১২ হাত নয়, অন্য রকম শাড়িতে নজর কাড়লেন রুনা

অভিনয় নিয়ে বরাবরই আলোচনায় ছিলেন মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটকের অভিনয়শিল্পী রুনা খান। গত বছরে হঠাৎ ৪০ কেজি ওজন কমিয়ে ফটোশুটে ধরা দিলে চমকে যান সহকর্মী থেকে শুরু করে সবাই। ওজন কমানোর এই যাত্রায় যাননি জিমে। নিজের বানানো খাবারের রুটিন বদলে দিয়েছিল তাঁকে। পাশাপাশি টক্সিক মানুষের সঙ্গ ত্যাগ করে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছেন বলে জানান তিনি। ওজন কমানোর পর অনেক ফটোশুটে অংশ নিয়েছেন তিনি। যখনই সেসব ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়, তখন সবার নজর কাড়ে। আবুল কালাম আজাদের তোলা স্থিরচিত্রে একনজরে দেখে নেওয়া যাক নজরকাড়া রুনাকে—
ফেসবুকে একাধিক স্থিরচিত্র পোস্ট করেছেন রুনা খান। কথা হলে জানান, ঢাকার উত্তরায় একটি ফটোশুটে অংশ নিয়েছেন তিনি। সিল্ক ও মসলিনের ফিউশন শাড়ি পরিহিত রুনা খানের এই স্থিরচিত্রগুলো নজর কেড়েছে। মন্তব্যের ঘরেও তা টের পাওয়া গেছে।
রুনা বলেন, ‘এটা রেডিমেড শাড়ি। আগে আমরা যেমন ১২ হাত শাড়ি পরতাম, ব্লাউজ থাকত আলাদা। এসব শাড়ি তেমন নয়। একসঙ্গে সবকিছু থাকে। ফিউশন শাড়ি।’
রুনা খানের ওজন কমানোর গল্প শুনতে চাইলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছোটবেলায় বইয়ে পড়েছি না, বানরের তৈলাক্ত বাঁশে ওঠার গল্প! আমার ওজন কমানোর গল্পটা সে রকমই। তিন পা আগাইতাম, চার পা পিছাইতাম। ২০০৯ সালে বিয়ে হয়। পরের বছরই সন্তান রাজেশ্বরীর জন্ম। একসময় ওজন ৯৫ কেজিতে গিয়ে ঠেকে। সন্তান জন্মের এক বছর পর, মানে ২০১১ সাল থেকে ওজন কমানোর মিশন শুরু করি। কিন্তু কোনোভাবেই পারছিলেন না, বরং একপর্যায়ে ওজন আরও বেড়ে হয় ১০৫ কেজি। এমনও হয়েছে অস্ত্রোপচার ছাড়া সব চেষ্টাই করেছি।’
রুনা খান বলেন, ‘ধানমন্ডির প্রতিটি জিমে অন্তত ১০ বারও ভর্তি হয়েছি। ভারতীয় কালচারাল সেন্টারে ভর্তি হয়েছি পাঁচ থেকে সাতবার। উইমেন্স কমপ্লেক্স সুইমিংয়ে কয়েকবার ভর্তি হয়েছি। অ্যারোবিকসে ভর্তি হয়েছি। বাসায় ট্রেডমিল, সাইকেলসহ ওজন কমানোর যন্ত্রপাতি কিনেছি। ১০ বছরে ওজন কমানোর অনেক চেষ্টা করেছি। ডায়েটের খাবার দিয়ে আমার একটা ফ্রিজ পুরো থাকত—ডার্ক চকলেট, মাশরুম, ক্যাপসিকামসহ আরও কত-কী! কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না।’
তাহলে কীভাবে কী হলো, এমন প্রশ্নে রুনা খান বলেন, ‘২০১৯ সালে এসে আবিষ্কার করলাম, আমি যাঁদের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু মনে করি; দিনের পর দিন, বছরের পর বছর আমি তাঁদের দ্বারা মানসিকভাবে নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছি। ডিপ্রেশন পেয়ে বসত, এ জন্য আমি আমার মূল কাজে ফোকাস রাখতে পারতাম না। তাঁরা এটা ভালোভাবে জানত যে কীভাবে আমার ফোকাস নষ্ট করা যায়। তত দিনে দেখলাম, আমার ওজন হয়ে গেছে ১০৫ কেজি। এমন হচ্ছিল, কোনো মাসে পাঁচ কেজি ওজন কমালাম, পরের মাসে ছয় কেজি ওজন বাড়িয়ে ফেললাম। গত বছরগুলোয় কখনো ওজন কমে ১০০ কেজি, আবার কখনো বেড়ে ১১০ কেজি হয়েছে। ফলাফল সে–ই, যা তা-ই। একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমাকে টক্সিক মানুষের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। যাঁদের আমি তথাকথিত বন্ধু ভাবছি, তাঁদের কাছ থেকে বের হতে হবে।’
ওজন কমাতে কাউকে অনুপ্রেরণা হিসেবে মনে করেননি রুনা খান। নিজের জন্যই নিজে কাজটি করেছেন বলে জানালেন। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গ তাড়াতে লেগেছে ১০ বছর আর ওজন কমাতে লেগেছে মাত্র ১ বছর।’ দুই দশকের কয়েক বন্ধুর কারণে জীবনের এত বড় ট্রমায় যেমন রুনা খান পড়েছেন, তেমনি এই এক বছরের জার্নিতে নতুন কিছু বন্ধুকে পাশে পেয়েছেন, যাঁরা তাঁর জীবনে আশীর্বাদও। রুনা খানের ভাষায়, ‘দে ব্রিং হ্যাপিনেস ইন মাই লাইফ।’
এক বছরে ৪০ কেজি ওজন কমাতে যা যা খেতেন, তার একটা তালিকা দিলেন রুনা খান। প্রতিদিনের সে তালিকায় সকালে থাকত দুটি ডিম। এরপর যেকোনো ফল খেতেন। তারপর ব্ল্যাক কফি খেয়ে এক ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি, যা এখনো অব্যাহত রেখেছেন। নিয়ম করে ৪০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করেন। ওজন কমাতে রুনা খান প্রতিদিন দুপুরে এক কাপ ভাত, সঙ্গে এক বাটি সবজি, বড় এক টুকরা মাংস অথবা মাছ।