মেহজাবীন চৌধুরী
মেহজাবীন চৌধুরী

এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি, কোথায়, কীভাবে কাটাব দিনটি

প্রশ্ন

‘কাজলের দিনরাত্রি’, ‘দ্য সাইলেন্স’—বছরের শুরুতেই এ দুই কাজ নিয়ে আলোচনায় মেহজাবীন চৌধুরী। কাজসহ নানা প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে ‘বিনোদন’
‘দ্য সাইলেন্স’ ওয়েব সিরিজটি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। কাজটি করে আপনার নিজের তৃপ্তি কতটুকু?

এটুকুতেই যদি কোনো অভিনেতা তৃপ্ত হয়ে যায়, তাহলে পরবর্তী সময়ে তার ভালো কাজের আগ্রহ কমে যাবে। আমি যতটুকু পেরেছি, করেছি। ভালো সাড়াও পাচ্ছি। কিন্তু তৃপ্তির কথা যদি বলি, তাহলে আরও কিছু করার আছে; আরও বেশি এক্সপ্লোর করা যায়। কাজের ক্ষেত্রে তৃপ্ত হওয়ার পথ এখনো অনেক বাকি।

প্রশ্ন

সিরিজটি করতে গিয়ে আপনাকে আলাদা করে দাঁত লাগিয়ে অভিনয় করতে হয়েছে। শুটিংয়ে সমস্যা হতো না?

অবশ্যই সমস্যা হতো। ১০টি নকল দাঁত লাগিয়ে অভিনয় করেছি। শুটিংয়ের সময় মুখ–চোয়াল সব ব্যথা হয়ে যেত, মুখ ভারী লাগত। কিন্তু আমি ও পরিচালক চেয়েছি, সিরিজে আমার মুখের কাঠামো একটু ভিন্ন রকমের লাগুক। সবাই দেখবে এটি মেহজাবীন, আবার ভাববে, মেহজাবীনকে এ রকম লাগছে কেন? কাজের বেলায় আমিও ভাবি, লুকটা একটু আলাদা হলে ভালো লাগে। এই সিরিজে রুবি চরিত্রটির জন্য এ রকমই চেয়েছিলাম। তবে এটি না করলেও কোনো সমস্যা ছিল না। বাড়তি জিনিসটি করে একটু আলাদা হওয়ার চেষ্টা আরকি।

প্রশ্ন

এই আলাদা লুক দর্শকেরা কীভাবে নিয়েছেন?

দর্শকেরা আমাকে এক রকম দেখে অভ্যস্ত। আমার এই চরিত্রের লুক দিয়ে দর্শকদের কিছুটা বিভ্রান্ত করতে পেরেছি মনে হয়। এটি আমাদের টিমের একটা উদ্দেশ্য ছিল। সেই দিক থেকে আমরা সফল বলতে পারেন। আর দর্শকের পছন্দের ব্যাপারে অনেকে বলতে পারেন, মেহজাবীনকে তো এমনিতেই ভালো লাগে। এটা করে ভালো লাগছে না। সেই বিষয় মাথায় রাখলে চরিত্রটি রুবি হতো না। মেহজাবীনকে পর্দায় ভালো দেখাতে হবে, এটাও আমি চাই না। আমি চাই, রুবি একটা চরিত্র, রুবিরই মতোই হোক। রুবি রুবির মতোই, মেহজাবীন মেহজাবীনের মতোই। এখন যদি আমি সব সময় আমার মতো হয়েই পর্দায় আসি, তাহলে আলাদা কিছু হবে না।

প্রশ্ন

এভাবে কাজ করতে গিয়ে প্রস্তুতি কেমন ছিল?

ভালো প্রস্তুতি ছিল। শুটিংয়ের আগেই দাঁতগুলোর মাপ দেওয়া, দাঁতগুলো লাগানোর পর কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে কি না—এগুলো ট্রায়াল দিতে হয়েছে। এটি করতে গিয়ে আমার নিজের আসল দাঁতের একটু ক্ষতি হয়েছে। যখনই পরতাম, তখন আমার আসল দাঁত থেকে একটু করে রক্ত বের হতো। কারণ, আমার আসল দাঁতের ওপর এগুলো লাগাতে হতো। প্রতিদিন শুটিংয়ের আগে আগে অনুশীলন করে শট দিতে হতো। অবশ্য শুটিংয়ের সময় নকল দাঁতগুলো পরতাম, বাকি সময় খুলে রাখতাম।

প্রশ্ন

আপনি মাঝে কলকাতায় ছিলেন। অনেকে বলছে, সেখানকার ওয়েব ফিল্ম বা সিনেমায় অভিনয় করছেন। সত্য নাকি?

না, না, সত্য নয়। এ রকম কিছুই না। কলকাতায় গিয়ে আমি কোনো শুটিং এখনো করিনি। তবে হ্যাঁ, ওখানে প্রস্তাব আছে। কথা চলছে। মিটিং হয়েছে। কিন্তু কারোর সঙ্গেই কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। শুধু এক জায়গায় নয়, বেশ কয়েকটি জায়গায় কথা হয়েছে।

মেহজাবিন চৌধুরী
প্রশ্ন

অনেক বছর পর ভালোবাসা দিবসে পর্দায় নেই আপনি, খারাপ লাগছে না?

দর্শকের মন্তব্য পড়তে থাকি। খুদে বার্তা আসতেই থাকে, ‘আপু, ভালোবাসা দিবসে কিছু নেই, কিছু নেই?’ দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ভক্তরা এই প্রথম ভালোবাসা দিবসে কিছু পাচ্ছেন না আমার। আমি মনে করি, এটাই দরকার। কারণ, কাজ গুছিয়ে করা ভক্তদের জন্যই। তবে পরবর্তী সময়ে আমার যেসব কাজ মুক্তি পাবে, তা যেন পুষিয়ে দিতে পারে। প্রথমবারের মতো ভালোবাসা দিবসে কাজ না থাকার কারণে আমার নিজেরও অন্য রকমের অনুভূতি হচ্ছে। তবে একদিক দিয়ে ভালোই লাগছে, অন্যের কাজ দেখা হবে। সব সময় তো বিশেষ দিনে নিজের কাজ নিয়ে টেনশনে থাকতাম, এবার সেটা করা লাগবে না।

প্রশ্ন

নাটক না থাকলেও এই বিশেষ দিন কীভাবে কাটবে আপনার?

এবার তো ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস একসঙ্গেই। দিনটিতে হাতে কোনো কাজ রাখিনি। আজ (গতকাল) একটি ফটোশুট করছি আর বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, দিনটিতে কী করা যায়। ঘুরতে যাওয়ার জন্য আমরা বন্ধুরা মিলে যেখানেই যোগাযোগ করছি, সব নাকি বুকড। তাই এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি, কোথায়, কীভাবে কাটাব দিনটি।

‘দ্য সাইলেন্স’ সিরিজে অভিনয় করেছেন তিনি
প্রশ্ন

আপনাকে এখন ওটিটিতেই বেশি দেখা যায় কেন?

ওটিটিতে একটু সময় নিয়ে কাজ যাচ্ছে, ভালো কাজের সুযোগ হচ্ছে। গল্প বলার স্বাধীনতা আছে। সবকিছু নিয়ে একটু নিরীক্ষা করা যাচ্ছে। ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে নিরীক্ষাধর্মী কাজ করতে চাই। বড় কথা, ওটিটিতে এখন পরিকল্পিত কাজ হচ্ছে। সে কারণেই আগ্রহটা বেড়েছে। যদি ভালো গল্পের কাজের সুযোগ থাকে, তাহলে নাটকেও কাজ করব।

প্রশ্ন

যে নাটকে অভিনয় করে একেবারেই তৃণমূল পর্যায়ে আপনার ভক্ত তৈরি হয়েছে। সেই নাটক থেকে সরে যাচ্ছেন কেন?

সরে যাচ্ছি না তো। বছরের শুরুতেই ‘কাজলের দিনরাত্রি’ করেছি। আলোচিত হয়েছে। সামনে ‘পুনর্জন্ম ৪’ করব। সবাই মনে করছেন, সরে যাচ্ছি, আসলে তো সরে যাচ্ছি না। হয়তো কাজ কম হচ্ছে। আশা করছি, প্রতিবছর ভক্তদের জন্য বেশ কিছু ভালো নাটকে কাজ হবে।

‘ঘটনা সত্য’ নাটকে অভিনয় করেছেন আফরান নিশো ও মেহজাবীন চৌধুরী
প্রশ্ন

এরই মধ্যে ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় অভিষেক হয়েছে তাসনিয়া ফারিণের। অনেক দিন থেকে এটি বলে আসছেন, আপনিও চলচ্চিত্রে অভিনয় করবেন। আর কত দিনে অপেক্ষা শেষ হবে?

এই মুহূর্তে বলতে পারছি না, এই অপেক্ষা ঠিক কত দিনের। কাজের প্রস্তাব তো আছেই। বড় পর্দায় ভালো কাজ না করলে ভক্তরাই মন খারাপ করবেন। সুতরাং ভালো কাজের জন্য আমাকে অপেক্ষা করতেই হবে। একটা কথা বলি, ভালোর জন্য আরও অপেক্ষা ভালো। যেকোনো বয়সে গিয়েই একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রীর বড় পর্দায় কাজ হয়। আমারও হবে। আমি চাপ নিচ্ছি না। সময় হলেই হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত নাটক, ওয়েব ফিল্ম বা সিরিজ, যা–ই করেছি, তাতে তো কম পাইনি। অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। এখন বাড়তি কাজ সিনেমা। সেটা হওয়ার, হয়ে যাবে।

‘বড় ছেলে’ নাটকের একটি দৃশ্যে মেহজাবীন চৌধুরী ও অপূর্ব
প্রশ্ন

অনেকে বলেন, নিশো, অপূর্ব, মেহজাবীন, ফারিণরা ওটিটিতে আগ্রহী হওয়ার কারণে নাটকের শিল্পীসংকট দেখা দিয়েছে। মানের দিক থেকেও নাটক পিছিয়ে যাচ্ছে, কী বলবেন?

আমি তো দেখছি, এখনো তৌসিফ, জোভান, কেয়া পায়েলরা ভালো কাজ করে যাচ্ছে। তবে এখন যাঁরা নাটক নিয়মিত করছেন, ভালো কাজ করছেন; তাঁদের নাটকে মনোযোগটা ধরে রাখতে হবে। ভালো কাজে গল্প একটা বিষয়, পরিচালকদেরও একটা হাত আছে। সবকিছু বিবেচনা করেই কাজগুলো করতে হবে। আবার দর্শকেরও একটা দায়বদ্ধতা আছে। দর্শক নাটকে যে ধরনের গল্প দেখতে চাইবেন, যে গল্প দর্শক সাপোর্ট করবেন, প্রযোজকেরা সেই ধরনের কাজই করতে চাইবেন। আমরা চাই, দর্শক ভালো গল্প বেছে নিক; কাজের মানেরও পরিবর্তন আসবে। আর আমাদের শূন্যতার কথা যে বলছেন, এটি বিষয় নয়। আমরা তো সুযোগ পেলে নাটক করব। শূন্যতা বলে কিছু থাকে না, একটা সময় ঠিকই পূরণ হয়ে যায়।