নেটফ্লিক্সে মুক্তির পরই ঝড় তোলে জার্মান সিনেমা ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’। গত ২৮ অক্টোবর মুক্তির পরই ওটিটি প্ল্যাটফর্মটির অ-ইংরেজিভাষী সিনেমার তালিকার শীর্ষে জায়গা করে নেয় এই ছবি। এরিখ মারিয়া রেমার্কের একই নামের উপন্যাস থেকে তৈরি হয়েছে ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’। ১৯৮৬ সালে সেবা প্রকাশনী থেকে জাহিদ হাসানের অনুবাদে বইটি বাংলাদেশের অনেক পাঠকেরই মন ছুঁয়েছিল। সেই উপন্যাস থেকে নির্মিত সিনেমাটি ব্রিটিশ একাডেমি ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডসে (বাফটা) রেকর্ড গড়েছে। জিতেছে সর্বোচ্চ সাত পুরস্কার।
বাফটার ৭৫ বছরের ইতিহাসে অ–ইংরেজিভাষী সিনেমার এমন সাফল্য বিরল। তবে এটা যে হতে পারে, তাঁর পূর্বাভাস পাওয়া গিয়েছিল মনোনয়ন ঘোষণার দিনই, ১৪টি মনোনয়ন পেয়েছিল ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’। গত রোববার রাতে লন্ডনের রয়্যাল ফেস্টিভ্যাল হলে বসেছিল বাফটার আসর। যেখানে সেরা সিনেমা, সেরা পরিচালক, সেরা অ–ইংরেজিভাষী সিনেমাসহ সাত বিভাগে পুরস্কার পেয়ে রেকর্ড গড়ে যুদ্ধবিরোধী সিনেমাটি। অন্য কোনো অ–ইংরেজিভাষী সিনেমা এর আগে এত পুরস্কার পায়নি। পুরস্কারের প্রতিক্রিয়ায় পরিচালক এডওয়ার্ড বারগার বলেন, পর্দায় এই গল্প বলার ‘দায়িত্ব’ নিয়েই বড় হয়েছেন তিনি। তাঁর ছবিটিকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দেওয়ার জন্য দর্শকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। এ ছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধে যাঁরা লড়ছেন, তাঁদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান তিনি।
তবে ছবি করার পেছনে মূল প্রেরণা ছিলেন পরিচালকের কন্যা মাটিলডা। স্কুলে রেমার্কের উপন্যাস পড়ে যে বারবার বাবাকে ছবিটি নির্মাণের তাগিদ দিয়েছিল।
গত বছরের আলোচিত আরেকটি সিনেমা ‘দ্য বানশিজ অব ইনিশেরিন’ জিতেছে আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চার পুরস্কার। এর মধ্যে আছে সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী (ক্যারি কনডন) ও অভিনেতার (ব্যারি কিওগান) পুরস্কার। এলভিস প্রিসলির বায়োপিক ‘এলভিস’–এ অভিনয় করে সেরা অভিনেতা হয়েছেন অস্টিন বাটলার। অভিনেতা জানান, ছবিটিতে অভিনয়ের পর থেকে এলভিসের মতো ধীরে কথা বলার অভ্যাস এখনো ছাড়তে পারেননি তিনি।
অন্যদিকে অনুমিতভাবেই ‘টার’–এর জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছেন কেট ব্ল্যাঞ্চেট। সেরা নবাগত ব্রিটিশ লেখক, পরিচালক অথবা পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন ‘আফটারসান’ নির্মাতা শার্লট ওয়েলস। এক দিন আগে হওয়া ডিরেক্টরস গিল্ড অ্যাওয়ার্ডসেও সেরা নবাগত পরিচালক হয়েছিলেন তিনি। বাফটার সবচেয়ে বড় চমক সম্ভবত বিভিন্ন পুরস্কারে বাজিমাত করে ‘এভরিথিং এভরিহয়ার অ্যাট ওয়ান্স’–এর মাত্র একটি পুরস্কার (সেরা সম্পাদনা) নিয়ে ফেরা।
যেকোনো বড় পুরস্কার অনুষ্ঠানে এখন নিয়মিতই ভুল হচ্ছে। বাফটায়ও ব্যতিক্রম ছিল না। সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রীর নাম বলতে গিয়ে ‘কোডা’ অভিনেতা ট্রয় খটসর ভুল করে ক্যারি কনডনের বদলে ক্যারি মুলিগানের নাম বলে ফেলেন। তবে বধির এই অভিনেতা নিজের নাকি সাহায্যকারীর ভুলে এমনটা করেছিলেন, সেটা পরিষ্কার নয়।
প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু হয় এবারের বাফটা। পরে ‘দ্য কুইন’–এ রানির চরিত্রে অভিনয় করা হেলেন মিরেনও দ্বিতীয় এলিজাবেথকে শ্রদ্ধা জানান। বাফটায় স্ত্রী কেট মিডেলটনকে নিয়ে হাজির হন প্রিন্স উইলিয়ামস, বাফটার তিনি সাম্মানিক সভাপতি। বাফটা সঞ্চালনা করেন রিচার্ড ই গ্রান্ট ও অ্যালিসন হ্যামন্ড।
একনজরে বাফটা পুরস্কার
সেরা সিনেমা
‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’
সেরা পরিচালক
এডওয়ার্ড বারগার, ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’
সেরা মৌলিক চিত্রনাট্য
মার্টিন ম্যাকডোনা, ‘দ্য বানশিজ অব ইনিশেরিন’
সেরা অভিনেতা
অস্টিন বাটলার, ‘এলভিস’
সেরা অভিনেত্রী
কেট ব্ল্যাঞ্চেট, ‘টার’
সেরা পার্শ্ব অভিনেতা
ব্যারি কিয়োন, ‘দ্য বানশিজ অব ইনিশেরিন’
সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী
ক্যারি কনডন, ‘দ্য বানশিজ অব ইনিশেরিন’
সেরা অ-ইংরেজিভাষী সিনেমা
‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’
সেরা তথ্যচিত্র
‘নাভালনি’
সেরা অ্যানিমেটেড সিনেমা
‘গিয়েরমো ডেল টরোস পিনোকিও’