মনরোর লাইব্রেরিতে যেসব বই থাকত

মেরিলিন মনরো
ইনস্টাগ্রাম

মনরো মানেই ম্যাজিক। মেরিলিন মনরো; হলিউড অভিনেত্রী। জীবনটা দেখুন, ১৯২৬ সালে জন্ম। মৃত্যুর সালটা ঠিক তার উল্টা। ২৬ উল্টা করে দিন, ১৯৬২ সালে। হলিউডের এই ‘সেক্স সিম্বল’ ও সৌন্দর্যের আধার গ্ল্যামার জগতে ঢুকে পড়েছিলেন আচমকা!

তত দিনে মেরিলিন মনরোর বিয়ে হয়ে গেছে। ক্যালিফোর্নিয়ার একটা কারখানায় চাকরি করেন। রোজ কারখানায় যান। কারখানায় একদল আলোকচিত্রী এলেন ছবি তুলতে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ডেভিড কনোভার। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিক। কনোভার ইয়াঙ্ক সাময়িকীর জন্য যুদ্ধে মার্কিন নারীর অবদান নিয়ে ছবি তোলেন তখন। তো হঠাৎ একদিন কনোভারের চোখ চলে যায় মেরিলিন মনরোর দিকে। মনরো বললে ভুল হবে। তখনো তিনি মনরো নন, তিনি নরমা জিন মোর্টেনসোন। শৈশবে মা–বাবার দেওয়া নামে পরিচিত। তাঁকে দেখেই মুগ্ধ কনোভার। ঠিক করেন মনরোকে দিয়ে করবেন একটি প্রচ্ছদ।

অন্য কারও বেলায় হলে বলা হতো, এভাবেই কপাল খুলে গেল মনরোর। কিন্তু দ্য মেরিলিন মনরো কালেকশন ওয়েবসাইটে লেখা হলো ঠিক উল্টা। কপাল খুলে গেল কনোভারের। বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না, তাঁর কপাল এত ভালো! কারণ মনরো ছিলেন মডেল হিসেবে যেকোনো আলোকচিত্রীর জন্য স্বপ্নের মতো। কারখানা থেকে ক্যামেরার ফ্রেমের সঙ্গে জীবন জুড়ে গেল মনরোর। সাময়িকীর প্রচ্ছদকন্যা থেকে ধীরে ধীরে পা বাড়ান হলিউডে। নরমা জিন মোর্টেনসোন থেকে হয়ে ওঠেন মেরিলিন মনরো।

মেরিলিন মনরো

মাত্র ৩৬ বছরের জীবন। সৌন্দর্য দিয়ে মাতিয়ে রেখেছিলেন পুরো হলিউড। আপাতদৃষ্টিতে বাইরের মনরোই বিখ্যাত, মানে মনরোর সৌন্দর্য। কিন্তু এই ঝলমলে রূপ কি শুধু মেকআপ রুমের প্রসাধন আর আবেদনেই সীমাবদ্ধ? নাকি বাইরের রূপ–জৌলুশকে আরও বেশি তাতিয়ে দিয়েছিল মনরোর অন্তর্নিহিত শক্তি। জানা যায়, ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ছিল তাঁর। পড়তেও ভালোবাসতেন। তাঁর এই ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে ছিল চার শতাধিক বই। জন্মদিনে চলুন ঘুরে আসা যাক, মনরোর প্রিয় বইয়ের জগত থেকে।

মেরিলিন মনরো

আ ম্যান অ্যাগেইনস্ট হিমসেলফ
লেখক: কার্ল এ ম্যানিঙ্গার
বইটি নিয়ে মনরোর আগ্রহ ছিল বলা যায়। কারণ, বাইরের ঝলমলে জীবনের আড়ালে মনরোর ছিল একটা দুঃখী, অসুখী জীবন। দুইবার ধর্ষণের হাত থেকে বেঁচে গেছেন। করেছেন আত্মহত্যার চেষ্টা। ১৯ বছর বয়স হওয়ার আগেই দুইবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন তিনি! মনরো বইটির প্রথম অধ্যায়ের শুরুর দিকে এক জায়গায় পেনসিলের দাগ দিয়ে রাখেন। যেখানে আত্মহত্যার কথা লেখা ছিল। বইটির ছবি তোলা হয় বেভারলি হিলের কার্লটন হোটেলের স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টে।

মেরিলিন মনরো

ম্যানস সুপ্রিম ইনহেরিট্যান্স
লেখক: এফ ম্যাথিয়াস আলেকজান্ডার
বইটি দিয়ে বোঝা যায়, শুধু সৌন্দর্য দিয়েই নিজেকে আবদ্ধ করে রাখেননি মনরো। ইনটেলেকচুয়াল চিন্তাভাবনায়ও নিজেকে মেলে ধরেছেন। বইটির বিভিন্ন জায়গায় মনরো নানান নোট করে রেখেছেন।

দ্য মিরাকলস অব ইওর মাইন্ড
লেখক: জোসেফ মরফি
এই বইয়ের প্রতি পৃষ্ঠায় প্রিয় জায়গাগুলোয় দাগ দিয়ে রেখেছেন মনরো। কখনো কখনো নোটও করেছেন। আবার এক জায়গায় লেখা দেখা গেল ‘সিড’। হতে পারে বন্ধু সিডনি স্কলস্কিকে দেখানোর জন্যই নামটি লিখে রেখেছেন। হলিউড কলামলেখক স্কলস্কি ছিলেন মনরোর বিশেষ বন্ধু। একটি ছবিতে দেখা যায়, স্কলস্কি ও মনরো কিছু একটা নিয়ে বেশ আলোচনায় মগ্ন।

মেরিলিন মনরো

ও কেয়ারলেস লাভ
লেখক: মরিচ জোলোটো
মেরিলিন মনরোর সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে বইটি লেখা। বইটি মেরিলিন মনরোকে জানতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

এ ছাড়া আরও নানা বিষয়ে বিভিন্ন বই ছিল মনরোর ব্যক্তিগত সংগ্রহে। তাঁর বইয়ের তাক শিল্প, সাহিত্য, নাটক, জীবনী, কবিতা, রাজনীতি, ইতিহাস, ধর্ম, দর্শন ও মনোবিজ্ঞানের বই দিয়ে ঠাঁসা। ‘অন দ্য রোড’, ‘দ্য ইনভিজিবল ম্যান’ ও ‘দিস হাউস অন ফায়ার’ বইয়ের প্রথম সংস্করণ ছিল তাঁর সংগ্রহে। তলস্তয় থেকে শুরু করে মার্ক টোয়েন, ধ্রুপদী বইয়েরও সংগ্রহ ছিল মনরোর লাইব্রেরিতে। সংগ্রহে ছিল ‘দ্য গ্রেট গ্যাটসবি’, ‘অ্যালিসেস অ্যাডভেঞ্চারস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’, ‘দ্য সান অলসো রাইজেস’ এবং আলব্যের কামুর ‘দ্য ফল’।

মেরিলিন মনরো

মনরোর সংগ্রহে শুধু ধ্রুপদী বই–ই নয়, একেবারে রোজকার জীবনযাপনের বইও ছিল। যেমন বাগানের যত্ন নেওয়া, শিশুপাঠ্য বই ইত্যাদি। মনরো বই নিয়ে বেশ সতর্ক ছিলেন। কোনো ধরনের ‘কপি’ করা বই তাঁর লাইব্রেরিতে ছিল না। সব বই আসল বাঁধাই করা। বইগুলো দেখলে বোঝা যায়, শুধু তাকে সাজিয়ে রাখেননি তিনি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে পড়েও নিতেন। বইয়ের মধ্যে পেনসিলের দাগ, নোট, বুকমার্ক প্রমাণ করে, পড়ায় উৎসাহী ছিলেন এই অভিনেত্রী।
সূত্র: দ্য মেরিলিন মনরো কালেকশন

মেরিলিন মনরো