কেট ব্ল্যানচেটের সামনে আরেকবার

কান উৎ​সবে গতকাল ক্যারল ছবির ফটোকলে অস্ট্রেলীয় অভিনেত্রী কেট ব্ল্যানচেট l এএফপি
কান উৎ​সবে গতকাল ক্যারল ছবির ফটোকলে অস্ট্রেলীয় অভিনেত্রী কেট ব্ল্যানচেট l এএফপি

সোনালি চুল নেমে এসেছে কাঁধ পর্যন্ত। ভেজা ভেজা সবুজাভ চোখ জোড়ায় কী যেন রহস্য খেলা করে সর্বক্ষণ। সম্ভবত এরই মধ্যে ওজনও কমিয়েছেন বেশ খানিকটা। তাই অন্তত চেহারা দেখে বয়স অনুমান করা শক্ত। এলিজাবেথ থেকে হালের ক্যারল। কেট ব্ল্যানচেট মানেই আপাদমস্তক আভিজাত্য। যাঁর প্রতিভা, সৌন্দর্য আর ব্যক্তিত্বের কাছে নত হয়েছে অস্কার থেকে গোল্ডেন গ্লোব। পেয়েছেন তামাম দুনিয়ার চলচ্চিত্র জগতের অজস্রÊ বড়সড় পুরস্কার আর সম্মাননা। এই হলিউড নন্দিনী গেলবার কান চলচ্চিত্র উৎসবে এসেছিলেন হাউ টু ট্রেন ইওর ড্রাগন নামের অ্যানিমেশন ছবি নিয়ে। কেট সেবার মজা করে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে গেলে তোমাদের ওখানে থাকতে দেবে তো?’
মাঝে পেরিয়ে গেছে এক বছর। এর মধ্যে আবারও কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রধান আকর্ষণ অস্ট্রেলিয়ার এই অভিনেত্রী। এবার তাঁর ছবির বিষয় পঞ্চাশের দশকের পটভূমিতে দুই নারীর বিতর্কিত রোমান্টিক সম্পর্ক।
কী বলা যায় এই অস্কার বিজয়ী অভিনেত্রীকে?
কোথায় যেন পড়েছিলাম রূপ আর গুণের প্রশংসা যে কাউকে খুশি করার জন্য সবচেয়ে ভালো অস্ত্র। এমনকি মহা সুন্দরীরারও লাখ-কোটিবার রূপ-গুণের প্রশংসা শুনেও কখনো ক্লান্ত হন না।
তবে তা-ই সই। শুরুতেই কেটকে জানিয়ে দিলাম ‘আপনাকে যথারীতি দারুণ অভিজাত দেখাচ্ছে।’ বলতেই কেট হাসলেন। আমার পরের প্রশ্নটার জন্য অবশ্য তিনি মনে হয় না তৈরি ছিলেন।
-আপনি কি মনে করেন বিতর্কিত শয্যাদৃশ্যে অভিনয় করেও নিজের আভিজাত্য ধরে রাখাটা একটু কঠিন?
কেট মুহূর্তের জন্য থমকে গেলেন। হয়তো প্রশ্নটা আরেকবার বুঝতে চাইলেন। সংবাদ সম্মেলন কক্ষভর্তি সাংবাদিকদের হাসির দমক শুনতে পাচ্ছি। আগের দিনে পুরো ছবি দেখা সবাই বুঝে গেছেন আমি কী বলতে চাইছি।
বেশ কয়েক মুহূর্ত পর মুখ খুললেন কেট। বললেন, ‘না। আমার মনে হয় না।’
দুবারের অস্কারজয়ী এই অভিনেত্রীর অন্য সব ছবির চেয়ে ক্যারল সত্যিই আলাদা। পঞ্চাশের দশকের পটভূমিতে তৈরি এই ছবিতে কেটের চরিত্রটি সম্ভ্রান্ত এক নারীর। যে তার চেয়ে কম বয়সী আরেকটি মেয়ের সঙ্গে জটিল সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এমন ‘বিতর্কিত’ ছবিতে কেটকে এর আগে দেখা যায়নি কখনো।
সব মিলিয়ে টড হেনেসের ছবি ক্যারল এখন আলোচনার শীর্ষে। আর ছবি নিয়ে এই মাতামাতির পুরোভাগে আছেন কেট ব্ল্যানচেট। গতকাল প্রথম প্রদর্শনীতেই তুমুল হুলুস্থুল ফেলে দিয়েছে ক্যারল। গার্ডিয়ান পত্রিকা থেকে ভ্যারাইটি। সবখানে শুধু কেট ব্ল্যানচেট-বন্দনা। এর মধ্যে শুরু হয়ে গেছে সামনের অস্কারটা আবার তার চেনা ঘরে যাচ্ছে কি না সেই হিসাবনিকাশও।
স্বাভাবিকভাবেই ফটোকল থেকে সংবাদ সম্মেলন কিংবা বিশেষ সাক্ষাৎকার মঞ্চ—সবখানেই কেট ব্ল্যানচেটকে ঘিরে ছিল মাতামাতি। তার সঙ্গে ছবির প্রচারণায় এসেছিলেন অভিনেত্রী রুনি মারা এবং ছবির পরিচালক টড হেনেসও। কেট ব্ল্যানচেট এলেন, দেখলেন এবং মন্ত্রমুগ্ধ করে গেলেন আরও একবার।

ফরাসি প্রধানমন্ত্রীর আগমন
হয়তো কান উৎসব নামের মহামিলনমেলা কেবল চলচ্চিত্র জগতের মানুষজনের জন্য বলেই তাঁর আগমন ঘিরে কোনো হুলুস্থুল হলো না। অনেকটা নীরবেই ফরাসি প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভাল কাল ঘুরে গেলেন কান চলচ্চিত্র উৎসব। ‘ইউরোপে কপিরাইটের ভবিষ্যৎ’ শিরোনামের একটি আলোচনা সভায় ম্যানুয়েল ভাল ছিলেন সমাপনী বক্তা। সভার উদ্বোধনী বক্তা ছিলেন কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রেসিডেন্ট পিয়ের লেসকুর। ছিলেন ফরাসি সংস্কৃতিমন্ত্রী ফ্লুয়ের পেলেরিনও।

কত ছবি, কত আয়োজন
ক্যারল ছাড়াও কাল সকালে ছিল স্বর্ণপামের দৌড়ে থাকা আরেক ছবি মন রই-এর সংবাদ সম্মেলন। ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছে গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরেও। কাল প্রথমবারের মতো প্রদর্শিত হয়েছে প্রতিযোগিতা বিভাগের আরেক ছবি লাউডার দেন বম্বস।
সিমেন দে লা প্লাজে ছিল ইভান দ্য টেরিবল-এর প্রদর্শনী। কান উৎসবের সঙ্গে চলমান সিমেন দে লা ক্রিটিক বিভাগেও ছবিগুলো দেখার জন্যও ছিল দর্শকদের দীর্ঘ সারি।