ওয়েড রবসন ও জেমস সেফচাক নামের ৭ ও ১০ বছর বয়সী দুই শিশুকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছিল পপসম্রাট মাইকেল জ্যাকসনের বিরুদ্ধে। এ বিষয় নিয়ে ড্যান রিড নির্মাণ করেছেন ‘লিভিং নেভারল্যান্ড’ নামের তথ্যচিত্র। যখন মাইকেল জ্যাকসন আর পৃথিবীতে নেই, তখন এসে ত্রিশের কোঠা ছাড়ানো সেই দুই শিশু মুখ খুলেছেন। আর শুধু তাঁদের বিবৃতির ওপর ভিত্তি করে এই তথ্যচিত্র তৈরি হয়।
ছবিটি ২০১৯ সালের ৩ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি দেওয়া হয়। পপসম্রাজ্ঞী ম্যাডোনার একসময়কার প্রেমিক পপসম্রাট মাইকেল জ্যাকসন। এ বেলা বলে রাখা ভালো, ১৯৯১ সালের এই পপসম্রাট আর সমাজ্ঞী দুজনে একসঙ্গে সাদা পোশাকে গিয়েছিলেন অস্কারে। ম্যাডোনা তখন বলেছিলেন, ‘সেটা ছিল আমাদের সম্ভাব্য সেরা ডেট।’ পরে এক সাক্ষাৎকারে ম্যাডোনা জানান, ওই সময় তাঁরা একজন আরেকজনকে চুমু খেয়েছিলেন।
সাবেক সেই প্রেমিকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে এত দিন চুপ ছিলেন তিনি। কিন্তু আর পারলেন না। ব্রিটিশ ‘ভোগ’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাঁকে বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি বলেন, ‘আপনি তা প্রমাণ করতে পারবেন?’ ৬০ বছর বয়সী এই সংগীত তারকা আরও জানান, তিনি ‘লিভিং নেভারল্যান্ড’ দেখেননি। তবে সময় পেলে দেখবেন। তিনি আরও বলেন, ‘হ্যাঁ, মানুষ সত্য উদ্ঘাটন করে। আবার সেই মানুষ মিথ্যা বলে। আমি জানতে চাই, এর উদ্দেশ্য কী? তারা কী চায়? তারা কি এর বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করতে চায়? এখানে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে? যেকোনো বিষয়ে বলার আগে আমি এই প্রশ্নগুলো বিবেচনায় রাখি।’
মাইকেল জ্যাকসনের মেয়ে প্যারিস জ্যাকসন, ভাই টিটো, মার্লোন, জ্যাকি, ভাইপো তাজ—সবাই এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই তারকা কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে ২০০৯ সালে মাত্র ৫০ বছর বয়সে মারা যান।
মাইকেল জ্যাকসনের কাছে যৌন নির্যাতনের শিকার এক কিশোরের অভিযোগের ভিত্তিতে ২০০৩ সালে পুলিশ তাঁর ক্যালিফোর্নিয়ার খামারবাড়ি নেভারল্যান্ডে তল্লাশি করে। সেই খামারবাড়ির নাম অনুসারে তথ্যচিত্রের নামকরণ করা হয়েছে। তবে জ্যাকসনের মৃত্যুর এত দিন পর মীমাংসিত একটি বিষয়কে আবারও সামনে টেনে আনার জন্য তথ্যচিত্রটি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
গত ২৫ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সানডান্স চলচ্চিত্র উৎসবে ‘লিভিং নেভারল্যান্ড’ তথ্যচিত্রের উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়েছে। এরপর তথ্যচিত্রটির সমালোচনা করেছে মাইকেল জ্যাকসনের পরিবার। এক বিবৃতিতে এই পরিবার থেকে বলা হয়, ‘সারা জীবন এ রকম নোংরা আক্রমণ মোকাবিলা করতে হয়েছে মাইকেল জ্যাকসনকে। এমনকি এখনো করতে হচ্ছে।’ সেই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘তথ্যচিত্রে ওয়েড রবসন ও জেমস সেফচাককে এত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে জ্যাকসনের ঘনিষ্ঠ অন্য সবাই সেখানে রীতিমতো উপেক্ষিত। জ্যাকসন কখনোই শিশুদের সঙ্গে বাজে আচরণ করতেন না; বরং সব সময় তিনি তাদের আদর করতেন।’
মাইকেল জ্যাকসনের পরিবার এই তথ্যচিত্রকে ‘কুরুচিপূর্ণ’ বলে দাবি করেছে। তারা বলছে, মাইকেল জ্যাকসনের খ্যাতিকে বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহার করা ও তাঁকে হেয় করার জন্যই এ তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে। ওই দুই শিশু ওয়েড রবসন ও জেমস সেফচাক বহু আগেই জানিয়েছিলেন, জ্যাকসন তাঁদের সঙ্গে যৌন নির্যাতনমূলক কিছু করেননি। এদের মধ্যে রবসন মাইকেলের পরিবারের বিরুদ্ধে ১০ লাখ ডলার দাবি করে মামলাও করেছিলেন বটে, কিন্তু সেই মামলা পরে খারিজ হয়ে যায়।
মাইকেল জ্যাকসনের কাছে যৌন নির্যাতনের শিকার এক কিশোরের অভিযোগের ভিত্তিতে ২০০৩ সালে পুলিশ তাঁর ক্যালিফোর্নিয়ার খামারবাড়ি নেভারল্যান্ডে তল্লাশি চালিয়েছিল। ‘লিভিং নেভারল্যান্ড’ যৌথভাবে প্রযোজনা করেছেন পরিচালক রিড, এইচবিও এবং চ্যানেল ফোর।