পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা। ব্রিটিশ আমলে এটি ভারতের রাজধানী ছিল। ভারতের সেরা মহানগরগুলোর মধ্যে কলকাতা অন্যতম। অনেকে ‘দ্য সিটি অব জয়’ অর্থাৎ ‘আনন্দের শহর’ বলেও ডাকেন একে। ফরাসি সাহিত্যিক দোমিনিক ল্যপিয়ের কলকাতা শহরে বসে এক রিকশাচালকের জীবনসংগ্রাম নিয়ে লিখেছিলেন ‘সিটি অব জয়’। ওই লেখক কলকাতা শহরে বহুদিন বাস করেছিলেন এবং এই শহর ও মানুষজনকে অন্তর দিয়ে চিনেছেন।
আমাদের এপার বাংলার অনেকের কাছে কলকাতা ‘সিটি অব জয়’। কেউ কেউ ‘মায়ানগরী’ও বলে থাকেন। অনেক লেখক কলকাতার অলিতেগলিতে গল্প খোঁজেন। পুরোনো কলকাতাকে খোঁজেন, নতুন কলকাতাকেও খোঁজেন। তাঁদের সেই খোঁজ যেন ক্যামেরাবন্দী করেছেন পরিচালক রাশেদ রাহা। বানিয়েছেন ওয়েব ফিল্ম ‘কলকাতা ডায়েরিজ’-এ। আজ বাংলাদেশের ওয়েব প্ল্যাটফর্ম বঙ্গবিডিতে মুক্তি পাচ্ছে এটি।
তরুণ সাংবাদিক খায়রুল বাসার নির্ঝর লিখেছেন এই চলচ্চিত্রের গল্প। এতে অভিনয় করেছেন পশ্চিমবঙ্গের অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র ও দর্শনা বণিক। তাঁদের সঙ্গে আছেন বাংলাদেশের তরুণ অভিনেতা সিফাত আমিন শুভ। আরও আছেন শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, অভিজিৎ গুহ প্রমুখ। শুটিং হয়েছে কলকাতার নিউটাউন ও রাজারহাট অঞ্চলে। বিগ আর এন্টারটেইনমেন্টের ব্যানারে ‘কলকাতা ডায়েরিজ’–এর প্রযোজনায় আছেন কাজী জাফরিন মুন। সংগীত পরিচালনায় এহসান রাহী। পরিচালক রাশেদ রাহা জানান, ২০২৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সিনেমার দৃশ্যধারণ শুরু হয়।
গল্পে দেখা যাবে, অনামিকা সাহা (শ্রীলেখা) একজন সফল উদ্যোক্তা। তার অফিসে কাজ করে শর্মী (দর্শনা)। বোনের মতোই কাছাকাছি সম্পর্ক তাদের। ঘটনাক্রমে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান পিকে (সিফাত আমিন)। জীবনের নানা জটিলতা পেরিয়ে অনামিকা যদিও এখন সফল নারী, তবু অতীত তার পিছু ছাড়ে না। অনামিকা, শর্মী ও শুভর পারস্পরিক সম্পর্ক ভিন্ন মোড় নেয়, যখন অনামিকার সাবেক স্বামী সুব্রত জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফিরে আসে।
গল্পের লেখক খায়রুল বাসার নির্ঝর প্রথম আলোকে বলেন, ‘“কলকাতা ডায়েরিজ”-এ মূলত কিছু সম্পর্ককে নানা দিক থেকে দেখার চেষ্টা করেছি আমরা। তবে ওয়েব কনটেন্টের সাধারণত যে বৈশিষ্ট্য, থ্রিল থাকে বা অনেক স্পিডি গল্প হয়, এগুলো এ কনটেন্টে নেই। এটা বরং সংলাপনির্ভর। অনেক কথার ভেতর দিয়ে একটা গল্প বলার ও পরিণতিতে পৌঁছানোর চেষ্টা। বছর দুয়েক ধরে কাজটির পরিকল্পনা হচ্ছিল। আমরা চেয়েছিলাম, নতুন কলকাতার যে চেহারা ও ঝকঝকে যাপন, সেটাকে প্রেক্ষাপটে রেখে গল্পটা বলতে। প্রথমে শ্রীলেখা মিত্র এটার সঙ্গে যুক্ত হন। তিনিই এ গল্পের মূল চরিত্রটা করেছেন। এরপর বাকিরা ধীরে ধীরে আসেন গল্পের প্রয়োজনে। তাঁরা ভালোই করেছেন।’
এর আগে রাশেদ রাহা ও খায়রুল বাসারের ‘ভালোবাসা দার্জিলিং’ নামে এক টেলিছবিতে অভিনয় করেছেন শ্রীলেখা মিত্র। বছর তিনেক আগে টেলিছবিটি ঢাকার এক বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচার করা হয়। এ অভিনেত্রীর পূর্বপুরুষের বসত ছিল মাদারীপুরের ঘটমাঝি গ্রামে, দেশভাগের সময় ভারতে পাড়ি দিতে হয়েছে তাঁদের।
শ্রীলেখার জন্ম ভারতে হলেও বাবার মুখে ঘটমাঝি গ্রামের গল্প শুনে বেড়ে উঠেছেন তিনি। নতুন এ চলচ্চিত্রের গল্প শেয়ার করে শ্রীলেখা মিত্র বলেন, ‘ওয়েব ফিল্মটিতে আমার নাম অনামিকা। আমি এখানে শর্মীর (দর্শনা বণিক) বস। আমি বস হওয়া সত্ত্বেও যেহেতু একটা ক্রিয়েটিভ অ্যারেনার মধ্যে রয়েছি, ফলে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আমার শর্মীর সঙ্গে। দুই বোনের মতো। বড় দিদির মতো একটু শাসনও করি। সে আমার বাড়িতে মাঝেমধ্যে থেকেও যায়। আমরা একসঙ্গে পার্টিও করি। শর্মী তার বন্ধু পিকেকে পরিচয় করিয়ে দেয়। সুতরাং আমাদের সঙ্গে সেও থাকে। আমাদের তিনজনের অনস্ক্রিন-অফস্ক্রিন একটা কেমিস্ট্রিও হয়েছে। কাজটা করে ভালো লেগেছে। এখন কতটা ভালো করতে পারলাম, সেটা দর্শক ভালো বলতে পারবেন।’
দর্শনা বণিক ইতিমধ্যে বেশ কিছু বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। অভিনয় করেছেন নাটকেও। এই অভিনেত্রীর ভাষ্য, ‘এই ওয়েব ফিল্মে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা আমার কাছে আলাদা। তার কারণ, আমি প্রথমবার রাশেদ রাহা, শ্রীলেখা মিত্র ও সিফাত আমিনের সঙ্গে কাজ করেছি। গল্পটা বাংলাদেশে লেখা হয়েছে। কিন্তু পুরো শুটিংটা হয়েছে কলকাতায়। অভিজ্ঞতা খুবই ভালো ছিল। এটি মূলত বন্ধুত্বের গল্প, সম্পর্কের গল্প। আজকের দিনের শহরের একটা গল্প। আমার চরিত্রটি (শর্মী) আজকের দিনের সঙ্গে খুব সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমি যে চরিত্রে অভিনয় করেছি, সে রকম চরিত্র প্রচুর আছে আমাদের আশপাশে। গল্পটির সঙ্গে দর্শক রিলেট করতে পারবেন।’