আজ বিশ্ব বাবা দিবস। বিশ্বের সব বাবার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাতে জুন মাসের তৃতীয় রোববার দিবসটি পালিত হয়। প্রতিবছর সব মিলিয়ে প্রায় ১১১টি দেশে দিনটি নানা আয়োজনের মাধ্যমে পালিত হয়।
বাবা দিবসে দেখে ফেলুন বাবা-সন্তানের সম্পর্ক নিয়ে নির্মিত বেশ কয়েকটি সিনেমা। যেমন ‘দ্য লায়ন কিং, ‘টু কিল আ মকিংবার্ড, ‘পারস্যুট অব হ্যাপিনেস’, ‘মিসেস ডাউটফায়ার’, ‘রেইনবো জেলি’, ‘ট্রেন টু বুসান’, ‘অনওয়ার্ড’, ‘মোয়ানা’, ‘মিনারি’। তবে কিছু সিনেমার কথা আলাদা করে না বললেই নয়। জেনে নিন কয়েকটি সিনেমা সম্পর্কে, যেগুলোয় বাবার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কের মাধুর্য চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
`দ্য বাইসাইকেল থিফ’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত রোম শহরে তখন ঘোর অভাব, কেউ কাজ পাচ্ছে না, কারও ঘরে খাবার নেই। দারিদ্র্যের কাছে ভীষণ অসহায় অ্যান্টনিও রিকি ও তাঁর পরিবার। ভাগ্যগুণে অবশ্য একটি চাকরি জুটে যায়। শর্ত হলো, অ্যান্টনিওর থাকতে হবে একটি নিজস্ব সাইকেল। উপায় না পেয়ে বিয়েতে পাওয়া দামি চাদরগুলো বিক্রি করে সাইকেল কিনলেন তিনি।
সেই সাইকেল নিয়ে অ্যান্টনিও আর তার ছোট্ট ছেলে ব্রুনোর সে কী আনন্দ! কিন্তু বিধি বাম। কাজে যাওয়ার প্রথম দিনেই চুরি গেল এত কষ্ট করে কেনা সাইকেলটি! এদিকে সাইকেল না থাকলে চাকরিও থাকবে না, জুটবে না খাবার। তাই বাপ-ছেলে মিলে ছুটলেন হারিয়ে যাওয়া সাইকেলের খোঁজে। রোমের অলিগলিতে সাইকেলের সন্ধানে তাদের এ অভিযান নিয়েই এগিয়ে চলে ১৯৪৮ সালে মুক্তি পাওয়া কালজয়ী এ সিনেমার গল্প।
‘ফ্লাই অ্যাওয়ে হোম’
বাবার সঙ্গে নতুন বাড়িতে কিছুতেই মন বসছিল না অ্যামির। একদিন সে বাড়ির এক কোণে রাজহাঁসের কিছু ডিম খুঁজে পায়। লুকিয়ে লুকিয়ে যত্ন করে। ডিম ফুটে বেরিয়ে আসে রাজহাঁসের ১৬টি ছানা। বাবাও কিন্তু জানতে পেরে দারুণ উৎসাহ দেয় তাকে। কিন্তু চোখ ফোটার পর ছোট্ট রাজহাঁসগুলো প্রথম দেখেছে অ্যামিকে, তাকেই মনে করছে মা! সে যা করছে, তা-ই করছে ওরা। তাহলে ওদের উড়তে শেখাবে কে? কেমন করেই-বা তারা শীতকালে উড়ে যাবে গরমের দেশে? অ্যামি আর তার বাবা মিলে কীভাবে এত সব সমস্যার সমাধান করল? সত্যি ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত ‘ফ্লাই অ্যাওয়ে হোম’ মুক্তি পায় ১৯৯৬ সালে।
‘দীপু নাম্বার টু’
এক্কেবারে আমাদের গল্প থেকে বানানো বাংলাদেশের সিনেমা এটি। কিশোর দীপু দারুণ সাহসী। নতুন স্কুলে গিয়ে অসাধারণ আর অদ্ভুত কিছু বন্ধু পায় ও। আর ওদের নিয়েই দীপু জড়ায় দুর্ধর্ষ এক অ্যাডভেঞ্চারে। গল্পের মূল কাহিনি এটাই। তবে খেয়াল করলে দেখবে, দীপুর বাবাই ওর জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি।
তাদের সম্পর্কটা বন্ধুর মতো। বাবা দীপুকে কেমন করে সাহসী, দৃঢ়, স্বাধীন আর উদার মনের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলছেন, তা-ও খেয়াল করার মতো। তাই বন্ধুদের সঙ্গে নানান কাণ্ডকীর্তি, অ্যাডভেঞ্চারের পাশাপাশি দীপু আর ওর বাবার সম্পর্কটা সত্যিই দারুণ এক ব্যাপার। ‘দীপু নাম্বার টু’ মুক্তি পায় ১৯৯৬ সালে।
‘ফাইন্ডিং নিমো’
কমলা-সাদা রঙের ছোট্ট মাছ নিমো। নিমোকে সারাক্ষণ আগলে রাখে বাবা মারলিন। কিছুতেই তাকে চোখের আড়াল হতে দেয় না। কিন্তু বাবার এত বিধিনিষেধে নিমোর বিরক্তির শেষ নেই। সে পুরো পৃথিবী ঘুরে দেখতে চায়। এই ঘুরে দেখার ইচ্ছা থেকেই একদিন ঘটে যায় বিরাট দুর্ঘটনা। ছোট্ট নিমো ধরা পড়ে এক ডুবুরির হাতে! যে গভীর সমুদ্রকে সারা জীবন এত ভয় পেয়েছে মারলিন, ছেলেকে বাঁচাতে সেখানেই শুরু হয় তার এক দুর্দান্ত অভিযান। শেষ পর্যন্ত মারলিন ছোট্ট নিমোকে উদ্ধার করতে পেরেছিল কি না, তা জানতে দেখে ফেলুন ‘ফাইন্ডিং নিমো’ (২০০৩) নামের অসাধারণ অ্যানিমেশন সিনেমাটি।
‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’
কৌতুক আর আবেগের মিশ্রণে তৈরি ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’ সিনেমাটিতে গুইডোর প্রেমকাহিনি এবং মৃত্যুপুরী থেকে তার ছেলেকে রক্ষার জন্য অবলম্বন করা বিভিন্ন কলাকৌশল দেখানো হয়েছে। ইতালির রাজনৈতিক পরিবেশ ঘোলা হওয়া শুরু করার পর জার্মান সৈন্যরা জুইশদের ধরে নিয়ে ‘কনসেইন্ট্রেশন ক্যাম্প’-এ পাঠাতে লাগল। ছেলের জন্মদিনের দিন গুইডোসহ তার ছেলে এবং চাচাকে জার্মান সৈন্যরা ধরে নিয়ে যায়। যাওয়ার পথে তার ছেলে যখন প্রশ্ন করে ‘বাবা আমরা কোথায় যাচ্ছি?’ গুইডো তার ছেলের কাছে কঠিন বাস্তবটাকে গোপন করে বিভিন্ন হাস্যরসাত্মক ঘটনার মাধ্যমে পরিস্থিতি হালকা করার চেষ্টা করতে থাকে। তারপর শুরু হয় তাদের ক্যাম্পে টিকে থাকার লড়াই।
‘দ্য সাউন্ড অব মিউজিক’
খুব কঠোর একজন বাবা ক্যাপ্টেন ভন ট্র্যাপ। স্ত্রী ছাড়া সাত ছেলেমেয়েকে বড় করার দায়িত্ব তার কাঁধে, তাই কড়া শাসনে রাখেন সন্তানদের। স্ত্রী বিয়োগের পরে আনন্দ ও গান বন্ধ হয়ে যায় তার ঘরে। সন্তানদের দেখাশোনার জন্য মারিয়া নামে একজন ন্যানি মারিয়াকে রাখেন তিনি। মারিয়া সন্তানদের গানের প্রতি অনুরক্ত করে। নানা কাহিনির পর সংগীতবিদ্বেষী ভন ট্র্যাপই একসময় সন্তানদের গানের ভক্ত হয়ে ওঠেন। নাৎসি বাহিনীকে সহায়তা করতে নৌবাহিনীর অফিসার ভন ট্র্যাপের যুদ্ধে যাওয়ার ডাক এলেও যুদ্ধে না যাওয়ার জন্য তিনি সন্তানদের সঙ্গে গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন ও জিতে যান। কিন্তু এতে নাৎসি বাহিনী তার পেছনে লাগে। তিনি দুর্গম আল্পস পর্বতের মধ্যে সন্তানদের নিয়ে হেঁটে সুইজারল্যান্ডের দিকে রওনা হন।
‘স্লিপলেস ইন সিয়াটল’
হলিউডে বাবা ও সন্তানের সম্পর্ককেন্দ্রিক সিনেমার মধ্যে টম হ্যাংকস অভিনীত ‘স্লিপলেস ইন সিয়াটল’-এর নাম শুরুর দিকেই বলা যায়। একা বাবা স্যাম (টম হ্যাংকস) এবং তার শিশুপুত্র জোনাহকে নিয়েই পুরো গল্প। নিউইয়র্কের এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে জোনাহ পড়ে গেছে মনে করে স্যামের যে অভিব্যক্তি এবং শেষ পর্যন্ত তাকে জীবিত দেখতে পেয়ে তার আবেগ সেটা একমাত্র কোনো বাবার পক্ষেই অনুভব করা সম্ভব।
‘টু কিল আ মকিং বার্ড’
সিনেমায় দেখা যায় এক গুরুগম্ভীর বাবাকে। আপাতদৃষ্টে সফল আইন ব্যবসায়ী ফিনশ (গ্রেগরি পেক) তার দুই শিশুসন্তানের প্রতি তেমন কোনো আবেগ উচ্ছ্বাস দেখায় না। মাতৃহীন সন্তান দুটি বেড়ে ওঠে প্রায় অনাদরে। কিন্তু প্রয়োজনে ফিনশ তার সন্তানদের রক্ষা করতে কতটা বদ্ধপরিকর, তা বোঝা যায় ছবির ক্লাইমেক্সে। এ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য গ্রেগরি পেক সেরা অভিনেতার অস্কার জিতেছিলেন। গ্রেগরি পেককে ‘ইয়ার্লিং’ সিনেমায় স্নেহশীল এক বাবার ভূমিকায় দেখা যায়। আবার হরর মুভি ‘ওমেন’-এ গ্রেগরি পেক অশুভ শক্তির অধিকারী তার কথিত সন্তানকে হত্যা করে মানবজাতিকে বাঁচাতে বদ্ধপরিকর।