তানিয়া বৃষ্টি। অভিনেত্রীর সৌজন্যে
তানিয়া বৃষ্টি। অভিনেত্রীর সৌজন্যে

‘ঘিরে ধরার মতো কোনো ঘটনা ছিল না’

দক্ষিণ কোরিয়ায় তিন নাটকের শুটিং শেষ করে চার দিন হলো দেশে ফিরেছেন তানিয়া বৃষ্টি। দেশে এর মধ্যে একটি নাটকের শুটিং শেষ হলেও মালয়েশিয়ার একটি শুটিংসহ বেশ কিছু কাজ সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে বাতিল হয়েছে। সময় কাটছে সিনেমা দেখে আর বই পড়ে। এক ফাঁকে মনজুরুল আলমের সঙ্গে আড্ডায় বসেছিলেন এই অভিনেত্রী।

প্রশ্ন

প্রথমবার কোরিয়া, কেমন লাগল?

তানিয়া বৃষ্টি : দারুণ। আমরা তিনটা নাটকের শুটিংয়ে গিয়েছিলাম। সহ–অভিনেতা ছিলেন ইয়াশ রোহান। দুই বাংলার কালচার নিয়ে আমাদের নাটকের গল্প। কোরিয়ার একটি উৎসবে শুটিং ছিল। সেখানে অনেক বাঙালি ছিলেন। আমাদের তাঁরা নানাভাবে সহায়তা করেছেন। অভিনয় করেছেন। খাবার নিয়ে আমাদের খুবই সমস্যা হয়েছে। আমরা কোরীয় খাবারে অভ্যস্ত নই। খাবার, ভালো লোকেশন, কোথায় কোথায় ঘুরব, সেগুলো দেখিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা। কাউকেই চিনতাম না কিন্তু আমরা অনেক আপন হয়ে গিয়েছিলাম। এই আন্তরিকতা ভোলার নয়।

তানিয়া বৃষ্টি। ছবি: ফেসবুক
প্রশ্ন

ঘোরাঘুরির সময় পেয়েছিলেন?

তানিয়া বৃষ্টি : দারুণ একটি দেশ, না ঘুরে আসতে মনই চাইছিল না। টিমের সবাই হেল্পফুল। আমরা শুটিং করেছি। কোনো সমস্যা হয়নি। ঘিরে ধরার মতো কোনো ঘটনা ছিল না। শান্তিতে শুটিং করেছি। দেশে দেখা যায়, রাস্তাঘাটে শুটিং করা খুবই কঠিন হয়ে যায়। সেখানে কোরিয়ায় শুটিং করেছি, আড্ডা দিয়েছি। আবার প্রবাসী ভাইদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে ঘুরেছি। সীমান্তবর্তী ডিএমজেডে (ডিমিলিটারাইজড জোন) গিয়েছিলাম‍। উত্তর-দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তে। সেখানে দেয়ালের ওপাশে গিয়েছিলাম। উত্তর কোরিয়ার কাছে। ভয় ভয় লাগছিল, কিন্তু জায়গাটা অসম্ভব সুন্দর। আর কোরিয়ায় সবকিছুর অনেক দাম। পরিবারের জন্য কিছু কিনেছি। আমার কিছু কস্টিউম কিনেছি।

তানিয়া বৃষ্টি
প্রশ্ন

দেশে ফিরে এখন কী করছেন?

তানিয়া বৃষ্টি : চার দিন হলো ফিরেছি। এর মধ্যে ইরফান সাজ্জাদ ভাইয়ের সঙ্গে একটি নাটকের শুটিং করেছি। মালয়েশিয়ায় একটি শুটিংয়ে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু বাতিল হয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কাজ কমেছে। টেলিভিশন চ্যানেল, ইউটিউবের আয় কমেছে। অনেক নাটক প্রচার না হওয়ায় জমে আছে। আমার বেশ কিছু নাটক আটকে আছে। এমন পরিস্থিতির কারণে নাটক নির্মাণও কম হচ্ছে। কী বলব! ব্যস্ততা হালকা হয়ে গেছে। সবার কাজ কমছে, এটা মেনে নিতে হবে। তবে আমি আশাবাদী, হয়তো এক মাসের মধ্যের পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হবে।

তানিয়া বৃষ্টি। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
প্রশ্ন

শুটিং না থাকলে কী করেন?

তানিয়া বৃষ্টি : নিজেকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করি। জিম করা হয়, পরিবারের সঙ্গে থাকা হয়। বই পড়ি, সিনেমা দেখতে খুবই ভালো লাগে।

প্রশ্ন

অভিনেত্রী হিসেবে বই পড়া ক্যারিয়ারের জন্য আপনাকে কতটা সহায়তা করে?

তানিয়া বৃষ্টি : একজন অভিনেত্রীকে প্রচুর পড়তে হয়। এটা আমাকে খুবই সহযোগিতা করে। এটা আমাকে গভীরভাবে চরিত্র নিয়ে ভাবতে শেখায়। একটা গল্প বা চরিত্রের মধ্যে থাকলে সেটা চোখের সামনে কল্পনায় দেখতে পাই। কোনো একটি চরিত্রকে আমি ধরে নিই। সেই চরিত্রগুলো আমাকে নানা ঘটনার মধ্যে নিয়ে যায়। এই কল্পনা আমার অভিনয়কেও সমৃদ্ধ করে। এ জন্য কাজ না থাকলেও বইয়ে ডুবে থাকতে ইচ্ছা করে।

তানিয়া বৃষ্টি
প্রশ্ন

পছন্দের দু–একটি বই সম্পর্কে জানতে চাই...

তানিয়া বৃষ্টি : আমাকে জীবন সম্পর্কে শেখায়, এমন বইগুলোই বেশি টানে। কলিন হুভারের ‘ইট এন্ডস উইথ আস’ উপন্যাসটি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। এখানে গার্হস্থ্য সহিংসতা, মানসিক নির্যাতনের বিষয়গুলো গভীরভাবে মনে রেখাপাত করেছে। এগুলো যে উচিত নয় এবং প্রতিবন্ধকতা মানুষের জীবনকে কোথায় নিয়ে যায়, সেগুলোর মুখোমুখি করে বইটি। মেয়ে হিসেবে আরও বেশি নিজেকে কানেক্ট করতে পারি। অন্যদিকে দ্য ফোরটি রুলস অব লাভ নামের তুরস্কের বইটি আমার অনেক পছন্দের। এলিফ শাফাকের লেখা। নিজেকে যে পৃথিবীর সবকিছুর সঙ্গে কানেক্ট করা যায়, মানুষ, প্রেম—সবকিছুর সঙ্গেই আমরা কীভাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, সেটা আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করেছে। উপন্যাসে মধ্যবয়স্ক এলা নামের এক মহিলার জীবনের একঘেয়ে গল্প জীবনকে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবতে শেখায়।

প্রশ্ন

কোন সিনেমা আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছে?

তানিয়া বৃষ্টি : হতাশা, ডিপ্রেশন থেকে সিনেমা আমাকে বাঁচিয়েছে। জীবন সম্পর্কে ভাবতে শিখিয়েছে। এককথায় হতাশ হওয়া যাবে না। মানুষের জীবনে দুঃসময় আসবেই। হাজারো সমস্যার মধ্যে থেকেই পজিটিভ দিকগুলো খুঁজে নিতে হবে। সমস্যায় ভেঙে পড়া যাবে না। আমার পছন্দের সেই সিনেমাটির নাম জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা। এখনো মন খারাপ হলে সিনেমাটি দেখি।