প্রদর্শনী শেষে দর্শকের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন বলীর নির্মাতা ইকবাল হোসাইন চৌধুরী, অভিনেতা নাসির উদ্দিন খান ও প্রযোজক পিপলু আর খান। ছবি: পরিচালকের সৌজন্যে
প্রদর্শনী শেষে দর্শকের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন বলীর নির্মাতা ইকবাল হোসাইন চৌধুরী, অভিনেতা নাসির উদ্দিন খান ও প্রযোজক পিপলু আর খান। ছবি: পরিচালকের সৌজন্যে

‘আমরাও সাগরপারের মানুষ, আমরা আত্মীয়’

‘বলী: দ্য রেসলার’ সিনেমায় অভিনয়ের সূত্রে প্রথমবারের মতো বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়েছেন অভিনেতা নাসির উদ্দিন খান। উৎসবে সিনেমার প্রদর্শনী ও সংবাদ সম্মেলনের পর ফিরছিলেন হোটেলে। এর মধ্যে বুসানের রাস্তায় হঠাৎ ছুটতে ছুটতে তাঁর সামনে হাজির দুই কোরীয় তরুণ। চোখেমুখে আগ্রহ নিয়ে তাঁদের প্রশ্ন, ‘আপনি বাংলাদেশের “দ্য রেসলার” সিনেমার অভিনেতা না?’ প্রশ্ন শুনে নাসির উদ্দিন খান তো অবাক। তরুণেরা জানান, দীর্ঘ সময় তাঁর জন্যই অপেক্ষা করেছিলেন। বুসান সিনেমা সেন্টারে সিনেমার প্রদর্শনী থেকেই সিনেমাটি নিয়ে আগ্রহ হয় এই তরুণদের। পরে হাসিমুখে নাসির উদ্দিন ছবি তুলেছেন তাঁর ভক্তদের সঙ্গে। বুসান থেকে হোয়াটসঅ্যাপে নিজের অভিজ্ঞতার কথা এভাবেই বলছিলেন নাসির উদ্দিন।

উৎসবে ৭ অক্টোবর ছিল ইকবাল হোসাইন চৌধুরী পরিচালিত ‘বলী’ সিনেমার ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার। সেদিন প্রদর্শনী শেষে সিনেমার প্রধান অভিনেতাকে ঘিরে ধরেছিলেন একঝাঁক ভিনদেশি দর্শক। তবে নাসির উদ্দিন ভুলতে পারছেন না সিনেমা শেষ হওয়ার পরের একটি ঘটনা।

‘বলী’র একটি দৃশ্য। পরিচালকের সৌজন্যে

সেই ঘটনা নিয়ে নাসির বলেন, ‘দর্শকেরা এতটা গভীর থেকে প্রশ্ন করবেন, ভাবিনি। আমার একটা কথা মনে হলো, কখন তাঁরা সাবটাইটেলে মনোযোগ দিলেন আর কখন তাঁরা সিনেমাটি মনোযোগ দিয়ে দেখলেন?’

‘বলী’র প্রিমিয়ার শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে হাজির ছিলেন পরিচালক ইকবাল হোসাইন চৌধুরী, প্রযোজক পিপলু আর খান ও অভিনেতা নাসির উদ্দিন খান। উপস্থিত ছিলেন সহপ্রযোজক সাইফুল আজিমও।

এ উৎসবে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন নাসির উদ্দিন। উত্তরের শুরুতেই তিনি বলেন, ‘অনারা সাগরফাড়র মানুষ। আঁরা সাগরফাড়র মানুষ। আঁরা আত্মীয়।’ এ কথার কিছুই কোরিয়ান দর্শকেরা স্বভাবতই বুঝতে পারার কথা নয়। পরে সিনেমার প্রযোজক পিপলু আর খান তাঁর কথা ইংরেজিতে অনুবাদ করে দিয়েছেন। যা বাংলা অর্থ, ‘আপনারা সাগরপারের মানুষ। আমরাও সাগরপারের মানুষ। আমরা আত্মীয়।’ সেটা শুনে সজোরে হাততালি দিয়েছেন বুসানের দর্শকেরা।

পরিচালক ইকবাল হোসাইন চৌধুরী

দক্ষিণ কোরিয়ার সাগরপারের শহর বুসানে এবার শুরু থেকেই আলোচনায় ছিল বাংলাদেশি সিনেমা। চলতি বছর ২৮তম বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশের তিন সিনেমা। এর মধ্যে নিউ কারেন্টস বিভাগে প্রতিযোগিতা করছে ‘বলী’ ও বিপ্লব সরকারের ‘আগন্তুক’। এ ছাড়া কিম জিসোক বিভাগে প্রতিযোগিতা করছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘অটোবায়োগ্রাফি’।

প্রথম সিনেমার নির্মাতা হিসেবে বুসানের এই আয়োজনে নানান অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে পরিচালক ইকবালকে। সিনেমায় তিনি কেন্দ্রে রেখেছেন বলীখেলা। ড্রামা জনরার এই গল্প একসময় হয়ে ওঠে থ্রিলার।

অটোগ্রাফ দিচ্ছেন নাসির উদ্দিন খান। ভিডিও থেকে নেওয়া

পরিচালক জানালেন সিনেমায় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার নিয়ে, ‘চট্টগ্রামের নতুন প্রজন্মের অনেকে চট্টগ্রামের ভাষায় কথা বলতে তেমন আগ্রহী নয়। এ কারণে আমাদের আঞ্চলিক ভাষার অনেক শব্দ হারিয়ে যাচ্ছে। “বলী: দ্য রেসলার” এই ভাষাকে সংরক্ষণ করবে দীর্ঘদিন। কারণ, এই ছবি এরই মাঝে বুসান সিনেমা সেন্টারের আর্কাইভে জায়গা করে নিয়েছে।’

উৎসবে ৭, ৮ ও ৯ অক্টোবর ছিল সিনেমাটির প্রদর্শনী। প্রতিটি প্রদর্শনী শেষেই দর্শকদের বহু ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে ‘বলী’ টিমকে। সেসব প্রশ্নে উঠে আসে বলীখেলা নিয়ে কোরীয় দর্শকদের আগ্রহের কথা। সেই অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে ইকবাল বলেন, ‘একজন অধ্যাপক দর্শক সারিতে ছিলেন। তিনি আমাদের জিজ্ঞেস করেছেন, চট্টগ্রামের এই বলীখেলা আমি কেন পছন্দ করি। বেশ চমৎকার প্রশ্ন ছিল। আমি বলেছি, এই খেলা মূলত প্যাঁচ বা কৌশলনির্ভর। আমাদের বলী ট্রেনাররা বলতেন, প্যাঁচ জানলে বনের হাতিকেও আছাড় দেওয়া সম্ভব।’

বাংলাদেশ নাইটে বলী’ টিমের সঙ্গে চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি

সিনেমার প্রযোজক পিপলু আর খান অংশ নিয়েছিলেন প্রদর্শনীতে। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরেছেন। সিনেমাটি নিয়ে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে তিনি বলেন, ‘ভিন্ন ভাষার এই সিনেমাটি নিয়ে কোরীয় ও এশিয়ান দর্শকেরা সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করেছেন গল্প ও নাসির ভাইয়ের অভিনয় নিয়ে। ‘বলী’কে নিয়ে উৎসব কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে সবার আগ্রহে আমরা অভিভূত।’ বুসান উৎসবের পর্দা নামবে ১৩ অক্টোবর।