বোনকে খুঁজতে সুলতানার মরিয়া যাত্রা

‘নিকষ’–এর একটি দৃশ্য
দীপ্ত প্লের সৌজন্যে

‘আমি বড় একটা বিপদে পড়েছি। বুঝতে পারছি না, কী করা উচিত। আপনারা আমাকে একটু সাহায্য করেন। আমার বোনকে আমি খুঁজে পাইতেছি না। ও স্কুলে গিয়েছিল, যাওয়ার পর হঠাৎ করে দেখি কোনো খোঁজখবর নাই। বাসায় আসতেছে না,’ দিন কয়েক আগে ফেসবুক লাইভে এসে এভাবেই আবেদন জানান তাসনিয়া ফারিণ। ‘বোন হারানো’র বিষয়টি যে তাঁর নতুন ওয়েব ফিল্ম ‘নিকষ’-এর প্রচারের অংশ, সেটা বুঝতে পারেননি অনেক দর্শক।

অনেকেই ভেবেছেন, সত্যিই বুঝি বোন হারিয়ে বিপদে পড়েছেন অভিনেত্রী। গতকাল বিকেলে ‘নিকষ’ নিয়ে মুঠোফোনে যখন ফারিণের সঙ্গে কথা হয়, অবধারিতভাবেই উঠে আসে সেই ‘ফেসবুক লাইভ’-এর প্রসঙ্গ। উত্তরে ফারিণ বললেন, ‘আমরা কিন্তু ভিডিওর শেষে সব পরিষ্কার করে দিয়েছি। পুরো ভিডিও যে সবাই দেখবে না, সেটা আমাদের বোঝার ভুল ছিল। প্রথমবার প্রচারণার সময় ভুল–বোঝাবুঝিটা হয়েছে, বোঝার পর থেকে আমরাও শুধরে নিয়েছি।’

থ্রিলার ঘরানার ওয়েব ফিল্ম ‘নিকষ’ পরিচালনা করেছেন রুবেল হাসান। ওটিটিতে এটিই তাঁর প্রথম কাজ।

‘নিকষ’–এর একটি দৃশ্য

ওয়েবে অভিষেকের জন্য এ গল্পই কেন বাছলেন, সেটা তিনি বলছিলেন গতকাল বিকেলে, ‘এটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। এই সময়ে সমাজে ঘটে, আমাদের চেনা এমন অনেক কিছুই এখানে আছে। সামাজিক সচেতনতারও একটা বার্তা আছে।’ থ্রিলার ঘরানার গল্পটির কেন্দ্রে আছে দুই বোন—সুলতানা ও লিজা। থাকে বস্তিতে। সুলতানা টাইপিস্টের চাকরি করে আর স্কুলে পড়ে লিজা। হঠাৎ ছোট বোন লাপাত্তা হয়। বোনকে খুঁজে পেতে মরিয়া সুলতানার অভিযান নিয়ে এগিয়ে যায় গল্প। পরিচালক জানালেন, এ ধরনের চরিত্র করার জন্য যে অভিনয়দক্ষতা দরকার, সেটা আছে বলেই সুলতানা চরিত্রের জন্য তিনি ফারিণকে ভেবেছেন। ছোট বোন লিজার চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাখনুন মাহিমা।

আগামী ঈদে দেশি অনেক কনটেন্টই মুক্তি পাবে। এর মধ্য থেকে ‘নিকষ’ কেন দেখবেন দর্শক? উত্তর দিতে গিয়ে ফারিণ বলছিলেন নারীপ্রধান আর পারিবারিক গল্পের কথা, ‘বলছি না এটিই ঈদের সেরা কাজ, তবে নতুন কিছু অবশ্যই আছে। যাঁরা পারিবারিক গল্পের কাজ দেখতে চান, তাঁদের ভালো লাগবে। প্রধান দুই চরিত্রে নারী—এমন গল্পও সচরাচর খুব কম হয়। এ কারণেই দুই বোনের গল্প নিয়ে নির্মিত নিকষ অন্য কাজের চেয়ে একটু আলাদা।’

‘নিকষ’–এর একটি দৃশ্য

ওটিটিতে ফারিণের প্রথম কাজ ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলমেন’ও ছিল নারীপ্রধান। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সিরিজটিতে সাবিলা চরিত্রে অভিনয় করেন ফারিণ। আরেক আলোচিত সিরিজ সৈয়দ আহমেদ শাওকীর ‘কারাগার’-এও মাহা চরিত্রটি ছিল সাবিলার মতো গ্ল্যামারহীন। সেই সূত্রেই জানতে চাওয়া, ওয়েব কাজের ক্ষেত্রে গ্ল্যামারাস চরিত্র করবেন না, এমন কোনো পণ করেছেন কি না? ফারিণ বললেন, ‘আমার কাছে অভিনয়নির্ভর, চ্যালেঞ্জিং ধরনের কাজই বেশি আসে। আমার কাছে গ্ল্যামারাস বা নন-গ্ল্যামারাসের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ গল্প আর গল্পের চরিত্র। “নেটওয়ার্কের বাইরে”-তে তো আমি গ্ল্যামারাস চরিত্রও করেছি।’

ফারিণের কাছে প্রশ্ন ছিল, ‘নিকষ’-এর সুলতানা হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ কী ছিল? প্রশ্নটি করতেই ফারিণ বলে উঠলেন, ‘শুটিং।’ আরও ভেঙে জানালেন, ওয়েব ছবিটির বেশির ভাগ শুটিং ছিল আউটডোরে, সব রিয়েল লোকেশন। সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনার এমন সব প্রত্যন্ত অঞ্চলে শুটিং হয়েছে, যেখানে ফোনের নেটওয়ার্ক নেই, পোশাক বদলের জায়গা তো দূরের কথা, বসার জায়গা পর্যন্ত নেই। ফলে সুলাতানার চরিত্রটি হয়ে ওঠার চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পারিপার্শ্বিক অবস্থা সামলে ভালোয় ভালোয় শুটিং শেষ করা।

তাসনিয়া ফারিণ

পরিচালক জানালেন, সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো ছাড়াও ঢাকার কড়াইল বস্তি, বনানীসহ বিভিন্ন জায়গায় ‘নিকষ’-এর শুটিং হয়েছে। ২৬ জুন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম দীপ্ত প্লেতে ফিল্মটি মুক্তি পাচ্ছে। এর কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন মেজবাহ উদ্দীন সুমন। ফারিণ ও মাহিমা ছাড়াও ওয়েব ছবিটিতে আরও অভিনয় করেছেন মীর নওফেল আশরাফী, জয়রাজ, রাকিব হোসাইন, খালেকুজ্জামান, সাবিহা জামান, ইসারত হৃদিকা।