ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘ফিমেল ৪’, ‘গোলাম মামুন’ ও ‘বাজি’ আলোচনায় ছিল। কোলাজ
ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘ফিমেল ৪’,  ‘গোলাম মামুন’ ও ‘বাজি’ আলোচনায় ছিল। কোলাজ

ওয়েবের সিনেমা, সিরিজও আলোচনায়

প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ছাড়াও ঈদে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আসা দুটি ওয়েব সিরিজ ও একটি সিনেমাও আলোচিত হয়েছে অন্তর্জালে।

ক্রিকেটার তাহসানকে নিয়ে ‘বাজি’
একটা সময় পর্যন্ত ঈদ, বিশেষ দিবসের নাটকে দেখা যেত তাহসান খানকে। কিন্তু কয়েক বছর ধরেই অভিনয় থেকে বিরতি নিয়েছিলেন। গানে অবশ্য পাওয়া যাচ্ছিল তাঁকে। তবে অনেক ভক্তের চাওয়া ছিল ‘অভিনেতা তাহসান’কে দেখার। আগে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই গায়ক-অভিনেতা জানিয়েছিলেন, ভালো কনটেন্ট পেলেই পর্দায় দেখা যাবে তাঁকে। অপেক্ষা ফুরাল অবশেষে। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১৬‍ জুন চরকিতে মুক্তি পায় সাত পর্বের সিরিজ বাজি। আরিফুর রহমান পরিচালিত এ সিরিজে ক্রিকেটারের চরিত্রে দেখা গেছে অভিনেতাকে। মুক্তির পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে সিরিজটি। অনেক সমালোচক কারিগরি দিকের প্রশংসা করেছেন; কেউ আবার নির্মাণের সমালোচনা করেছেন।

‘বাজি’তে মিথিলা। চরকির সৌজন্যে

ক্রিপটিক ফেইট ব্যান্ডের ভোকালিস্ট শাকিব চৌধুরী নিয়মিত দেশি-বিদেশি সিনেমা, সিরিজের রিভিউ করেন ইউটিউব চ্যানেল ‘গিক মিথ’-এ। ‘বাজি’ দেখার পর নিজের অনুভূতি তিনি লিখেছেন নিজের ফেসবুক পেজে। ‘আরিফুর রহমান যত্ন নিয়ে সিরিজটা বানিয়েছেন। সুন্দর শুটিং, এডিটিং, আর্ট ডিরেকশন। যেটার কারণে আমি সিরিজটা শেষ করতে পেরেছি। আমি প্রায় বলে থাকি যে প্রোডাকশন ভ্যালু ভালো হলে, অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে জিনিসটা দেখতে, শুনতে ভালো হলে এমনিতেই দেখে ফেলা যায়। যেসব জিনিস নিয়ে অতৃপ্ত, সেগুলো পরে বিবেচনায় আসে। “বাজি”র ক্ষেত্রে এটাই হয়েছে। দেখতে, শুনতে ভালো। সাউন্ডের কাজ ভালো। তাই সিরিজটা শেষ করতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি। সবচেয়ে ভালো লেগেছে ক্রিকেট সিকোয়েন্স এবং এর ধারাভাষ্য। টিভি প্রোডাকশন হিসেবে সেটাকে নির্মাতা একদম ছক্কা মেরে দিয়েছেন। ফোলি সাউন্ডের কাজটাও ভালো হয়েছে’—লিখেছেন শাকিব।

‘বাজি’তে তাহসান। ছবি: চরকির সৌজন্যে

একই লেখায় তিনি সিরিজটির সমালোচনাও করেছেন। শাকিবের ভাষ্যে, ‘গল্পটা ভালো ছিল। ক্রিকেটের দুনিয়ায় বাজি ধরার অপরাধজগৎ নিয়ে মার্ডার থ্রিলার। কিন্তু গল্পটার চিত্রনাট্যের ব্যাপারে লেখক হাসানাত কটআউট। উনি মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখেননি। তাদের গল্প এগিয়ে নেওয়ার কলকবজা হিসেবে দেখেছেন। এতে অভিনেতারা হয়ে গেছেন রোবট। প্রচণ্ড বোরিং ও নিম্নমানের সংলাপ দিয়ে গল্পটা শিথিল করে দিয়েছেন।’

নাসিম রেজা নামের আরেক দর্শকের কাছে আবার সিরিজটি, বিশেষ করে তাহসানের অভিনয় খুব ভালো লেগেছে। ইউটিউবে মন্তব্যের ঘরে তিনি লিখেছেন, ‘এই প্রথম তাহসানের অভিনয় খুব খুব বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে।’ মোমিনুল মমিন নামের আরেক দর্শকের ভালো লেগেছে সিরিজটি। ফেসবুকে তিনি ক্রিকেট নিয়ে এমন একটি সিরিজ নির্মাণের জন্য চরকিকে ধন্যবাদও দিয়েছেন।
‘বাজি’তে তাহসান ছাড়াও অভিনয় করেছেন মিথিলা, মিম মানতাসা, মনোজ প্রামাণিক, নাজিয়া হক অর্ষা, শাহাদাৎ হোসেন, পার্থ শেখ, তাসনুভা তিশা, আবরার আতহারসহ আরও অনেকে।

ফিরলেন ‘গোলাম মামুন’
গত বছর চরকিতে মুক্তি পায় ওয়েব সিরিজ ‘সিন্ডিকেট’-এর স্পিন–অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সিরিজটির নির্মাতা ছিলেন শিহাব শাহীন। বছর ঘুরে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই বাংলাদেশের জন্য তিনি বানিয়েছেন আরেকটি স্পিন–অফ সিরিজ ‘গোলাম মামুন’। এটি একই প্ল্যাটফর্মে গত বছর মুক্তি পাওয়া সিরিজ ‘বুকের মধ্যে আগুন’-এর স্পিন–অফ। মূল সিরিজটির পরিচালক অবশ্য ছিলেন তানিম রহমান অংশু।

‘গোলাম মামুন’–এ অপূর্ব। ইইচই বাংলাদেশের ইনস্টাগ্রাম থেকে

পবিত্র ঈদুল আজহায় মুক্তির পর মোটাদাগে প্রশংসাই পেয়েছে ‘গোলাম মামুন’। সিরিজটির গল্পের প্রেক্ষাপট বিদেশি সিনেমা দেখা দর্শকের জন্য নতুন কিছু না হলেও জমাটি গল্প আর টান টান নির্মাণের জন্য পরিচালকের প্রশংসা করেছেন অনেক সমালোচক। কেউ আবার মনে করছেন, প্রথম কয়েকটি পর্বে সিরিজটি যেভাবে এগিয়েছে, শেষ পর্বগুলোতে সেভাবে মান ধরে রাখা যায়নি।

সিরিজটির গল্প গোয়েন্দা কর্মকর্তা গোলাম মামুনকে ঘিরে। তাঁর বিরুদ্ধে নিজের অফিসের সহকর্মী ও তাঁর স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ ওঠে! বলা যায়, পুরো বিভাগই তাঁর বিপক্ষে? একা গোলাম মামুন কি পারবেন নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ খণ্ডন করতে? এমন গল্প নিয়ে নির্মিত সিরিজটিতে নামভূমিকায় অভিনয় করেছেন জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। ‘বুকের মধ্যে আগুন’-এর গোলাম মামুন চরিত্রেও তাঁকে দেখা গিয়েছিল।

সিরিজটির প্রশংসা করে পশ্চিমবঙ্গের ইউটিউবার অরিত্র ব্যানার্জি নিজের চ্যানেল ‘অরিত্রস জ্ঞান’-এ বলেন, ‘চেনা সফল ফর্মুলা নিয়ে নির্মিত হলেও সিরিজটি বেশ ভালো। অ্যাকশন, অভিনয়, টুইস্ট মিলিয়ে বেশ উপভোগ্য সিরিজ।’
তবে এই সমালোচক মনে করেন, এ ধরনের সিরিজে প্রধান চরিত্রের ব্যক্তিগত জীবনের দ্বন্দ্ব পর্দায় হাজির করলে দর্শক এর সঙ্গে আরও একাত্ম বোধ করেন। সেটা করলে সিরিজটি আরও জমে উঠত।

সিরিজটিতে গোয়েন্দা পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ছোট পর্দার নিয়মিত মুখ সাবিলা নূর। ভিন্ন লুকে তাঁকে দেখে চমকে গেছেন অনেক দর্শক। অন্তর্জালে ‘গোলাম মামুন’-এ সাবিলার অভিনয়ও প্রশংসিত হয়েছে। সিরিজের আরেক চমক ছিলেন শার্লিন ফারজানা। পর্দায় স্বল্প উপস্থিতি হলেও বিরতির পর তাঁকে পর্দায় দেখে প্রশংসা করেছেন অনেক দর্শক। অপূর্ব, সাবিলা, শার্লিন ছাড়াও এতে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ, সৈয়দ নাজমুস সাকিব, রাশেদ মামুন অপু প্রমুখ।

আবার আলোচনায় ব্যাটারি গলির গল্প
ব্যাটারি গলির গল্প নিয়ে কাজল আরেফিন অমি বানিয়েছেন ফিমেল-এর আগের তিন কিস্তি। প্রতি পর্বেই দেখা গেছে, মহল্লার কোনো নারীকে কেন্দ্র করে ঘটতে থাকে নানা ঘটনা। এই ব্যাটারি গলির গল্প নিয়েই অমি এবার নির্মাণ করেছেন ওয়েব ফিল্ম ফিমেল ৪। ঈদের দিন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বঙ্গতে মুক্তি পেয়েছে সিরিজটি। মিশু সাব্বির বাদে আগের এই ফ্র্যাঞ্চাইজির সবাইকে দেখা গেছে সিনেমাটিতে। যুক্ত হয়েছে নতুন আরও কয়েকটি চরিত্র। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মারজুক রাসেল, পলাশ, চাষী আলম, শরাফ আহমেদ জীবন, ইরেশ যাকের, সাইদুর রহমান পাভেল, বাচ্চু প্রমুখ। মুক্তির পর এই ওয়েব ফিল্মের প্রশংসা করেছেন অনেক দর্শক। গত বৃহস্পতিবার নির্মাতা অমি ফেসবুক পোস্টে জানান, এরই মধ্যে ওয়েব ফিল্মটির ভিউয়ার ৪ লাখ ছাড়িয়েছে। এ জন্য তিনি দর্শকদের ধন্যবাদও জানান। কিন্তু কেন দর্শকেরা পছন্দ করেছেন সিরিজটি?

মুক্তির পর আলোচিত হয়েছে ওয়েব ফিল্ম ‘ফিমেল ৪’। ছবি: বঙ্গর ফেসবুক পেজ থেকে

ফেসবুক গ্রুপ ‘বাংলা চলচ্চিত্র’-তে নকীব খান নামের এক দর্শক লিখেছেন, ‘ওয়েব ফিল্মটি উপভোগ করার মতো ছিল। কমেডি সিকোয়েন্সগুলো দারুণ ছিল। সাধারণত কাজল আরেফিন অমির কাজগুলোতে কমেডি থাকে ভরপুর, তাই দেখতেও ভালো লাগে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, গলিসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ সেটগুলোর ডিজাইন ভালো লেগেছে। মজা পেয়েছি পলাশের কর্মকাণ্ড দেখে।’ অন্তর্জালে থাকা দর্শকের মতমত দেখে বোঝাই যায়, এই নির্মাতার কাছে তাঁরা যে বিনোদন খোঁজেন, সেটা এখানেও খুঁজে পেয়েছেন। কোনো কোনো দর্শক আবার ওয়েব ফিল্মটিতে ব্যবহৃত ভাষা নিয়ে নিজেদের আপত্তির কথাও জানিয়েছেন।