প্রখ্যাত ফরাসি অভিনেতা অ্যালাইন ডেলন মারা গেছেন। গত রোববার ফ্রান্সে নিজ বাসায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। ডেলন ফরাসি ও ইউরোপীয় চলচ্চিত্রজগতে কিংবদন্তি তারকা হিসেবে বিবেচিত। তিনি তাঁর সময়ের বিখ্যাত সব পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন।
তবে ডেলনের অভিনয়ে নাম লেখানোর কথাই ছিল না। ডেলনের জীবনটাও সিনেমার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। একের পর এক স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। পরে একটি মাংসের দোকানে কাজ নিয়েছিলেন।
ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে নৌবাহিনীতে চাকরি মিলেছিল ডেলনের। ১৯৫৬ সালে সেই চাকরি খোয়ান তিনি। বেকার ডেলন অভিনয়ের প্রতি আগ্রহী হন।
কানে হলিউড প্রযোজক ডেভিড ও. সেলৎসনিকের সঙ্গে একটি চুক্তিও সেরেছিলেন। তবে তিনি ফরাসি সিনেমা করতে চেয়েছিলেন। ১৯৫৭ সালে সেন্ড আ উইমেন হোয়েন দ্য ডেভিল ফেইলস সিনেমায় ছোট্ট এক চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ মেলে তাঁর।
অভিনয়ে নাম লেখানোর কয়েক বছরের মধ্যেই দর্শকদের মধ্যে সাড়া ফেলেছিলেন।
ষাটের দশকের আলোচিত দুই চলচ্চিত্র ‘পার্পল নুন’, ‘রোকো অ্যান্ড হিজ ব্রাদার্স’-এ অভিনয় করে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি পান। ‘পার্পল নুন’ সিনেমায় টম নামের এক মার্কিন তরুণের চরিত্রে দেখা গেছে। ‘রোকো অ্যান্ড হিজ ব্রাদার্স’ সিনেমায় এক ইতালীয় পরিবারের তরুণ রোকো চরিত্রে নিজের সেরাটা দিয়েছিলেন ডেলন।
১৯৬৭ সালে ক্ল্যাসিক সিনেমা ‘লে সামুরা’-তে অভিনয়ের সুবাদে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়েছেন ডেলন।
সত্তর ও আশির দশকেও একের পর এক হিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন। ক্যারিয়ারজুড়ে ‘উইমেন আর উইক’, ‘দ্য গার্ল অন আ মোটরসাইকেল’-এর মতো সিনেমায় দেখা গেছে তাঁকে। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজক ও লেখক হিসেবেও পরিচিতি ছিল তাঁর।
আবেদনময় লুক ও স্টাইলিশ তারকা হিসেবে সমসাময়িকদের চেয়ে নিজেকে আলাদা করেছিলেন ডেলন। সত্তর ও আশির দশকে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন তিনি।
১৯৯৭ সালে অভিনয়কে বিদায় করেছিলেন। ২০০৮ সালে আবার ফিরেছেন। তবে অভিনয়ে নিয়মিত ছিলেন না। ২০১৯ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এর পর থেকে তিনি নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।
ডেলনের মৃত্যুতে শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। এক বার্তায় ডেলনকে একটি ফরাসি কীর্তিস্তম্ভ বলে উল্লেখ করেন মাখোঁ। তিনি বলেন, ডেলন তারকার চেয়ে বেশি কিছু ছিলেন।
তবে বিতর্কিত রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নারীর প্রতি নেতিবাচক মনোভাবের জন্য ডেলন সমালোচিত ছিলেন। ২০১৯ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সম্মানসূচক পাম দ’র পুরস্কার পান ডেলন।
১৯৬৮ সালে যৌন, মাদক ও খুনের কেলেঙ্কারিতে ডেলনের নাম আসে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা হয়নি।