এক ঘরে ৯ জন ঘুমাতেন, তিনিই পরে ৫০ রুমের বাড়ি কিনেছিলেন

সোফিয়া লরেন ১৯৩৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জন্মেছিলেন ইতালির রোমে। বড় হয়েছিলেন সে দেশের নাপোলিতে, খুবই দরিদ্র একটি পরিবারে। সেই মেয়েটিই একসময় হয়ে উঠল আন্তর্জাতিক তারকা। তাঁর অভিনয় প্রতিভা এবং সৌন্দর্য দিয়ে বিশ্ব মাতিয়েছেন তিনি। আবার জেনে নিই শিল্পীর জানা–অজানা কথা।
অভিনেত্রী সোফিয়া লরেনের শৈশব ছিল কষ্টে ভরা। তিনি এক সাক্ষাৎকার বলেছিলেন, ‘শৈশবে ক্ষুধা ছিল আমার নিত্যসঙ্গী। মা আমাদের জন্য খাবার চেয়ে আনতেন। দেখতাম, কখনো কয়েকটি আলু নিয়ে এসেছেন।’
ছবি: আইএমডিবি থেকে সংগৃহীত
তখন তাঁরা ইতালির প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকতেন। জায়গাটার নাম পোজুলি। ছোট একটি ফ্ল্যাটে মা-বাবা, ভাই-বোন ও দাদা-দাদির সঙ্গে থাকতেন। এক ঘরের মধ্যে ৯ জনের সঙ্গে ঘুমাতেন আজকের সোফিয়া লরেন।
সোফিয়া শৈশবে অনেক শীর্ণকায় ছিলেন। শান্তশিষ্ট লরেনের হালকা শরীরের জন্য ডাকনাম হয়ে গিয়েছিল ‘স্টেচেটো’। কিন্তু অর্থ আর খাবারের কষ্ট তাঁকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে উৎসাহিত করত।
শৈশবের সেই দারিদ্র্য থেকে জীবন বদলাতে মাত্র ১৪ বছর বয়সে ‘কুইন অব দ্য সি বিউটি’ সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। প্রতিযোগিতায় তিনি দ্বিতীয় হয়ে ৩৫ ডলার পুরস্কার পেয়েছিলেন। সঙ্গে গ্রাম থেকে রোমে আসার টিকিট জিতেছিলেন।
এরপর মডেলিংয়ের ইচ্ছা আরও প্রকট হয় সোফিয়ার। পরের বছর ১৯৫০ সালে তারকার হওয়ার জন্য ইতালির রাজধানী রোমে চলে আসেন। এখানে এসে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে হয়। পরে ‘নাইটক্লাব বিউটি কনটেস্ট’-এ অংশ নেন। এ প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত তিনজনের মধ্যে জায়গা করে নেন। হয়েছিলেন রানারআপ। তখন টুকটাক মডেলিং করে আয় করতেন।
প্রতিযোগিতায় সুযোগ ও পুরস্কার তাঁর সাহস আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। এবার তিনি সিদ্ধান্ত নেন, চলচ্চিত্রে অভিনয় করবেন। প্রথম তিনি ‘টটোটারজান’ সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পান। সেই প্রথম সিনেমায় কাজ করতে গিয়ে দেখেন, এক্সট্রা অভিনেত্রীর চরিত্র। তাঁর কোনো সংলাপ ছিল না। পরে দেখতে পান, সিনেমায় নামের টাইটেলের তালিকায় তাঁর নাম নেই
বড় শহরের জীবনযাপন, খরচ তাঁকে আরও কঠিন সংগ্রামের মুখে ফেলে দেয়। সোফিয়া লরেনের আসল নাম ছিল সোফিয়া সিকোলোন। এই অভিনেত্রী হাল ছাড়বেন না, এমন সংকল্প নিয়ে শুরু করেন সিনেমার হাউসগুলোতে দৌড়ঝাঁপ। কিন্তু ভালো চরিত্রের জন্য তাঁকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়
তিন বছর ঘুরে ১৮টি সিনেমায় অভিনয় করার সুযোগ পান। কিন্তু তখনো তাঁর পরিচিতি তেমন একটা হয়নি। দর্শক তাঁকে প্রথম চিনতে থাকেন ‘আইডা’ সিনেমার মাধ্যমে। সিনেমায় নামভূমিকায় অভিনয় করেন সোফিয়া লরেন। এর সাত বছর পরেই ভিত্তো ডি সিকার ‘টু ওমেন’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেত্রী হিসেবে অস্কার জিতেন। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি
ব্যক্তিগত জীবন, বিয়ে, ক্যারিয়ারের উত্থান-পতনের ঘটনাও ছিল সিনেমার মতোই। একসময় এক রুমে নয়জন ঘুমানো এই অভিনেত্রীর ভাগ্য বদলে যায়। স্বামীর সঙ্গে ১৬ একর জায়গায় ওপর বাড়ি কেনেন। ১৬ দশকের বাড়ির মতো দেখতে সেই বাড়িটিকে বলা হতো বিশ্বের সুন্দর বাড়িগুলোর একটি। ১৯৬০ সালে সেই বাড়ির জন্য ২ মিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়েছিল। সেই বাড়িতে ৫০টি রুম ছিল
এর মধ্যে দিয়েই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ৯৮টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। একবার পেয়েছেন অস্কার, একবার পেয়েছেন বাফটায় সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার। গোল্ডেন গ্লোব, গ্র্যামিসহ ৭৩টি সম্মাননা পেয়েছেন। জীবন নিয়ে ২০২০ সালে গার্ডিয়ানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ গুণী অভিনেত্রী বলেছিলেন, ‘আমি নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতাম। আমি সব সময় স্বপ্ন দেখতাম। এই স্বপ্ন আর পরিশ্রমই আমাকে সবকিছু দিয়েছে।’