কে বা কারা হচ্ছেন এবারের উপস্থাপক? প্রতিবারই মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে এ বিষয়ই। এবার ছিল মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কারের ২৫ বছর, মানে রজতজয়ন্তী। সংগত কারণেই প্রথম ভাবনার বিষয় হয়ে ওঠে কে হবেন রজতজয়ন্তীর কান্ডারি। যেহেতু রজতজয়ন্তী উদ্যাপন, তাই এমন কেউ হওয়া উচিত, যিনি এই ভার বহন করার ক্ষমতা রাখেন। সবকিছু বিবেচনা করে আমাদের মাথায় একটি নাম আসে—হানিফ সংকেত।
কিন্তু তিনি কি রাজি হবেন? কারণ, সর্বশেষ ২০০৫ সালে তিনি মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার অনুষ্ঠান পরিকল্পনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছিলেন এবং এককভাবে তিনিই সর্বোচ্চবার উপস্থাপনা করেছিলেন।
আমরা যখন হানিফ সংকেতের কাছে প্রস্তাব নিয়ে যাই, তখন তিনি তাঁর ঈদ ইত্যাদি ও ঈদের নাটক নির্মাণ নিয়ে মহাব্যস্ত। তিনি প্রস্তাব শুনেই ‘না’ বলে দিলেন। আমরাও নাছোড়বান্দা। বললাম, এখনই না বলেন না। একটু সময় নিন। বোঝার চেষ্টা করেন, কেন আপনাকে চাই। প্রথমত এটি রজতজয়ন্তী। আর নতুন ভেন্যু। আপনাকে দিয়েই নতুন ভেন্যুতে আমরা রজতজয়ন্তীর এই আয়োজন উদ্যাপন করতে চাই। আপনি সম্মত হলে আমরা আপনাকে পাব দুই দশক পর। হানিফ সংকেত হ্যাঁ বা না কিছুই বললেন না। এরপর তাঁর সঙ্গে আমাদের কথা চলতে থাকে। তিনি না বলেন, আমরা নাছোড়বান্দা।
তবু আমরা আশায় রইলাম। অবশেষে তাঁর মন গলল। যেদিন তিনি হ্যাঁ বলে দিলেন, সেদিন থেকেই শুরু হয়ে গেল এই আয়োজন নিয়ে পরিকল্পনার। এক মাস তাঁর সব কাজে ছায়ার মতো পাশে রইলাম আমি। অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত প্রতিটি গানের রেকর্ডিংয়ে এক স্টুডিও থেকে আরেক স্টুডিও ছুটে গেছেন। নিজে উপস্থিত থেকে ভয়েস নিয়েছেন। দেখা গেছে, ভয়েস দেওয়ার পর তাঁর মনে হয়েছে, গানের সঙ্গে কণ্ঠটি যাচ্ছে না। তিনি অন্য শিল্পীকে দিয়ে আবার গাইয়েছেন। এক গানের মিক্সিং একাধিকবার করিয়েছেন। অনুষ্ঠানের প্রারম্ভিক গান ও একটি প্যারোডি গানের কথাও লিখেছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে একটিই মৌলিক গান ছিল, যে গানটি লিখেছেন মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান। সেই গানটি নিয়ে তাঁর নানান পরিকল্পনা। অবশেষে বললেন, ‘সৈয়দ আব্দুল হাদীকে চাই।’ তাঁকে সঙ্গে নিয়ে চলে গেলাম হাদী ভাইয়ের বাসায়। হাদী ভাই বললেন, ‘আমি তো দুবছর হলো গান ছেড়ে দিয়েছি।’ কিন্তু হানিফ ভাই নাছোড়বান্দা। অবশেষে হাদী ভাই রাজি হলেন।
অনুষ্ঠানের আগের দিন মহড়ায় নাট্যাংশগুলোর নির্দেশনা দিলেন। সব নৃত্য পরিবেশনা দেখে নিতে, বুঝে নিতে গিয়ে গলাই ভেঙে গেল তাঁর। কিন্তু শো মাস্ট গো অন। তাই সেই ভাঙা কণ্ঠ নিয়েই তিনি মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার ২০২৩ অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়ালেন। তাঁর রচনা, পরিকল্পনা ও পরিচালনায় দর্শক উপভোগ করলেন একটি সফল অনুষ্ঠান।
আর মেরিল–প্রথম আলোর রজতজয়ন্তীর এই অনুষ্ঠানের শুরুতেই হানিফ সংকেতকে দেওয়া হলো প্রতীকী সম্মাননা। এ রকম একটি বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা। আপনাকে ধন্যবাদ হানিফ সংকেত।