সেরা অভিনেতার জন্য অস্কারজয়ী প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতা সিডনি পটিয়ার মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। জীবনের শেষ সময়টা কাটান বাহামায়। আর সেখানেই তিনি মারা যান বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রেড মিচেলের কার্যালয়।
নিউইয়র্ক টাইমসও সিডনি পটিয়ারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। সিএনএন সিডনি পটিয়ারকে ‘হলিউডের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মুভি স্টার’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। মার্কিন উপপ্রধানমন্ত্রী চেস্টার কুপার তাঁর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘তিনি ছিলেন একজন আইকন, একজন মেন্টর, একজন যোদ্ধা এবং সর্বোপরি একজন জাতীয় সম্পদ।’
‘লিলিস অব দ্য ফিল্ড’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ১৯৬৩ সালে অস্কারে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতেছিলেন পটিয়ার। ওই সিনেমায় তিনি একজন কাজের লোকের ভূমিকায় অভিনয় করেন, যিনি একজন জার্মান যাজককে মরুভূমির মধ্যে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় তৈরিতে সাহায্য করেন। এর পাঁচ বছর আগে ‘দ্য ডিফিয়েন্ট ওয়ানস’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে অস্কারে মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি।
৫০ ও ৬০ দশকে যখন বর্ণবৈষম্যকে কেন্দ্র করে আন্দোলন শুরু হয়েছিল মার্কিন মুলুকে, সমাজের সেই ছবিকেই রুপালি পর্দায় তুলে ধরে সিডনি পটিয়ার সাফল্যের শীর্ষে উঠেছিলেন। ১৯৬৭ সালে তাঁর জোড়া ক্ল্যাসিক সিনেমা দর্শকদের মনে স্বতন্ত্র জায়গা করে নিয়েছিল। ‘গেস, হু ইজ কামিং টু ডিনার’ এবং ‘ইন দ্য হিট অব দ্য নাইট’। এসব চলচ্চিত্রে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও মর্যাদাবান নায়কদের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি পরিচিত ছিলেন। ‘গেস হু ইজ কামিং টু ডিনার’ চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেন চিকিৎসকের ভূমিকায়। এ সিনেমার চিকিৎসক চরিত্রটি সিডনি শ্বেতাঙ্গ বাগদত্তার বাবা-মায়ের মন জিতে নেয়।
সিডনি পটিয়ার ফ্লোরিডার মিয়ামিতে ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯২৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা-মা রেগিনাল্ড ও এভলিন পোইটিয়ার্স ক্যাট আইল্যান্ডের (বাহামা) সাধারণ কৃষক ছিলেন। তিনি টমেটো চাষ ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পটিয়ার বেড়ে ওঠেন বাহামা দ্বীপপুঞ্জে। অভিনয়জগতে প্রবেশের আগে সিডনি পটিয়ার বিচিত্র ধরনের কাজ করেছেন। অল্প সময়ের জন্য ছিলেন সেনাবাহিনীতে। এ ছাড়া তিনি যখন অভিনয়ের ওপর লেখাপড়া করেন, তখন নানা বিচিত্র পেশায় যুক্ত হন নিজের খরচ মেটাতে।
সে সময় চলচ্চিত্রে কৃষ্ণাঙ্গদের ভালো কাজের সুযোগ কম থাকলেও অভিনয়ের গুণে পটিয়ার হয়ে উঠেছিলেন তাঁর সময়ের শীর্ষ অভিনেতাদের একজন। হলিউডে বর্ণবৈষম্য দূর করায় নেতৃত্ব দেন তিনি। তাঁর অভিনীত অনেক চলচ্চিত্রের মূল উপজীব্য ছিল মার্কিন নাগরিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক পরিবর্তন।
১৯৬৭ সালে সিডনি পটিয়ার ‘ইন দ্য হিট অব দ্য নাইট’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন একজন গোয়েন্দার চরিত্রে, যিনি সামাজিক কুসংস্কার ও গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লড়াই করেন। ২০০২ সালে গোটা জীবনের অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য তাঁকে সাম্মানিক অস্কার দেওয়া হয়। টেলিভিশনেও দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন সিডনি। পাশাপাশি প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন বিচারপতি থারগুড মার্শালের চরিত্রেও তাঁকে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল।
১৯৯৭ সালে জাপানের বাহমিয়ান প্রতিনিধি হিসেবে সিডনি পটিয়ারকে নিযুক্ত করা হয়। ২০০৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘মেডল অব ফ্রিডম’-এ সম্মানিত করেন।