ইয়াছির আল হক
ইয়াছির আল হক

‘যতবার অন্যায়–অবিচার আসবে, ততবার এই প্রজন্ম ঘুরে দাঁড়াবে’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীদের অনেকে। নিজেরা তো ছিলেনই, কেউ কেউ চারপাশের সবাইকে সংগঠিত করার চেষ্টাও করেছেন। তাদের মধ্যে দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ প্ল্যাটফর্মের ইয়াছির আল হক–এর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁর কাছ থেকে আন্দোলনের শিক্ষা ও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশার কথা শুনেছেন মনজুর কাদের

প্রশ্ন

আপনার লড়াই নির্দিষ্ট দলের বিরুদ্ধে ছিল, নাকি সরকারে থাকা স্বৈরাচারী মনোভাব ও কার্যক্রমের বিরুদ্ধে?

ইয়াছির আল হক: আমার এই আন্দোলন কখনোই নির্দিষ্ট কোনো দলের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ প্রকাশের উদ্দেশ্যে ছিল না। আবু সাঈদ ও মুগ্ধদের হত্যার বিচারের জন্য আমার আন্দোলন শুরু হয়েছিল। তবে ভুলে গেলে চলবে না, ছাত্র ও জনতার এই গণ-আন্দোলনের প্রধান ও মূল উদ্দেশ্য হয়ে উঠেছিল— রাষ্ট্রের মালিক জনগণের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার, হারানো বাক্‌স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার।

প্রশ্ন

আওয়ামী লীগের মতো দেশের এত পুরোনো একটি দলের এমন পরিণতি থেকে অন্য সব রাজনৈতিক দলের কোনো শিক্ষা নেওয়ার আছে কি? তাহলে সেটা কেমন মনে করেন?

ইয়াছির আল হক: আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে প্রাচীন এবং দীর্ঘ সময় ধরে দাপটের সঙ্গে রাজনীতি করে যাওয়া রাজনৈতিক দল। বর্তমানে যে পরিস্থিতি, অন্য সব রাজনৈতিক দল কিংবা রাজনীতিবিদের এখান থেকে অবশ্যই শেখার আছে। দেশটা ‘আমার, আমার দল ক্ষমতায় আছে’, এই ‘আমিত্ব বা এককেন্দ্রিক দাপুটে’ মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, দেশের জনগণের চাহিদা এবং আক্ষরিক অর্থে দেশ ও জনগণকেই মূল প্রাধান্য দিয়ে পরিচালিত করার উদ্দেশ্যে এগোতে হবে। ক্ষমতায় এসে ধরাকে সরা জ্ঞান করার ইতিহাস আমরা দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেই দেখেছি। এই অন্যায় অভ্যাস এখনই প্রত্যাহার না করলে, দেশের যে স্বাধীনতা আজ দেখতে পাচ্ছি, তা–ও ব্যর্থ হবে। দাপট ও ক্ষমতার জোরের যে রাজনীতি এবং একে কেন্দ্র করে দলগুলোর যে মনোভাব গড়ে উঠেছে, তা উপড়ে ফেলতে হবে। এই গণজোয়ার এবং নতুন প্রজন্মের এমন যৌক্তিক, প্রশংসনীয় নেতৃত্বের যে উদাহরণ পুরো দেশ দেখল, সেখান থেকেই বুঝতে হবে, আমরা যদি এখনো সেই পুরোনো ইতিহাস ঠেলে প্রাচীন রাজনীতি করতে নামি, তাহলে সেখানে কল্যাণ বয়ে আসবে না। আর এই গণজোয়ার প্রয়োজনে আবারও আওয়াজ ওঠাবে। যতবার অন্যায়–অবিচার আসবে, ততবার এই প্রজন্ম ঘুরে দাঁড়াবে।

প্রশ্ন

যে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে, তার কাছে আপনার প্রত্যাশা।

ইয়াছির আল হক: প্রত্যাশা অনেক। তাই আশা করছি, প্রথমে এই আন্দোলনে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের সঠিক চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরে সব দোষীকে বিচারের আওতায় আনা হবে। দ্রুত দেশের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করবেন। আমাদের নির্বাহী বিভাগ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রের দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষদের চিহ্নিত করে তাঁদের জবাবদিহি ও বিচারের আওতায় আনবে। পাচার করা সব অর্থ ফিরিয়ে আনবে। সব গুম, খুনের সত্যতা বের করে এনে বিচার শুরু করবে। সার্বিকভাবে এই দেশের মানুষের জন্য সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক সরকার উপহার দেবে।

প্রশ্ন

নানা মতের এই সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত?

ইয়াছির আল হক: সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতি আমার একটাই অনুরোধ, আপনারা অন্যায়ের সঙ্গে কখনো দাঁড়াবেন না। প্রতিবাদের অনেক ভাষা আছে, ন্যায়ের পাশে থেকে ন্যায়ের জন্য কাজ করারও অনেক পন্থা আছে। তাই সার্বিকভাবে যিনি যেই মাধ্যম থেকেই হোন না কেন, দেশের সব শিল্পীসমাজের প্রতি অনুরোধ, আপনারা বৈষম্যমূলক যেকোনো মতামত, নীতি এবং বহু বছর ধরে চলে আসা যেকোনো অন্যায় প্র্যাকটিসের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলবেন এবং সার্বিক কল্যাণের জন্য যেভাবেই অবদান রাখা সম্ভব, আপনারা তা-ই করবেন। লেজুড়বৃত্তি ও ক্ষমতাসীন মানুষের কাছ থেকে আলাদা করে সুবিধা পাওয়ার অনুশীলনের কালিমা মুছে ফেলতে হবে সব শিল্পচর্চা থেকে। প্রতিটা গল্পে, গানে, কবিতায়, ছবিতে আর সিনেমায় আমাদের সত্য বলতেই হবে।