তখন মায়ের মুখটিই ভেসে উঠেছে

তমা মির্জা
তমা মির্জা

ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকির গত বছর মুক্তিপ্রাপ্ত ওয়েব ফিল্মগুলোর মধ্যে অন্যতম চমক ছিল রায়হান রাফির ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’। শুক্রবার রাতে ঘোষিত ‘আইসিটি চ্যানেল আই ডিজিটাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানে দুই শিল্পী, ফিল্ম—এই তিনটি বিভাগে পুরস্কার জিতে নিয়েছে ছবিটি। ছবির ‘পাখি’ চরিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী নির্বাচিত হয়েছেন তমা মির্জা।

নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তমা মির্জা বলেন, ‘আমার জীবনের বড় অর্জন হলো “নদীজন” ছবিতে জাতীয় পুরস্কার পাওয়া। এরপর দ্বিতীয় অর্জন “খাঁচার ভেতর অচিন পাখি” থেকে পুরস্কার। কারণ, এটিও বড় স্বীকৃতি। প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়াটা আমার জন্য অপ্রত্যাশিত ছিল। এবারেরটাও। কারণ, ওটিটির কনটেন্ট এখন সবচেয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ। ভালো ভালো কনটেন্ট নিয়মিতই মুক্তি পাচ্ছে। সেই প্রতিযোগিতায় গিয়ে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পাওয়া অনেক বড় ব্যাপার। তা ছাড়া এই ছবিতে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও বেস্ট মুভির পুরস্কারও জিতেছে। অন্য রকমের ভালো লাগা কাজ করছে আমার।’

পুরস্কার নেওয়ার সময় কার কথা বেশি মনে পড়েছে?—জানতে চাইলে তমা বলেন, ‘অনুষ্ঠানে আমার মা ছিলেন। তাঁর কথা খুব বেশি মনে পড়েছে। কারণও আছে। এই ছবির শুটিংয়ের দিনগুলোতে পুরো সময় মা আমার সঙ্গে ছিলেন। অনেক কষ্ট করেছেন তিনি। রংপুরের যে কারখানায় শুটিং হয়েছিল, সেখানে আলো–বাতাস ভালো ছিল না। ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে মেকআপ নিতাম। ওই সময় মাও উঠতেন। রাত ১২টা, কখনো ১টা পর্যন্ত শুটিং হতো। না খেয়ে অনেক সময় মা-ও বসে থাকতেন। তাই যখন পুরস্কার নিচ্ছিলাম, তখন মায়ের মুখটিই ভেসে উঠেছে।’

চ্যানেল আই ডিজিটাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডের আসরে চরকির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি, অভিনেত্রী তমা মির্জা, নির্মাতা মিজানুর রহমান আরিয়ান ও রায়হান রাফি। ছবি: চরকির সৌজন্যে

পাখি চরিত্রের পুরস্কার ছবির পরিচালকসহ পুরো টিমকে উৎসর্গ করেছেন তমা মির্জা। এই অভিনেত্রী বলেন, ‘একটি ছবি ভালো-মন্দ যা–ই হোক, ছবিটির সংশ্লিষ্ট সবাই ভাগীদার। ছবির যা কিছু অর্জন, সবারই প্রাপ্য সেটি।’

এত অল্প সময়ে চরকির মানসম্মত দর্শকসমৃদ্ধ কাজ উপহার দেওয়াকে ওটিটির জন্য ইতিবাচক দেখছেন এই অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘ওটিটি কনটেন্টের এই প্রতিযোগিতার মধ্যে অল্প সময়েই চরকি প্ল্যাটফর্মটি একটি জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন যেকোনো শিল্পীকে এই প্ল্যাটফর্মটিতে কাজের জন্য বলা হলে আমার মনে হয়, কেউ না করবেন না। কারণ, চরকি সেই জায়গাটি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এতগুলো কনটেন্ট পুরস্কার পাওয়াটাও তার একটি প্রমাণ।’

তমা মির্জা

তমা মির্জা আরও জানান, রায়হান রাফির ‘ডার্ক সাইট’ ফিল্মটিতে কাজের সময় জানতে পারেন এই পরিচালক ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’ নির্মাণ করবেন। এটি ছিল পরিচালকের ড্রিম প্রজেক্ট এবং চরকি থেকে তৈরি হবে। ছবিটির অভিনেত্রীর অপশনের ঘরে যে তাঁর নাম আছে, তা জানতেন না তমা। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ একদিন রায়হান রাফি আমাকে ফোন করে বললেন, তুমি খাঁচার ভেতর পাখি ছবিটির জন্য স্ক্রিন টেস্ট দিতে পারবা? শুনে আমি অবাক। তখন ডার্ক সাইটের কাজ শেষ। স্ক্রিন টেস্ট দিতে গিয়ে জানলাম, এই চরিত্রের জন্য বেশ কয়েকজন ভালো অভিনেত্রী স্ক্রিন টেস্ট দিয়েছেন। একধরনের প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়েই আমাকে আসতে হয়েছে এই চরিত্রে। এটি আমার জন্য পুরোই সারপ্রাইজ ছিল।’

পাখি চরিত্রের কাজের জন্য পুরো স্বীকৃতিই পরিচালকে দিলেন তমা। তিনি বলেন, ‘বাস্তবের তমা আর খাঁচার ভেতর অচিন পাখির তমা, আকাশ-পাতাল ব্যবধান। ওই লুকটা ক্রিয়েট করা, আমাকে দিয়ে ওই ভাবে অভিনয় করানোটাই ছিল পরিচালকের ম্যাজিক।’

তবে চরিত্রটি তুলে আনতে সহশিল্পী ফজলুর রহমান বাবুর কাছেও কৃতজ্ঞ তমা মির্জা। তিনি বলেন, ‘কিছু জায়গার জন্য বাবু ভাইয়ের কথা না বললেই না। কারণ, শুটিংয়ে তাঁর কাছে থেকে অনেক কিছুই শিখেছি। অনেক সময় রাতে খাবারের সময় আমার চরিত্রটির কিছুটা দিকনির্দেশনাও দিতেন বাবু ভাই।’

‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’ চলচ্চিত্রে ফজলুর রহমান বাবু ও তমা মির্জা

কাজটি থেকে পুরস্কার আসতে পারে, মনে হয়েছিল কী?—জানতে চাইলে তমা বলেন, ‘কাজটি করার পর মনে হয়েছিল, ওটিটির কনটেন্টের জন্য আলাদা পুরস্কারের আয়োজন থাকলে হয়তো পুরস্কার পেতে পারে। সেই ভাবনা সত্যি হলো। মুক্তির পর অবশ্য সেই ভাবনা আরও জোরদার হয়েছিল। কারণ, মুক্তির পর এত এত প্রশংসা কুড়িয়েছে ছবিটি।’

অল্প সময়ে চরকি এগিয়ে যাওয়া ও গোছালো কাজকে প্রশংসা করলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী এই অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘চরকির কাজের যাত্রা এক বছরও হয়নি, এত অল্প সময়েই এগিয়েছে। অথচ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের গোছাতেই এই সময় লাগে। আমার মনে হয়, ওটিটি কনটেন্টের এই প্রতিযোগিতার বাজারে চরকি এখন বেস্ট কাজ উপহার দিচ্ছে।’