‘বাস্তবতাবিবর্জিত কিছু বিষয় থাকলেও এটি এতটাই বিনোদনে ভরপুর আর বাণিজ্যিক মসলায় নির্মিত যে আপনি সব ভুলে পর্দায় বুঁদ হয়ে থাকবেন। অল্প বাজেটের মধ্যে বুদ্ধি দিয়ে কীভাবে ভালো ডার্ক কনটেন্ট বানানো যায়, নির্মাতা তা ভালো জানেন।’

‘দ্য সাইলেন্স’ সিরিজের একটি দৃশ্য

মুক্তির পর ‘দ্য সাইলেন্স’-এর প্রশংসা করেছেন ডলি জহুর, জাকিয়া বারী মম, মনিরা মিঠুসহ অনেকেই। সিরিজটিতে মেহজাবীন চৌধুরীকে যেভাবে দেখানো হয়েছে, সেটিরও প্রশংসা করেছেন দর্শক-সমালোচক। এ প্রসঙ্গে মেহজাবীন প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, চরিত্রটি বাস্তবসম্মত করতে মুখের গঠনে পরিবর্তন আনতে আলাদা দাঁত ব্যবহার করেছেন তিনি। দাঁতের ওপর দাঁত ব্যবহার করে কথা বলা, এক্সপ্রেশন দেওয়া তাঁর জন্য মোটেও সহজ ছিল না।

‘ফ্রাইডে’ ওয়েব ফিল্মের একটি পোস্টার

সত্য ঘটনা অবলম্বনে ‘পরাণ’ বানিয়ে গত বছর আলোচনায় ছিলেন রায়হান রাফি। চলতি বছর বিঞ্জে মুক্তি পাওয়া ওয়েব ফিল্ম ‘ফ্রাইডে’ও ছিল সত্য ঘটনা অবলম্বনে। মুক্তির পর অনেক দর্শক বলেছেন, বাইরে ব্রুটাল ভায়োলেন্স বা স্ল্যাশার ঘরানার কাজ হামেশা দেখা গেলেও দেশে এ ধরনের কাজ খুব একটা হয় না। এমন একটি কাজের জন্য নির্মাতার প্রশংসা করেছেন মারুফ ইমন নামের এক দর্শক।

নারীকেন্দ্রিক কাজ বেড়েছে
‘গুটি’তে বাঁধন, ‘দ্য সাইলেন্স’-এ মেহজাবীনের মতো ‘ফ্রাইডে’তে নজর কেড়েছেন তমা মির্জা। ‘ফ্রাইডে’র সাধারণ পারিবারিক মুহূর্ত থেকে নৃশংসতার দৃশ্যগুলোতে তাঁর আবেগের বহিঃপ্রকাশ মুগ্ধ করেছে দর্শককে। দেশে নারীকেন্দ্রিক কাজ হয় না—এমন আক্ষেপের মধ্যে নিঃসন্দেহে আশা জাগিয়েছে বছরের প্রথম তিন মাসে মুক্তি পাওয়া এই তিন কনটেন্ট।

‘ইন্টার্নশিপ’-এর একটি দৃশ্য

ওটিটি মানেই থ্রিলার নয়
বিশ্বজুড়ে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোতে থ্রিলার কনটেন্টের প্রাধান্যই বেশি। তবে প্রথম তিন মাসে মুক্তি পাওয়া দেশীয় কনটেন্টগুলোর মধ্যে বেশ বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। প্রথমেই বলতে হয় ‘ইন্টার্নশিপ’-এর কথা। একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার গল্প নিয়ে নির্মিত সিরিজটি প্রশংসিত হয়েছে বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপ, চিত্রনাট্য আর ‘স্বাভাবিক’ অভিনয়ের জন্য। সিরিজটি দেখে মেহেদি হাসান নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বিদেশি সিটকম দেখে পাগল বাঙালি জাতির খোরাক যেন এবার পূরণ হলো!’

সালমান শাহকে নিয়ে নির্মিত কি না, এ বিতর্কের মধ্যেই অনেকটা নীরবে মার্চের শুরুতে হইচইয়ে মুক্তি পায় আলোচিত সিরিজ ‘বুকের মধ্যে আগুন’। ‘সালামন শাহ’–বিতর্ক ভুলে মুক্তির পর প্রশংসিত হয় আট পর্বের সিরিজটি। তানিম রহমান পরিচালিত সিরিজে রোমান্টিক ইমেজ ছেড়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তা গোলাম মামুন চরিত্রে চমকে দেন জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। বর্তমান আর ফ্ল্যাশব্যাকের মিশেলে নির্মিত ড্রামা ঘরানার সিরিজটিতে বড় সম্পদ ছিল সংলাপ আর অভিনয়।

তানিম রহমান পরিচালিত সিরিজে গোয়েন্দা কর্মকর্তা গোলাম মামুন চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব

সিরিজটি দেখে আভি জিবরান নামের এক দর্শক লিখেছেন, ‘কথার পিঠে কথা, ইম্প্রোভাইজড বাজে ডায়ালগ নেই। গোছানো স্ক্রিপ্ট। টেকনিক্যাল ভুলত্রুটি তো বাংলাদেশি কনটেন্টে থাকবেই। সেই বিচারেই “বুকের মধ্যে আগুন” ওয়াজ ফান টু ওয়াচ। বিরক্ত লাগেনি।’

‘উনিশ২০’–এ শুভ ও বিন্দু

ডার্ক আর সিচুয়েশন কমেডির কনটেন্টের মধ্যে পয়লা ফাল্গুনে মুক্তি পায় রোমান্টিক ওয়েব ফিল্ম ‘উনিশ২০’। মিজানুর রহমান আরিয়ানের দ্বিতীয় সিনেমার প্রধান দুই চরিত্র করেন আরিফিন শুভ ও বিন্দু। আরিয়ানের প্রথম সিনেমা ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’র মতো না হলেও রোমান্টিক সিনেমাটি বেশ প্রশংসিত হয়, শুভ-বিন্দুর রসায়ন মুগ্ধ করে দর্শককে।

‘বুকের মধ্যে আগুন’–এ শাহনাজ সুমি

আলোচিত তরুণ
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে প্রচারিত হওয়া সিরিজ ও ওয়েব ফিল্ম দিয়ে নজর কেড়েছেন বেশ কয়েকজন তরুণ অভিনয়শিল্পী। এর মধ্যে বলা যায় নীলাঞ্জনা নীল (‘ফ্রাইডে’), শাহনাজ সুমী (‘বুকের মধ্যে আগুন’) আর সৌম্য জ্যোতির (‘ইন্টার্নশিপ’) কথা। বিশেষ করে বলতে হয় নীলাঞ্জনা নীলের কথা। নাসির উদ্দিন খান, তমা মির্জাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন, তাঁকে নিয়ে কথা বলতে বাধ্য করেছেন দর্শকদের।

‘পুরোনো’দের ফিরে আসা
গত কয়েক বছরে ওটিটির কল্যাণে নতুন করে অভিনয় দিয়ে আলোচিত হয়েছেন ইন্তেখাব দিনার। চলতি বছর এ তালিকায় নিঃসন্দেহে যুক্ত হবে তানিয়া আহমেদ, বিজরী বরকতউল্লাহ, ফারজানা ছবির নাম।

‘বুকের মধ্যে আগুন’, ‘উনিশ২০’—দুই কনটেন্টে স্বল্প সময়ের উপস্থিতিতেও চমকে দিয়েছেন তানিয়া আহমেদ। অন্যদিকে ‘দ্য সাইলেন্স’-এ বিজরী বরকতউল্লাহর কাজ প্রশংসিত হয়েছে। এ ছাড়া ‘টান’, ‘নিঃশ্বাস’-এর পর ‘ফ্রাইডে’র তিনটি চরিত্রে ছবি যেভাবে পারফর্ম করেছেন, তা দর্শকের প্রশংসা কুড়িয়েছে।