বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমন্ত্রিত ৪০০ ছবি প্রায় সাড়ে তিন লাখ দর্শকের সামনে তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি নিয়ে শুরু হলো ৬৯ তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, অর্থাৎ বার্লিনালে। ৭ ফেব্রুয়ারি চলচ্চিত্রবোদ্ধা, সাংবাদিক ও দর্শকেরা সবাই প্রচণ্ড প্রত্যাশা নিয়ে প্রথম দিনের উদ্বোধনী ছবি ‘দ্য কাইন্ডনেস অব স্ট্রেঞ্জার’–এর প্রদর্শনী দেখতে আসেন। কিন্তু লোন শেরফিগ পরিচালিত এই ছবি প্রথম দিনেই সবার মনে ফেলে হতাশার ছাপ। বেশির ভাগ দর্শকের আগামী ১০ দিনে এই উৎসবের ভালো কিছু দেখার আশা যেন এই প্রদর্শনীর সঙ্গে সঙ্গে উবে যায়! অনেকে প্রদর্শনী শেষে বেরোতে বেরোতে ছবিটিকে ব্যাখ্যা করেন একটা নিম্নমানের ‘সোপ অপেরা’ হিসেবে।
বার্লিন উৎসবের পরিচালক ডিটার কশ্লিক। উৎসবের শুরুতেই এই ছন্দপতনের জন্য অনেক দর্শক ও বোদ্ধাই বিদায়ী এই উৎসব পরিচালককে দায়ী করছেন। যদিও ১৮ বছর ধরে এই উৎসবকে তিনি অনেক প্রসারিত করেছেন। তাঁর সবচেয়ে প্রশংসনীয় উদ্যোগ ছিল ‘ট্যালেন্ট ক্যাম্পাস’ নামের বিভাগটির প্রতিষ্ঠা। এই ‘ট্যালেন্ট ক্যাম্পাস’–এ সারা বিশ্বের শিক্ষানবিশ নির্মাতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং প্রতিষ্ঠিত ও পেশাদার চলচ্চিত্র কলাকুশলীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের ও চিন্তার আদান–প্রদানের সুযোগ করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশের অনেক মেধাবী নির্মাতাও এই বিভাগে যোগ দিয়েছেন বিগত বছরগুলোয়, এবারও আছে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রকর্মীদের অংশগ্রহণ। কিন্তু আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগে নিম্নমানের ছবি প্রদর্শনীর জন্য তাঁকে প্রতিবারই সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাই তাঁর বিদায়ের বছরেও তিনি এমন একটা ভরাডুবি দিয়ে উৎসব শুরু করবেন, এটা কেউ ভাবতে পারেননি। উৎসবে আগতরা আশা করছেন, আগামী বছর লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসবের প্রাক্তন পরিচালক কার্লো সাত্রিয়ান নতুন বার্লিনালে পরিচালকের দায়িত্ব নিলে এই উৎসবের দুর্নাম হয়তো কিছুটা হলেও ঘুচতে পারে।
গত বছরের উৎসবে ‘মি টু’ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছিলেন উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা। সেই ছাপ রয়েছে এবারও। উৎসবের সর্বত্র নারীদের অংশগ্রহণ এ বছর চোখে পড়ার মতো। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় এবার ১৭টি ছবির মধ্যে ৭টি ছবির নির্মাতাই নারী। এবারের জুরি প্রধানের দায়িত্বেও আছেন বিশ্বখ্যাত ফরাসি অভিনেত্রী জুলিয়েট বিনশ। তা ছাড়া ৬ জুরি সদস্যের মধ্যেও তিনজন নারী। রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগে দেখানো হচ্ছে সাবেক পূর্ব জার্মানির নারী নির্মাতাদের তৈরি প্রায় ১৮টি ছবি। প্রতিযোগিতা বিভাগের বাইরেও ‘প্যানারোমা’, ‘ফোরাম’, ‘জার্মান পারস্পেকটিভ’ বিভাগে নারী-পুরুষের অনুপাত প্রায় সমান।
পাশ্চাত্যের ছবি যখন উৎসবের নাম ডোবাচ্ছে, ভারতের জোয়া আখতারের নতুন ছবি গালি বয় রেখেছে এই উপমহাদেশের মান। প্রথম দিনে ‘বার্লিনালে স্পেশাল’ বিভাগের প্রেস স্ক্রিনিংয়ে ছবিটি প্রশংসা কুড়ায়। তবে কেন এই প্রশংসা? সেই কারণ এখনই লেখা যাবে না। আজ বার্লিন উৎসবে ছবিটির উদ্বোধন করা হবে। এর আগ পর্যন্ত এ ছবির ওপর বিস্তারিত লেখার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বার্লিনালে কর্তৃপক্ষের।
বার্লিন উৎসবের শুরুটা এবার ভালো হলো না। আগামী ১০ দিন কেমন যাবে আর শেষটা কেমন হবে এ ব্যাপারে দর্শক, বোদ্ধা ও সাংবাদিকদের মধ্যে উদ্বেগের ফিসফাস প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়ে গেল।