কানাডার টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসবে এবার দর্শকের রায়ে ‘সেরা ছবি’র পুরস্কার পেয়েছে তাইকা ওয়াতিতির ‘জোজো র্যাবিট’। ওয়াকিন ফিনিক্সের ‘জোকার’, টম হ্যাঙ্কসের ‘আ বিউটিফুল ডে ইন দ্য নেইবারহুড’ আর বং জুন-হোর ‘প্যারাসাইট’কে পেছনে ফেলে জয়ী হয়েছে ছবিটি।
‘জোজো র্যাবিট’ ডার্ক কমেডি ধাঁচের ছবি। ছবিটি পরিচালনা করেছেন তাইকা ওয়াতিতি। ছবিতে তিনি অ্যাডলফ হিটলারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। ভ্যারাইটিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানালেন, এই চরিত্রের জন্য তিনি নাকি অন্য কাউকে ভরসা করতে পারেননি। বলেছেন, ‘ছবিতে আমি মনেপ্রাণে একজন নাৎসি নেতা হয়ে উঠতে চেয়েছি। কারণ এটা আমার ক্যারিয়ারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল।’ ১০ বছর বয়সী জোজো র্যাবিটের ভূমিকায় দেখা গেছে রোমান গ্রিফিন ডেভিসকে। এই পিচ্চিই এই মুহূর্তে টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসবের সবচেয়ে বড় তারকা।
জোজো র্যাবিটের সিঙ্গেল মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন স্কারলেট জোহানসন। বাড়ির চিলেকোঠায় তিনি এক ইহুদি কিশোরীকে লুকিয়ে রাখেন। প্রথম দেখায় মেয়েটিকে ভূত বলে মনে হলেও ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব হয়ে যায় ইহুদি মেয়েটির সঙ্গে। কিন্তু জোজো যে হিটলার ইয়ুথের সদস্য। সে যে উগ্র জাতীয়তাবাদী নাৎসি আদর্শে উদ্দীপ্ত। শুধু তা-ই নয়, আগে যে হিটলারের কথা বলা হলো, যে চরিত্রে স্বয়ং পরিচালক অভিনয় করেছেন, সেটি আসলে এই জোজোর ইমাজিনারি ফ্রেন্ড বা কল্পনার বন্ধু। তবে এবার কী হবে? একদিকে বন্ধুত্ব আর অন্যদিকে আদর্শ।
এবার কি তবে অস্কার পাবে জোজো র্যাবিট? ইতিহাস বলছে, পেয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। গত বছর ‘গ্রিন বুক’ ছবিটি টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ছবির পুরস্কার পায়। আর তারপরই ছবিটি ‘সেরা ছবি’ বিভাগে অস্কার পেয়েছে। আর এই কথা ‘লা লা ল্যান্ড’, ‘রুম’, ‘থ্রি বিলবোর্ডস আউটসাইড এবিং, মিসৌরি’, ‘দ্য ইমিটেশন গেম’ ছবিগুলোর ক্ষেত্রেও সত্যি হয়েছে।
টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসবে দ্বিতীয় সেরা ছবি নোয়া বামবাক পরিচালিত ‘ম্যারেজ স্টোরি’। মজার ব্যাপার হলো, দ্বিতীয় সেরা ছবিতেও রয়েছেন স্কারলেট জোহানসন। আর তাঁর সঙ্গে পর্দা ভাগ করেছেন অ্যাডাম ড্রাইভার। ‘ম্যারেজ স্টোরি’ ছবিটি মুক্তি পাবে নেটফ্লিক্সে। ছবিটিকে অস্কারের জন্য খুবই সম্ভাবনাময় হিসেবে ঘোষণা করেছেন সমালোচকেরা। জানিয়েছেন, সেরা ছবি, সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা ও অভিনেত্রী—এই চারটি বিভাগে অস্কার জয়ের যোগ্যতা রাখে ‘ম্যারেজ স্টোরি’। শুধু তা-ই নয়, ‘সেরা বিদেশি ভাষার ছবি’ বিভাগে অস্কার পেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
তৃতীয় সেরা ছবি হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার পরিচালক বং জুন-হোর ‘প্যারাসাইট’। এই ছবির পক্ষে ছিল শক্ত বাজি। কান বিজয়ী কোরিয়ার এই ‘মাস্টার পিস’ সিনেমার সব কটি প্রদর্শনী গেছে একদম ‘হাউসফুল’। টিকিট না পেয়ে বক্স অফিস থেকে ফিরে গেছেন বহু দর্শক। এই ছবিই এ বছর কানের সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বর্ণপাম জিতেছে। ‘প্যারাসাইট’ মুক্তি পাবে নিউজিল্যান্ডের অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নিয়নে।
মিডনাইট প্ল্যাটফর্ম বিভাগে দর্শকদের রায়ে সেরা হয়েছে গ্যালডের গাজতেলু উরোতিয়া পরিচালিত ‘দ্য প্ল্যাটফর্ম’। এই বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছে ‘দ্য ভাস্ট অব নাইট’ আর তৃতীয় ‘ব্লাড কোয়ান্টাম’।
সেরা প্রামাণ্যচিত্র বিভাগে পুরস্কার জিতেছে ‘দ্য কেভ’। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় কাজ করা চিকিৎসকদের ওপর এই ছবি নির্মাণ করেছেন ফ্যারেস ফাইয়াদ। দ্বিতীয় হয়েছে ‘আই অ্যাম নট অ্যালোন’ আর তৃতীয় ‘ড্যাডস’। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি-নির্ভর ‘দ্য ভাস্ট অব নাইট’ ছবিকে ইতিমধ্যে আমাজন বড় অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে কিনে নিয়েছে। আর ‘ড্যাডস’ দেখতে পাবেন শুধু অ্যাপলের সাবস্ক্রাইবাররা।
একরকম ঘোষণা দিয়েই এ বছর পুরস্কার অনুষ্ঠানের আড়ম্বর বাদ দিয়েছেন উৎসবের কর্তারা। শুধু ছিল ভোট গণনার আনুষ্ঠানিকতা। দর্শকদের ভোটে হয়েছে পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ডের ফয়সালা। কিন্তু ব্যাপারটা কীভাবে ঘটেছে? টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসবে যাঁরা টিকিট কেটে ছবি দেখেছেন, সবার কাছে পৌঁছে গিয়েছিল ই-মেইল। ই-মেইলের মাধ্যমে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এবার উৎসবে আপনার পছন্দের ছবির কথা জানান। এই ই-মেইল মনে করুন ব্যালট পেপার। তবে ভোট দেওয়া শেষ কথা নয়। কয়েক ধাপে চলেছে ভোটের সত্যতা যাচাই। তারপরই এসেছে এই রায়।