ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দুই মাস চিকিৎসা নিয়ে আজ বাসায় ফিরছেন ছোট পর্দার অভিনেত্রী শারমিন আঁখি। সপ্তাহ দুয়েক আগে বিনোদন–এর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
চিকিৎসকেরা যখন বলেছিলেন, আইসিইউ থেকে আপনার ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে, ফেরার পরে কী মনে হয়েছিল?
প্রথম দিকে আমার শ্বাসনালি পুড়ে অবস্থা অনেকটা খারাপ ছিল। ডাক্তাররা আমার পরিবারের লোকেদের বলেই দিয়েছিলেন, আল্লাহর নাম নেন। আইসিইউ থেকে আমার ফেরার সম্ভাবনা ছিল ৩০ ভাগ। ফিরে আসার জন্য আল্লাহর রহমত ও সহকর্মী থেকে শুরু করে সবাই যে ভালোবাসা ও দোয়া করেছেন, তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞতা।
ঘটনা কীভাবে ঘটেছিল, কিছু মনে আছে?
ওই দিনের ঘটনা জীবনেও ভুলতে পারব না। ঘটনার কথা ভাবতেই ভয় লাগে। অনেক দিন ঘুমাতেই পারতাম না। ঘুমের মধ্যে লাফিয়ে উঠতাম। সেদিন আমি লাইট জ্বালিয়ে ওয়াশরুমে গেলাম। গিয়ে বসার পরে দেখলাম, স্পার্কিংয়ের মতো হচ্ছে। হুট করে স্পার্কিং হয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
তখন কি করলেন?
আমি সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢাকি। তখনই ব্রাস্ট হয়ে যায়। আমি ছিটকে এসে বাইরে পড়ে গেছি। আমি ফিট হয়ে যাই। তখন আমি একাই ছিলাম। একাই উঠে দাঁড়াই। তখন চোখের সামনেই দেখি, আমার হাত–পায়ের মাংস ফেটে যাচ্ছে। কিছু অংশ ঝুলতে থাকে। পরে সবাই এলে হাসপাতালে আসি।
আর কত দিন চিকিৎসা নিতে হবে?
হাতে শক্তি নেই। আমার পোড়া অংশের চামড়ার কিছু অংশ কুচকে আছে। সেটা যেন না থাকে, সেই জন্য এখন পোস্ট বার্নের চিকিৎসা শুরু হবে। এটা চলবে ছয় মাস। টাইট ফিট একটা পোশাক দিনে ২৩ ঘণ্টা পরে থাকতে হবে। রোদের আলোতে আসা যাবে না। পোস্ট বার্নের চিকিৎসাটা খুবই ঝুকিপূর্ণ। এরপর আবার লেজার ট্রিটমেন্ট হবে। ধৈর্য ধরে এই চিকিৎসা করতে হয়।
এখন কীভাবে খাচ্ছেন?
আগে নল দিয়ে খেতাম। নাক থেকে নল কয়েক দিন আগে খোলা হয়েছে। এখন চামচ দিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করি। আমার তো শক্তি একদম কমে গেছে। পুরোনো শক্তি ফিরিয়ে আনার জন্য হাত–পায়ের ব্যায়াম করতে হচ্ছে। কিছুটা হাঁটার চেষ্টা করি। জীবনটা অনেক জটিল হয় গেছে। আশা করছি, শিগগির সেরে উঠব।
অ্যান্থলজি সিনেমা ‘ইতি, তোমারই ঢাকা’–এর ‘জিন্নাহ ইজ ডেজ’, ওয়েব সিরিজ ‘বলি’, এ ছাড়া ‘বাতাসের লাল ফুল’ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে আপনার অভিনয় বেশ প্রশংসিত হয়েছে। আবার কাজে ফেরা নিয়ে কিছু ভাবছেন?
আমার স্ক্রিন ঠিক হওয়ার আগপর্যন্ত বাইরে বের হওয়া নিষেধ। এই দুর্ঘটনার পরে নতুন একটি জীবন পেয়েছি। আমার কাছে মনে হয়, আমার বয়স ২ মাস। আমি একটি নিউবর্ন শিশু। সবই বাচ্চাদের মতো নতুন করে শিখতে হচ্ছে। আজ অনেক চেষ্টা করলাম, কলম ধরলাম। শিশুদের মতোই লেখা হলো। জীবনটাই থেমে যাওয়ার মতো, এর মধ্যে অভিনয় নিয়ে কী ভাবব। কিন্তু অভিনয়ে তো একসময় ফিরতেই হবে। তার আগে সুস্থ হওয়ার জন্য লড়াই করি।