ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী আফরান নিশো। ওটিটিতেও তাঁর কাজ প্রশংসিত হচ্ছে। কিছুদিন আগে একই সময়ে মুক্তি পায় তাঁর অভিনীত দুটি ওয়েব সিরিজ ‘সিন্ডিকেট’ ও ‘কাইজার’। এসব নিয়ে আজ শনিবার সন্ধ্যায় কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
কোথায় আপনি?
আমি এখন উত্তরায়। টেলিছবি ‘পুনর্জন্ম’-এর শুটিং করছি। আজ দ্বিতীয় দিনের শুটিং চলছে। চ্যানেল আইয়ে দেখানো হবে এ টেলিছবির তৃতীয় কিস্তি।
নতুন ‘পুনর্জন্ম’তে কী আছে?
‘পুনর্জন্ম ২’ যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের প্রথমটা দেখে নিতে হয়েছে। তবে এটা এমন নয় যে অ্যান্থলজি। একদমই পরবর্তী ঘটনা। সিকুয়েল যাকে বলা হয়। যাঁরা এক ও দুই দেখেননি, তাঁদের আগের দুটি দেখার পর তৃতীয় কিস্তি দেখতে হবে। একটা সংযোগ আছে।
এরপর আবার চতুর্থ কিস্তি হবে, নাকি এখানে শেষ হবে?
আমরা যেভাবে শেষ করার চেষ্টা করছি, আগের কিস্তিতে হয়নি। তাই তৃতীয় কিস্তি করতে হচ্ছে। তবে আবার হবে কি না, আগে থেকে বলে দিলে তো খারাপ (হাসি)। আমরা শেষ করার চেষ্টা করছি, কিন্তু এখানে তো ‘শেষ হয়েও হইল না শেষ’, এ রকম একটা ব্যাপার ঘটলে, আবার যদি সে রকম কিছু ঘটে, চাহিদা যদি তৈরি হয়, তাহলে হয়তো আমরা চতুর্থ কিস্তিতে যাব।
পরিচালক ভিকি জাহেদের ভৌতিক গল্পের কয়েকটিতে আপনিও কাজ করেছেন। নিজেও ভৌতিক অনেক ধরনের সিরিজ, চলচ্চিত্র দেখেন। সবকিছু ভাবলে এই পরিচালকের ভৌতিক কাজ নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ শুনতে চাই।
আমরা তো অনেকের সঙ্গে কাজ করছি। ওর সবচেয়ে ভালো দিক, এডুকেশনাল ব্যাকগ্রাউন্ড ঠিকঠাক। আমি বলছি না, এই ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলে কেউ পরিচালক হতে পারবেন না। কিন্তু এটা ওর প্লাস। শিক্ষিত একটা ছেলে, ভিজ্যুয়াল করার ক্ষমতাও আছে। ওর সঙ্গে প্রথম যখন দেখা তখন থেকে দেখেছি, সব সময় বুঝেশুনে কাজ করে। হঠাৎ করে শুটিং সেটে এসে একটা জিনিস ভাবল, বিষয়টা মোটেও এমন নয়। সব সময় গুছিয়ে কাজ করার প্রবণতা ছিল। ভিজ্যুয়াল ইমাজিনেশন ভালো। থ্রিল বা প্রেম বা একটু অলটার—যেটাই হোক—প্রতিটা গল্প সে আগে নিজের চোখ দিয়ে দেখে। এমন নয় যে সেটে এসে ভাবে। এমনিতে মেধাবী। আগামী দিনে যদি ঠিক থাকে, মগজধোলাই না হয়—অনেক সময় যশখ্যাতি তো মানুষকে অন্যদিকে ডাইভার্ট করে দেয়—এ ধরনের কোনো সমস্যা না হলে অনেক সম্ভাবনায় জায়গায় যাবে মনে হয়। সবচেয়ে বেশি সুবিধা হচ্ছে, সে খুবই শালীন একজন মানুষ। ব্যক্তি মানুষটার মধ্যে ও রকম কোনো বদভ্যাস আমি দেখিনি। শিল্পীসত্তা ও শিল্প নিয়ে যখন কেউ আন্তরিক থাকে, খুবই গুছিয়ে কাজ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করে, তখন অন্য দশজনের চেয়ে ভালো করার সম্ভাবনা বেশি থাকে আরকি।
শিল্পমাধ্যমে শালীনতা ও সততা শিল্প তৈরির ক্ষেত্রে কতটা জরুরি বলে আপনি মনে করেন? অনেকে এ-ও বলে থাকেন, শিল্পমাধ্যমে যে মানুষ যত বেশি সৎ, তিনি তত বড় শিল্পী।
এটা আমি বিশ্বাস করি। গভীরভাবে বিশ্বাস করি। শালীন ও সৎভাবে জীবনযাপন শিল্পমাধ্যমে খুবই জরুরি। তা না হলে সত্যিই কেউ বড় শিল্পী হতে পারেন না। ডেডিকেশন থাকতে হবে। এমন না যে একজন মানুষ পাগলাটে, তাই বলে তাঁর মধ্যে সততা নেই। আমি এটা সব সময় বিশ্বাস করি, যে শিল্পী যত বেশি সৎ, তিনি তত বড় এবং তত বেশি মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারেন। অভিনয়শিল্পীর ক্ষেত্রে ভেতরকার সততা ও ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি—দুটিরই দরকার হয়। কাল্পনিক ক্ষমতার দরকার হয়। মনোযোগ দরকার হয়। আমরা যাঁরা অভিনয়শিল্পী, তাঁরা সত্য বিশ্বাস নিয়ে কাজ করি, যা দর্শকের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা পায়। অভিনয় হচ্ছে সম্মিলিত শিল্পকর্ম। আমরা যেটাকে ফিকশন বলি, সেটা কোনোভাবে একক শিল্পকর্ম। তাই সম্মিলিত শিল্পকর্মে সবার ভেতরকার সততা ও আন্তরিকতা জরুরি।
সফলতার ব্যাপারটা শুধু শিল্পের ক্ষেত্রে, নাকি প্রতিটা ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?
সফলতা তো আমাদের এখানে সংজ্ঞায়িত করা হয় অন্যভাবে। সঠিক সফলতার কথা যদি বলি, অবশ্যই ভেতরকার সততা, ডেডিকেশন শতভাগ লাগবেই।
আমাদের এখানে কীভাবে সফলতাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়?
এটা তো উপলব্ধির বিষয়। একেকজনের ক্ষেত্রে তা একেক রকম। যাঁর কাছে অর্থ নেই, তাঁর কাছে অর্থই হচ্ছে সফলতা। যাঁর কাছে আবার অর্থ আছে কিন্তু সম্মান নেই, তাঁর কাছে সম্মানই হচ্ছে সফলতা। আমাদের এখানে সর্বক্ষেত্রে সফলতা একেকজনের কাছে একেক রকম।
আপনার কাছে সফলতার সংজ্ঞা কী?
আমি অভিনয়ের সঙ্গে আছি। সফলতা তখনই আসে, যখন শুধু ভালো অভিনয় তখন নয়, একই সঙ্গে অভিনয় দিয়ে আমজনতার সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হয়, জনপ্রিয় হওয়া, সমৃদ্ধ হওয়া, আমি যে কথাটা সবার কাছে পৌঁছাতে চাই, তা সঠিকভাবে পৌঁছাতে পারলাম কি না। শুধু ভালো কাজ করলাম, কিন্তু এটার সঙ্গে তো ব্যবসাও গুরুত্বপূর্ণ। আমার শিল্পকর্ম যখন ব্যবসা করে, তখন সোনায় সোহাগা হয়—তাই সফলতা আমার কাছে সবকিছু মিলিয়ে।
নতুন কাজের খবর বলুন।
ওটিটির জন্য কয়েকটি কাজ নিয়ে কথা হচ্ছে। চূড়ান্ত হলে জানাতে পারব।
ওটিটিতে তো সর্বশেষ অভিনয় করলেন ‘সিন্ডিকেট’ ও ‘কাইজার’-এ। দুটি কাজ আপনার অভিনয়জীবনে কী যোগ করেছে বলে মনে করেন।
প্রতিটা কাজই আমার জীবনে কিছু না কিছু যোগ করে। আমি যদি কোনো নাটকও করি, সেটা ছোট নয়। তাই সেটাও মন দিয়ে করি। ‘সিন্ডিকেট’ ও ‘কাইজার’ ওটিটির কাজ বলে আমার কাছে বিশেষ কিছু, তা নয়। তবে আলাদা হয়ে ওঠে প্রচারের পর। প্রচারের পর প্রতিটা কাজ বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছে আলাদা হয়ে ওঠে। কারও কাছে ‘সিন্ডিকেট’, কারও কাছে ‘কাইজার’ আবার কারও কাছে ‘শিল্পী’ ভালো লাগবে। সব কাজই তো আমি করছি। আমার বুদ্ধি, জ্ঞান—সবকিছু মিলিয়ে কাজটি করছি। ওই পরিস্থিতিতে আমি সততা দিয়ে করেছি। বিষয়টা এমন নয়, কোনো কাজ গা ছাড়া ভাব দিয়ে করেছি। আমাকে তো সব সময় নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে হবে। ভালো লাগা, মন্দ লাগার বিষয়টা অবশ্যই আলাদা।
‘সিন্ডিকেট’ ও ‘কাইজার’, কোনটি থেকে বেশি প্রশংসা পেয়েছেন?
দুটিরই দর্শক প্রতিক্রিয়া ভালো পেয়েছি। কোনোটাকে এগিয়ে রাখব, তেমন নয়। দুটি কাজের জন্যই গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছি। একই সময়ে দুটি কাজ মুক্তি পাওয়ার পর প্রশংসা পাওয়া বেশ ভালো লাগার।
মূলধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
সিনেমা নিয়ে ভাবিনি যে তা নয়, কিন্তু কোনোটাই এখনো ব্যাটে-বলে হয়নি। সিনেমা করার জন্য করব না। সিনেমা বুঝেশুনে করতে চাই। সিনেমা একটা করে দেখব, বিষয়টা মোটেও এমন নয়। আমি পরপর সিনেমায় অভিনয় করতে চাই।