‘বুকের মধ্যে আগুন’ সিরিজে এক পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকমহলে প্রশংসিত হয়েছেন ছোট পর্দার তারকা অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। এখন ছক কষে, কড়ে আঙুলে গুনে গুনে কাজ করছেন তিনি। আসছে ঈদে কয়েকটি নাটকে পাওয়া যাবে তাঁকে।
টেলিভিশন নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি ওটিটিতেও পছন্দসই গল্পে অভিনয় করেন অপূর্ব। তবে সংখ্যায় তা একেবারে কম। তেমনই একটি গল্পে অভিনয় করে সম্প্রতি বেশ প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। বুকের মধ্যে আগুন নামের সেই সিরিজ দিয়ে ভারতীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচইয়ে প্রথম হাজির হন এই অভিনেতা। যাঁরাই সিরিজটি দেখছেন, একবাক্যে বলেছেন, এএসপি গোলাম মামুন চরিত্রে অপূর্ব মানিয়ে গেছেন। তাঁর লুক, গেটআপ মধ্যবয়স্ক পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে মানানসই লেগেছে। বিশেষ করে কিছু কিছু দৃশ্যে তাঁর ক্ষিপ্রতা চরিত্রটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে। একই সঙ্গে এই সিরিজ নিয়ে আলোচনা–সমালোচনাও ছিল অনেক। কারণ, অনেকের মতে, সিরিজটি দেশের চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহর জীবনী ঘিরে তৈরি হয়েছে। হইচই অবশ্য বলেছে, নব্বইয়ের দশকের একজন সুপারস্টার ও স্টাইল আইকন রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। সেই মৃত্যুরহস্য উন্মোচন করেন এএসপি গোলাম মামুন ওরফে অপূর্ব। সিরিজটি সালমান শাহর মৃত্যুরহস্য কি না, সে বিষয়ে পরিষ্কার করেননি তাঁরা। পুরো সিরিজে এএসপি গোলাম মামুন চরিত্রে অপূর্বর অভিনয় দর্শকদের মন ছুঁয়েছে। রোমান্টিক ইমেজের বাইরে এ রকম ভারী একটি চরিত্র যথাযথভাবেই উপস্থাপন করেছেন তিনি।
আড়ালে মনঃকষ্ট
অপূর্বর অপূর্ব সুন্দর সময় কাটছে। কারণ, ওটিটিতে মুক্তি পাওয়া বুকের মধ্যে আগুন সিরিজে তাঁর অভিনয় দর্শকেরা পছন্দ করেছেন। ফেসবুকসহ অন্য সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপূর্বকে নিয়ে চলছে প্রশংসাও।
তবে যে অভিনেতাকে নিয়ে এত প্রশংসা, তাঁর মনটা কয়েক দিন ধরে খারাপ। কারণ, সম্প্রতি তিনি চিরতরে হারিয়েছেন তাঁর ফুফুকে। এই ফুফু তাঁকে আদর করতেন। ভীষণ ভালোবাসতেন। বিভিন্ন সময় ফোন করে খোঁজখবর নিতেন। বাবাকে হারানোর এক বছরের মধ্যে ফুফুর মৃত্যু তাঁর মনটা বিষণ্ন করেছে। এদিকে মায়ের শরীরটাও বেশ কিছুদিন ধরে খারাপ যাচ্ছে।
অপূর্ব বললেন, ‘গত কয়েক বছরে অনেক মুরব্বি আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে গেলেন। বাবার মৃত্যুর পর এটা অনেক বেশি উপলব্ধি হয়। আগে আত্মীয়স্বজনের মধ্যে অনেক মুরব্বি খবর নিতেন। শুটিংয়ে থাকলেও জিজ্ঞেস করতেন, ঠিকমতো খেয়েছিস কি না। শরীরটা ভালো আছে কি না। এখন এ ধরনের মানুষগুলো চলে যাচ্ছেন। যে ফুফুটা মারা গেলেন, গত ঈদেও আমাকে ১০০ টাকা সালামি দিয়েছিলেন। কী যে নিষ্পাপ ভালোবাসা, এসব বলে বোঝাতে পারব না।’
ভালোবাসায় দায়বদ্ধ ও আবেগতাড়িত
১৭ বছর ধরে পেশাদার অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত অপূর্ব। দীর্ঘ সময়ে ভক্ত ও দর্শকের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা যেমন তিনি পেয়েছেন, তেমনি তাঁর অভিনীত চার ডজনের বেশি নাটক কোটি ভিউর মাইলফলকও অতিক্রম করেছে। নাটক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো নাটকে বড় ধরনের কোনো পরিকল্পনা করলে তাঁকে নিয়েই ভাবেন। কেউ কেউ বলেন, নাটকের পুরুষ অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে নাটকে এখন সর্বাধিক সম্মানীও এই তারকার। তবে এত কিছুকে ছাপিয়ে দর্শকের স্বার্থহীন ভালোবাসা তাঁকে আপ্লুত করে। আবেগতাড়িতও করে। মাঝেমধ্যে নাকি ভাবেন, এতটা ভালোবাসার যোগ্য কি না। অপূর্ব বলেন, ‘এটা তো এক-দুই দিন না বা এক-দুই বছর নয়। দেড় দশকের বেশি সময় অব্যাহত আছে। তাঁরা ভালোবেসেই যাচ্ছেন। যখন দেখি যে ছোট বাচ্চারাও আমার নামটা জানে, এমন অনুভূতি বলে বোঝানো সম্ভব নয়। স্বাভাবিকভাবে এত ভালোবাসা যেহেতু পাই, ভালোবাসা হারানোর ভয় তো থাকেই। তবে এটা ঠিক, সব সময় চেষ্টা থাকে, ভালোবাসা যাতে না হারাই, সেভাবে কাজ করতে থাকি।’
চলচ্চিত্র–ভাবনা
টেলিভিশন নাটকের তুমুল জনপ্রিয় এই অভিনেতাকে চলচ্চিত্রেও দেখা গেছে। তবে এসব চলচ্চিত্রে তাঁর অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়। তারপরও অপূর্বর ভক্তরা মনে করেন, চলচ্চিত্রের পর্দায় কাজ করলে তাঁরও ভালো করার সম্ভাবনা আছে।
কয়েকজন পরিচালকও অপূর্বকে নিয়ে চলচ্চিত্র বানানোর স্বপ্ন দেখেন। টেলিভিশন নাটকের রোমান্টিক বয় ইমেজের অপূর্ব জানালেন, ‘বিষয়টি হচ্ছে, যেকোনো জায়গায় থিতু হয়ে মনোনিবেশ করতে হয়। লেগে থাকতে হয়। টেলিভিশন নাটকে আমার ওপরও একটা গুরুদায়িত্ব এসে পড়েছে। এত মানুষ যাঁরা আমাকে অপূর্ব বানিয়েছেন, যাঁদের অবদানের শেষ নেই, এটার প্রতিদান হিসেবে টেলিভিশনে মন দিয়ে কাজ করছি। হঠাৎ আরেকটা প্ল্যাটফর্মে গিয়ে নতুন করে শুরু করাটাও কষ্টসাধ্য বিষয়। তবে বিষয়টা মোটেও এমন নয় যে বড় পর্দায় কাজ করব না। জীবনে অনেক কিছুই হয়। ব্যাটে-বলে আবার মিললে চলচ্চিত্রে দেখা যেতেও পারে।’