কাজের সুযোগ আসার আগে থেকেই স্পাইডার ম্যানের ভক্ত ছিলেন ওয়াহিদ
কাজের সুযোগ আসার আগে থেকেই স্পাইডার ম্যানের ভক্ত ছিলেন ওয়াহিদ

মার্ভেলের স্নাইপাররা গুলি করে মেরে ফেলবে!

ঠোঁটে একচিলতে হাসি। কথা বললে বোঝা যায়, আড্ডাবাজ আর প্রাণবন্ত একটা মানুষ। চোখধাঁধানো সুপারহিরোদের পেছনে কাজ করেন তিনি। অস্কারে মনোনয়ন পেয়েছে তাঁর কাজ করা ছবি। তাঁর কাজের ফিরিস্তি দিতে গেলে লম্বা হয়ে যাবে! তার চেয়ে বরং এককথায় বলা যাক, হলিউডে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিনিধি। কী চেনা গেল না! ওয়াহিদ ইবনে রেজা।

এসবই তো পুরোনো কথা! নতুন কী? আছে বৈকি। সদ্য সদ্যই প্রকাশিত হয়েছে স্পাইডারম্যান সিরিজের নতুন ছবি নো ওয়ে হোম–এর ট্রেলার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটি শেয়ার করে ওয়াহিদ জানালেন নিজের প্রিয় সুপারহিরোর সঙ্গে কাজের কথা, ‘সব সময়ই আমি স্পাইডারম্যানের ভক্ত। এ কারণে নয় যে কমিকস বইয়ে পড়া সে আমার প্রথম সুপারহিরো, বরং এই সুপারহিরোর আবহ সংগীতটা অদ্ভুতভাবে মনে ধরে। শুধু তা–ই নয়, গভীরভাবে বললে সে একটা দারুণ ছেলে, যে বিজ্ঞানে ভালো।’

ওই পোস্টে ওয়াহিদ জানান, সব সময়ই তিনি স্পাইডারম্যান–এ কাজ করতে চেয়েছেন। এর আগে স্পাইডারম্যান–এর প্রিস্কুল সিরিজ স্পাইডি অ্যান্ড হিজ অ্যামাজিং ফ্রেন্ডস–এ কাজ করে বুঝেছিলেন, কত মজা এই সুপারহিরোর সঙ্গে কাজ করতে। অবশেষে প্রিয় সুপারহিরোর ছবিতেই কাজ।

ওয়াহিদ লিখেছেন, ‘ডিজিটাল ডোমেইনে তিন মাস ধরে ডিজিটাল প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে কাজ করা সিনেমার টিজার-ট্রেলার শেয়ার করতে পেরে আমি খুবই গর্বিত।’

‘ব্ল্যাক প্যান্থার’, ওয়াহিদ ইবনে রেজা ও ‘অ্যাভেঞ্জারস ইনফিনিটি ওয়ার’

নিঃসন্দেহে এটি বাংলাদেশের জন্য আনন্দের একটা খবর। কথা বলতে মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করা হয়। জানালেন ভীষণ ব্যস্ত। দিনে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। দম ফেলার ফুরসতটি নেই। তারপরও একটুখানি সময় পাওয়া গেল। জানা গেল আরও দুটি দারুণ খবর।

ওয়াহিদ ইবনে রেজা একাধারে ইঞ্জিনিয়ার, কবি, লেখক, অ্যানিমেটর, চিত্রনাট্যকার, অভিনেতা ও নির্মাতা। তবে লেখালেখিই তাঁর আসল প্রেম! এবার সে পথেই এগোলেন কয়েক ধাপ। জানালেন, ফিনিশীয় একজন আর্টিস্ট তৈরি করছেন একটি অ্যানিমেশন সিরিজ। সেখানে লেখক হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। লেখক হিসেবে এটাই তাঁর প্রথম অফিশিয়াল কাজ।

জানালেন, মমলু নামের একটি পান্ডা আর তাঁর বন্ধুদের নিয়ে সিরিজটির কাহিনি। আর এর মাধ্যমে রাইটার্স গিল্ড অব কানাডার সদস্যও হয়ে গেছেন তিনি।

ব্যাটম্যান ভার্সাস সুপারম্যান: ডন অব জাস্টিস ছবির পোস্টারের সামনে ওয়াহিদ ইবনে রেজা

খুব সম্ভবত তিনিই প্রথম বাংলাদেশি, যিনি এই সদস্যপদ পেলেন। ইতিমধ্যে তিনটি পর্ব লিখে ফেলেছেন। প্রথম মৌসুমে ৭৮টি পর্ব থাকবে। সিরিজটি ফিনল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, কানাডা আর বেলজিয়াম মিলে তৈরি হচ্ছে। ওয়াহিদ বলেন, ‘উত্তর আমেরিকায় লেখালেখির কাজ পাওয়াটা খুব কঠিন। এটা আমার স্বপ্ন ছিল। সেটি পূরণ হচ্ছে। অন্য রকম অনুভূতি।’

এখানেই শেষ নয়। ওয়াহিদ ইবনে রেজা নিজেই যেন এখন স্পাইডারম্যান; প্রতিনিয়ত ছড়িয়ে যাচ্ছেন কাজের জাল। বছরে একটা নির্দিষ্ট ফান্ড দেয় ন্যাশনাল ফিল্ম বোর্ড অব কানাডা। সেই ফান্ডও পেয়েছেন। এই অনুদানে চলছে শর্ট অ্যানিমেশন ফিল্মের কাজ। তিনি বলেন, ‘অর্থটা আসলে গুরুত্বপূর্ণ নয়। মূলত তাদের সঙ্গে কাজ করাটাই একটা প্রেস্টিজিয়াস ব্যাপার।’

ওয়াহিদ জানান, এর মাধ্যমে ডিরেক্টরস গিল্ড অব কানাডার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন তিনি। এটাও কোনো বাংলাদেশি হিসেবে প্রথম। এত এত প্রথমের অংশীদার ওয়াহিদ। কেমন লাগছে? কণ্ঠে বিনয় ঢেলে বললেন, ‘প্রথম নিয়ে অতটা উচ্ছ্বসিত নই। কাজটাই গুরুত্বপূর্ণ। তবে স্কুল–কলেজে কখনো প্রথম হইনি তো! ভালো তো একটু লাগেই।’

কথায় কথায় ওয়াহিদ জানান, লেখালেখিতেই এখন বেশি মনোযোগ দিতে চান। পাশাপাশি অন্য সবকিছুও চলবে। আলোচনা এবার আমাদের মূল আলোচ্য স্পাইডারম্যান-এর দিকে ঘুরাই। প্রশ্ন করি, ওই প্রকল্পে আসলে কী করছেন এখন? আমার উৎসাহে পানি ঢেলে দিয়ে উত্তর দিলেন, ‘ভাই রে, চলমান প্রকল্প নিয়ে কথা বলা একদম মানা।’ হাসতে হাসতে যোগ করলেন, ‘মার্ভেলের স্নাইপাররা একদম গুলি করে মেরে ফেলবে।’

ওয়াহিদ ইবনে রেজা

কী আর করা, স্পাইডারম্যান: নো ওয়ে হোম মুক্তির আগপর্যন্ত ওই আলোচনা আপাতত মুলতবি রাখতে হবে। এর মধ্যে স্পাইডারম্যানের মতোই চারদিকে আরও বেশি করে তাঁর কাজের জাল ছড়িয়ে দিক ওয়াহিদ ইবনে রেজা। আমাদের জানাক আরও দারুণ দারুণ সুখবর।