মঞ্চে অভিনয় দিয়ে শুরু। ঢাকায় টেলিভিশন কেন্দ্র চালু হওয়ার পর ছোট পর্দায় অভিষেক। চলচ্চিত্রে অভিনয় করেও নজর কেড়েছেন। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে প্রায় ৫০০ নাটকে বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করে হয়ে উঠেছেন বাংলা নাটকের চেনামুখ। তিনি মাসুদ আলী খান। দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অবদান রাখার জন্য বরেণ্য অভিনেতা মাসুদ আলী খান পেয়েছেন ‘মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা’।
দেশের সংস্কৃতি ও বিনোদন অঙ্গনের প্রধান ও আকর্ষণীয় আয়োজন মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-২০২৩ দেওয়া হচ্ছে আজ শুক্রবার। রাজধানীর ইউনাইটেড কনভেনশন সেন্টারের দ্য গ্রেস মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন নবীন, প্রবীণ ও খ্যাতিমান সব তারকা। উপস্থিত আছেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।
জমকালো এই অনুষ্ঠানের প্রথম দিকে আজীবন সম্মাননা দেওয়ার ঘোষণা দেন এবারের অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হানিফ সংকেত। বড় পর্দায় দেখানো হয় মাসুদ আলী খানের জীবন ও কর্ম নিয়ে বানানো তথ্যচিত্র।
মাসুদ আলী খান ১৯৯৯ সালে পেয়েছিলেন প্রথম মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কার। আর এবার রজতজয়ন্তীতে পেলেন আজীবন সম্মাননা। দেশের জীবিত অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে তিনিই সম্ভবত এখন সবচেয়ে বয়স্ক। মাসুদ আলী খানের জন্ম ১৯২৯ সালে ৬ অক্টোবর মানিকগঞ্জের পারিল নওধা গ্রামে।
সম্মাননার জন্য নাম ঘোষণার পর মাসুদ আলী খান মঞ্চে আসেন। এ সময় মিলনায়তনভর্তি দর্শক স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসন থেকে দাঁড়িয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান। আজীবন সম্মাননা হিসেবে তিনি পান ক্রেস্ট, তিন লাখ টাকার চেক ও উত্তরীয়। তাঁর হাতে সম্মাননার ক্রেস্ট তুলে দেন আরেক কিংবদন্তি শিল্পী রফিকুন নবী। এ সময় মঞ্চে ছিলেন স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী ও প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান।
নিজের অনুভূতি জানিয়ে মাসুদ আলী খান বলেন, ‘যাঁরা আমাকে সম্মাননা দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ও যাঁরা সম্মাননা আমার হাতে তুলে দিয়েছেন, তাঁদের সশ্রদ্ধ সালাম ও অভিবাদন। আমার অগণিত দর্শক, যাঁরা অভিনয় দেখেছেন, তাঁদেরও সশ্রদ্ধ সালাম।’
বর্তমান প্রজন্মের শিল্পীদের উদ্দেশে মাসুদ আলী খান বলেন, ‘যে চরিত্রে অভিনয় করবে, সেটি বিশ্বাস করে করতে হবে। যাঁরা অভিনয় করেন, তাঁরা যেন মনপ্রাণ দিয়ে করেন। অভিনয় এমন একটা জিনিস, একবার যাঁর ভেতরে ঢোকে, তাঁর ভেতরেই বসত করে। আমি যেমন ৯৪ বছর বয়সে এখনো সুযোগ পেলেই অভিনয় করি।’
মাসুদ আলী খানের বাবা আরশাদ আলী খান ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী। মা সিতারা খাতুন। মাসুদ আলী খান ১৯৫২ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। দুই বছর পর জগন্নাথ কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকায় টেলিভিশন কেন্দ্র স্থাপিত হওয়ার পরপর নূরুল মোমেনের নাটক ‘ভাই ভাই সবাই’ দিয়ে ছোট পর্দায় মাসুদ আলী খানের অভিষেক হয়। আর সাদেক খানের ‘নদী ও নারী’ দিয়ে বড় পর্দায় তাঁর পথচলা শুরু।
মাসুদ আলী খান ১৯৫৫ সালে বিয়ে করেন তাহমিনা খানকে। ব্যক্তিজীবনে এই অভিনেতার এক ছেলে ও এক মেয়ে। চাকরিজীবনে সরকারের নানা দপ্তরে কাজ করেছেন। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সচিব হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নেন। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে একের পর এক বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাসুদ আলী খান।
১৯৯৮ সালে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের যাত্রা শুরু হলেও তারকাদের আজীবন সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় ২০০২ সালে চতুর্থ আসর থেকে। মাসুদ আলী খানকে নিয়ে এ পর্যন্ত ২২ গুণী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। শেষ ২০২২ সালের মেরিল-প্রথম আলোর আজীবন সম্মাননা পেয়েছিলেন কিংবদন্তি শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী।