বিয়েটা হওয়ার কথা ছিল ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে। এরপর কত ভাঙা, গড়া আর উত্থান-পতন পেরিয়ে অবশেষে জেনিফার লোপেজ ও বেন আফ্লেকের বিয়েটা অবশেষে হলো। তবে মাঝে পেরিয়ে গেছে ১৯টি বছর! সব জল্পনা সত্যি করে অবশেষে বিয়ে করেছেন হলিউডের এই তারকা জুটি। গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে বিয়ে করেন তাঁরা। গত রোববার নিজের নিউজলেটারে এক চিঠিতে বিয়ের খবর নিশ্চিত করেন জে লো নিজেই। এর মাধ্যমে বলা যায়, ২১ বছর পর চক্র পূর্ণ হলো। লোপেজ লিখেছেন, ‘আমরা এটা করে ফেলেছি। আরও চার যুগলের সঙ্গে একই যাত্রা পথে শামিল হতে গত রাতে (শনিবার) আমরা পৃথিবীর বিয়ের রাজধানী ভেগাসে যাই। মধ্যরাত নাগাদ একটি উপাসনালয়ে বিয়ে সারি।’
লেখার সঙ্গে সাদাকালো আলোকচিত্র শেয়ার করেন গায়িকা-অভিনেত্রী। যেখানে লোপেজের হাতে একটি ফুলের তোড়া দেখা যায়, বেন তখন তাঁর গালে চুমু খাচ্ছিলেন। লোপেজ আরও লিখেছেন, ‘দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষায় সম্ভবত আপনি জীবনের সেরা মুহূর্ত খুঁজে পাবেন। ভালোবাসার টানেল ধরে লাস ভেগাসে ড্রাইভ করে আসা, সঙ্গে বাচ্চারা আর সে যার সঙ্গে আপনি বাকি জীবন কাটাবেন। ভালোবাসা দারুণ ব্যাপার, সম্ভবত সবচেয়ে ভালো কিছু—যার জন্য আপনি অপেক্ষা করেন।’ লোপেজ নিজের চিঠি শেষ করেন বেনের পদবি ধারণ করে—মিসেস জেনিফার লিন অ্যাফ্লেক।
২০০১ সালের ডিসেম্বরে রোমান্টিক কমেডি সিনেমা গিগিলির শুটিং সেটে তাদের পরিচয়। ছবিটি বক্স অফিসে ডাহা ফ্লপ করলেও বেন ও জে লোর প্রেম জমে ওঠে। তখন হলিউডে অন্যতম চর্চিত বিষয় ছিল তাদের প্রেম। সিনেমা ট্যাবলয়েডগুলো এ তারকা জুটির নাম দেয় ‘বেনিফার’। ২০০২ সালের নভেম্বরে বাগদানের পর ছিল কেবল বিয়ের অপেক্ষা। ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে বিয়ের দিন–তারিখ মোটামুটি পাকা হয়। কিন্তু সবাইকে অবাক করে বিয়ে স্থগিত করেন দুই তারকা। তখন কে জানত এর চেয়েও বড় দুঃসংবাদ আসছে। ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে জানা যায়, বাগদান ভেঙে গেছে তাদের। এরপর নানা সম্পর্কের নানা উত্থান-পতনের সাক্ষী হয়েছেন দুজনেই।
লোপেজের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর আরেক অভিনেত্রী জেনিফার গার্নারের সঙ্গে প্রেম শুরু করেন বেন। সেটাও ২০০৪ সালেই। তখন অনেকেই ভাবতে শুরু করেন এ সম্পর্ক আবার না জানি কবে ভেঙে যায়! এ ভাবনা তখন অমূলকও ছিল না। কারণ, ১৯৯৯ থেকে ২০০৪—এ পাঁচ বছরে লোপেজ ছাড়াও সালমা হায়েক, জেমি কিং ও গিনেথ প্যালট্রোর সঙ্গে প্রেম করেন বেন। তবে সবাইকে অবাক করে গার্নারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক টিকে যায়। ২০০৫ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। যা টিকেছিল পরের এক দশক। ২০১৫ সালে গার্নারের সঙ্গে ছাড়াছাড়ির ঘোষণার পর সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় ২০১৮ সালে। এরপর হতাশায় পানাসক্তিতে ডুবে যান অস্কারজয়ী অভিনেত্রী। সে সময় এক সাক্ষাৎকারে গার্নারের সঙ্গে বিচ্ছেদকে ‘জীবনের সবচেয়ে বড় অনুশোচনা’ বলে অবিহিত করেছিলেন। তবে বেনের জীবনে প্রেম ফিরে আসে দ্রুতই।
২০২০ সালে অভিনেত্রী আনা ডে আরমাসের সঙ্গে রোমান্সে জড়ান। তবে এ সম্পর্ক ভেঙে যায় বছর ঘুরতে না ঘুরতেই। গত বছরের এপ্রিলে গুজব রটে, পুরোনো প্রেমিকা জেনিফার লোপেজের সঙ্গে ফের প্রেমে মজেছেন বেন। গুঞ্জন সত্যি করে এরপর নিয়মিতই তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, চলচ্চিত্র অনুষ্ঠান থেকে রেস্টুরেন্টে একসঙ্গে দেখা যেতে থাকে। জুলাইয়ে প্রেমের খবর নিশ্চিত করেন লোপেজ নিজেই। চলতি বছরের এপ্রিলে প্রথম বাগদান ভাঙার ২০ বছর পর বেনের সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো বাগদানের ঘোষণা দেন লোপেজ।
গার্নারের পর এটা বেনের দ্বিতীয় বিয়ে হলেও লোপেজের চতুর্থ। আগে ১৯৯৭ সালে ওজানি নোয়া, ২০০১ সালে ক্রিস জাড ও ২০০৪ সালে মার্ক অ্যান্থনিকে বিয়ে করেন লোপেজ। এ ছাড়া ২০১৭ থেকে ২০২১ পর্যন্ত বাস্কেটবল খেলোয়াড় অ্যালেক্স রড্রিগেজের সঙ্গে প্রেম ছিল এই গায়িকা-অভিনেত্রীর। ২০১৯ সালে তাঁদের বাগদানও হয়। এ ছাড়া তৃতীয় স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ২০১১ সাল থেকে ব্যাকআপ ড্যান্সার কাসপার স্মার্টের সঙ্গে প্রেম করেন তিনি।