চরকিতে মুক্তি পেয়েছে ওয়েব ফিল্ম উনিশ২০। ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ। নতুন ছবিটিসহ নানা প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে ‘বিনোদন’।
‘উনিশ২০’ দেখে কেমন লেগেছে?
কোনো শিল্পীর কাছে কোনো দিন মনে হয় না, তার কাজ অনেক ভালো হয়েছে। তার চোখে অনেক ভুল ধরা পড়ে। তারপরও একটা বিষয় বাকি থেকে যায়, সাধারণ মানুষ কী বলছে। সাধারণ মানুষ কী বলছে, সেটা তো পৃথিবী দেখতে পাচ্ছে।
বলছিলেন ভুল ধরা পড়ে। ভুল থেকে কি কোনো শিক্ষা নেওয়া হয়?
অতটা না আসলে। অভিনেতার ক্ষেত্রে একটা হচ্ছে স্টারডম, আরেকটা হচ্ছে শিল্পমনা—দুটি দুই জিনিস। শিল্পমনাটা আমার সিদ্ধান্ত। একজন মানুষ শিল্পকে কতটা প্রাধান্য দেবে, এটা একান্ত তার বিষয়। শিল্পটাকে আমার প্রাধান্য দেওয়ার প্রমাণ হচ্ছে, জানুয়ারির ১৩ তারিখে একটা চরিত্রে আমাকে দেখছে, ফেব্রুয়ারির ১৩ তারিখে আরেকটা চরিত্রে পৃথিবী দেখছে। সেটার যে ভিন্নতা, সেটা প্রমাণ করে যে সফলতাকে পুঁজি করে আরিফিন শুভ কাজ করে না।
‘উনিশ২০’ মুক্তির পর কোন কথাটা বেশি শুনতে হয়েছে?
সবার কাছ থেকে একটা কথাই বেশি শুনেছি, নাভিদ (মিশন এক্সট্রিম) আর অপু (উনিশ২০) কীভাবে একটা মানুষ হয়। আলটিমেটলি, রক্তমাংসের মানুষ তো একটাই।
এই ছবিতে আপনার সহশিল্পী আফসান আরা বিন্দু। দীর্ঘদিন পর দুজনের পর্দা ভাগাভাগি করতে কতটা সুবিধা হয়েছে?
নিঃসন্দেহে আমরা যখন কোনো একটা কাজ করতে যাই, সহশিল্পীর সঙ্গে একটা ব্যক্তিগত বোঝাপড়া থাকলে বেশ সুবিধা হয়। বলে না, কিছু মানিকজোড় থাকে। যেমন সালমান শাহর সঙ্গে ডন ভাইয়ের ব্যক্তিজীবনে একটা বোঝাপড়া ছিল। এই সম্পর্ক কাজের ক্ষেত্রেও সহজ হয়। শাকিব ভাইয়ের সঙ্গে মিশা ভাইও কত ছবি করেছেন। তাঁদের একটা পারস্পরিক বোঝাপড়া রয়েছে। এই বোঝাপড়া থাকলে যেকোনো কাজে সুবিধা হয়। না থাকলে যে কাজ করা যায় না, তা-ও কিন্তু নয়।
‘উনিশ২০’-এর পর দুজনকে নিয়ে কোনো প্রযোজক-পরিচালক কি নতুন ছবির পরিকল্পনা করেছেন?
`উনিশ২০'-এর সফলতার পর কেউ যদি আবার আমাদের নিয়ে ছবি বানাতে চান, তাহলে আমি আগে ভাবব, এটা সফলতাকে পুঁজি করে করার চেষ্টা চলছে, নাকি গল্পটাতে আমরা দুজন মানানসই। আরিয়ান গুণী পরিচালক। তার মনে হয়েছে, শিলা চরিত্রে বিন্দু ভালো করবে, অপু চরিত্রে আমি করব। তাই নিয়েছে।
বিন্দু তো দীর্ঘদিন কাজ করেননি। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল?
ও তো ইন্ডাস্ট্রিতে ছিল না। ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত ছিল। এই কাজের সূত্রে আবার আমাদের দেখা হলো।
এই যে দীর্ঘদিন দেখা নেই, দুজনের আগের মতো স্বাভাবিক হতে কি সময় লেগেছে?
মানুষের জন্য প্রথম দিন হচ্ছে শুটিংয়ের প্রথম দিন। কিন্তু আমাদের জন্য প্রথম দিন হচ্ছে শুটিংয়ের আরও দুই সপ্তাহ আগে, যখন কর্মশালা হয়েছে। অপি (করিম) আপা আমাদের চরিত্র রূপায়ণে বড় ধরনের সহযোগিতা করেছেন। দীর্ঘদিন পর আমাদের দেখা হয় পরিচালক আরিয়ানের অফিসে। এরপর লাগাতার কথাবার্তা।
সামনে আপনার নতুন কী কী ছবি মুক্তি পাবে?
রায়হান রাফীর নূর, শ্যাম বেনেগালের মুজিব: দ্য মেকিং অব আ নেশন, অনম বিশ্বাসের ফুটবল ৭১।
‘নূর’ নিয়ে নাকি রায়হান রাফীর সঙ্গে আপনার মান-অভিমান হয়েছে?
মান-অভিমানের কোনো জায়গা নেই। প্রত্যেকে প্রত্যেকের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। একটা কাজ নিয়ে কেউ বসে নেই। আমরা আশা করছি, ঠিক সময়মতো দর্শকের সামনে ছবিটি আসবে। আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব, ততটুকু নিয়ে আশা করি আসব।
সমস্যা না হলে সেন্সর বোর্ডে পুরো ছবির কাজ শেষ না করে জমা পড়ল কীভাবে? সেন্সর বোর্ডও ছবিটি ফেরত দিয়েছিল।
একজন শিল্পী হিসেবে আমার সম্পৃক্ততা ছিল শুটিং পর্যন্ত। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল, এক্সিকিউটিভ দায়িত্ব নিয়ে প্রোডাকশনটা গুছিয়ে দিতে। সোয়া এক বছর আগে আমি সেই কাজ করেছি। এরপর শিল্পী হিসেবে আমার দায়িত্ব থাকে শুধু ডাবিং। শুটিংয়ের দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে তা-ও শেষ করে দিয়েছি।
ছবিতে নির্বাহী প্রযোজকের অভিজ্ঞতা কেমন?
মানুষ জানল এখন, কিন্তু এটা আমি ১৪ বছর আগে করেছি। আমি সহকারী পরিচালক ছিলাম দেড় বছর, বিজ্ঞাপনচিত্রে।
কিন্তু চলচ্চিত্রে তো এই কাজ প্রথম?
একটা প্রোডাকশন গোছানো, নতুন কিছু মনে হয় না। তবে বাড়তি চাপ। বাড়তি চাপের বড় কারণ, প্রোডাকশনটা আমার না। এটা একরকম অনুরোধে ঢেঁকি গেলা ছিল। ছবির শুটিং ও পরিকল্পনাটা ফেঁসে গিয়েছিল, তখনই আমাকে অনুরোধ করা হয় নির্বাহী প্রযোজকের দায়িত্ব নিতে। আমি দায়িত্ব নিয়ে সহযোগিতা করেছি। তবে প্রোডাকশনটা আমার হলে কাজ আরও স্বাভাবিক হতো।
বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকের সর্বশেষ আপডেট কী?
আমার কাছে যতটুকু তথ্য আছে, পোস্ট–প্রোডাকশন চলছে। ২০২৩ সালে আশা করা যাচ্ছে ছবিটি মুক্তি পাবে।
বলিউডে এখন বড় তারকারা একে অন্যের ছবিতে অভিনয় করছেন। এই কৌশলে বলিউড বেশ সফলও। ঢালিউডে এখন এটা কতটা প্রয়োজন বলে মনে করেন আপনি?
২০১৬ সালে `আয়নাবাজি' মুক্তি পেয়েছিল। মুসাফিরসহ আরও কয়েকটি ছবি দিয়ে আমার জনপ্রিয়তার কোনো কমতি ছিল না। তা সত্ত্বেও আমাকে অমিতাভ রেজা বললেন, ‘একটা দৃশ্য আছে, করে দিয়ে যা।’ আমি বললাম, ঠিক আছে। যেদিন যাব, সেদিন বললেন যে মুক্তির আগে কাউকে জানানো যাবে না। আমার সঙ্গে কিন্তু কোনো সাইনিংও হয়নি। পুরান ঢাকায় গেরিলা স্টাইলে গেলাম। গেরিলা স্টাইলে সারা দিন শুটিং হলো। তার বহু মাস পর ছবিটি মুক্তি পেলে সবাই জানল, আয়নাবাজির একটি দৃশ্যে আরিফিন শুভ আছে।
প্রয়োজন তো আছে। আমাদের দেশে বিষয়টা বোঝার মানুষ কতজন আছে, সেটাও একটা প্রশ্ন। অবশ্যই সেটা হওয়া উচিত। দশের লাঠি একের বোঝা। আমরা একসঙ্গে হলে জয়ী হব, আলাদা আলাদা হলে হারিয়ে যাব।