ইমনের ‘রাহাত’ হয়ে ওঠা

মহাখালীর এসকেএস সেন্টারের স্টার সিনেপ্লেক্সে গত সোমবার সন্ধ্যায় ছিল মায়ার বিশেষ প্রদর্শনী। এই ওয়েব ফিল্মের অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলীসহ এসেছিলেন অন্য তারকা ও পরিচালকেরা। প্রদর্শনী শেষে কেউ কেউ বলেছেন, ‘রাহাত’ চরিত্রে বাজিমাত করেছেন মামনুন ইমন। ইমনের মাদকাসক্ত তরুণ রাহাত হয়ে ওঠার গল্প শুনলেন মনজুর কাদের।

‘মায়া’ দেখতে এসেছিলেন বিদ্যা সিনহা মিম। দীর্ঘদিন পর প্রেক্ষাগৃহে বসে উপভোগ করলেন নতুন কোনো বাংলা ছবি। ইমনের সঙ্গে ‘জোনাকীর আলো’ ও ‘পদ্ম পাতার জল’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন এই তারকা। ‘মায়া’য় ইমনকে দেখে মুগ্ধ মিম। তিনি বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের পরিচয়। একসঙ্গে নাটকে, মঞ্চে অনেক কাজ করেছি। বরাবরই দেখেছি, চেষ্টার কোনো কমতি রাখেন না ইমন ভাই। মনে হয়েছে, এটাতে আরও বেশি ডিভোটেড ছিলেন। মাদকাসক্ত চরিত্রে তাঁকে আগে কখনো দেখিনি। আমার মনে হয়েছে, ইমনকে নয়, রাহাতকেই দেখছি।’

দীঘিও জানালেন মুগ্ধতার কথা। ইমনের অভিনয় প্রসঙ্গে তরুণ প্রজন্মের এই অভিনেত্রী বলেন, ‘অসাধারণ! অসাধারণ! ইমন ভাইকে নতুনভাবে আবিষ্কার করলাম। প্রথমবার ওটিটিতে নেমেই বাজিমাত। তাঁকে আরও নিয়মিত দেখতে চাই।’ দীঘি জানান, শিশুশিল্পী হিসেবে ‘পিরিতের আগুন জলে দ্বিগুণ’ ছবিতে ইমনের সঙ্গে কাজ করেছিলেন, বড় হওয়ার পর কাজের সুযোগ হয়নি। তবে বড় হয়ে একসঙ্গে অনেক স্টেজ শো করেছেন। পরিচালক সকাল আহমেদ বলেন, ‘পর্দায় ইমনকে অনেক পরিণত লেগেছে। চরিত্রের প্রতি সুবিচার করেছে। ওর অভিনয় আমাকে অবাক করেছে।’

মামনুন ইমন

শুরুতে মডেলিং করতেন মামনুন ইমন। হুমায়ূন আহমেদের গল্প অবলম্বনে তৌকীর আহমেদের ‘দারুচিনি দ্বীপ’ দিয়ে ছবিতে নাম লেখান। এরপর একের পর এক চলচ্চিত্রে কাজ করে গেছেন। পাশাপাশি বিজ্ঞাপনচিত্রেও তাঁকে দেখা যায়। প্রথমবার ওটিটিতে কাজ করে নিজেকে নতুনভাবে চেনালেন। ‘মায়া’য় ‘রাহাত’ নামে এক মাদকাসক্ত যুবকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইমন। সোমবার প্রদর্শনী শেষে ইমনকে ঘিরে ধরেছিলেন সবাই। ইমনও সবার মতামত মন দিয়ে শোনেন।

চরিত্র হয়ে উঠতে

‘রাহাত’ চরিত্র হয়ে উঠতে ইমনকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। কারণ, তাঁর জন্য এটা অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। এমন চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব তাঁকে আগে কোনো পরিচালক দেননি। সেই গল্পই বলেন ইমন, ‘রায়হান রাফি আগের কাজগুলো যাঁদের সঙ্গে করেছেন, এই যেমন ‘সুড়ঙ্গ’তে আফরান নিশো, তাঁকে কিন্তু দর্শক আলাদা একটা জায়গায় রেখেছেন। শরিফুল রাজের সঙ্গেও করছেন, সেটাও অভিনয়নির্ভর দারুণ একটা গল্প। যত ওয়েব ফিল্ম রাফি বানিয়েছেন, বেশির ভাগই অভিনয়নির্ভর কাজ এবং গল্পগুলোও দুর্দান্ত। শেষে করেছে শাকিব খানকে নিয়ে ‘তুফান’। শাকিব ভাইকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ থাকার কারণে আমি দেখেছি, ‘তুফান’–এর শুটিংয়ের সময় কতটা আন্তরিক হয়ে তিনি কাজটি করতেন। আমার মাথায় এসব ছিল। আমিও যে চরিত্র পেয়েছি, সেটাতে নায়কোচিত ভাব থেকে বের হয়ে চরিত্র হয়ে উঠতে হবে, এটা ভাবতে হয়েছে।’

মামনুন ইমন

‘রাহাত’ চরিত্রে প্রস্তাব পাওয়ার পর থেকে ঢাকার একটি মাদকাসক্তি নিরায়ম কেন্দ্রে নিয়মিত যেতেন মামনুন ইমন। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতেন। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের আচার–আচরণ সামনে থেকে পর্যবেক্ষণ করতেন। সেসব গল্পই শোনান ইমন, ‘চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের আচরণ বোঝার চেষ্টা করেছি। তাঁরা সেখানে কী করেন, কেমন তাঁদের আচরণ। আবার যখন ড্রাগস নেওয়া বন্ধ করে দেন, তখন অবস্থা কেমন হয়, তা–ও বোঝার চেষ্টা করেছি। প্রথম ওয়েব ফিল্ম, চেষ্টার কমতি রাখিনি। চরিত্রটিকে নিজের ভেতর ধারণ করতে ছয় থেকে সাত দিন লেগেছে। এ–ও ভেবেছি যে সৎভাবে যদি কাজটা করি, মানুষ বুঝবে, ইমনের অভিনয়ের প্রতি যে আগ্রহ, তা শুধু মুখে মুখে নয়। বলতে পারেন, আমি চরিত্রটায় ডুবে ছিলাম। শো শেষে সবাই যখন বলছিলেন, “ভালো লেগেছে, অন্য ইমনকে দেখেছি,” তখন মনে হয়েছে যে পরিশ্রম সার্থক। আরেকজনের কথাও না বললেই নয়, তিনি রাফি। তিনিও আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। আমরা সার্বক্ষণিক গল্প নিয়ে কথা বলতাম। কখনো ফোনে, কখনো রাফির অফিসে চলে যেতাম।’

ইমন ও সারিকা

হাতে আছে যত কাজ

আগামী সপ্তাহে নতুন একটি ছবির কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন ইমন। ময়নার চর নামের এই ছবির পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। দুটি ছবির শুটিংও শেষ করা আছে। ‘কানামাছি’ ও ‘নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়’ নামের ছবি দুটির ডাবিংও শেষ। ‘অপারেশন জ্যাকপট’ ছবির কাজ ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে বলে জানান ইমন। তিনি বলেন, ‘সিনেমা নিয়ে স্বপ্নের শেষ নেই। ভালো গল্পের কাজ দিয়ে দর্শকের মনে জায়গা করতে চাই। মায়ার ট্রেলার দেখে কয়েকজন পরিচালক যোগাযোগ করেছেন।’
অভিনয় পেশার বাইরে একটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন ইমন। অভিনয়ের বাইরে যেটুকু সময় পান, এই প্রতিষ্ঠানকে দেন। বলেন, ‘আমি যে প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক, সেই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক শাকিব খান। তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্কটা বড় ভাই-ছোট ভাইয়ের মতো। আগে দেখা হলে ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কথা বলতাম, এখন দেশ-বিদেশের ব্যবসা নিয়েও আলাপ করি। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে গেলাম; লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে শাকিব ভাইয়ের নিউইয়র্কের বাসায় ছুটে গিয়েছিলাম। কয়েক দিন একসঙ্গে থেকেছি, আড্ডা দিয়েছি, ঘুরে বেড়িয়েছি। তাঁর সঙ্গে থেকে কাজ করছি, এটা সত্যিই অন্য রকম অনুভূতি।’