সুদীপ বিশ্বাস দীপ
সুদীপ বিশ্বাস দীপ

সিনেমার অ্যাকটিং বুঝতে হলে সিনেমা হলে গিয়ে দেখতে হবে: দীপ

গেল ঈদুল আজহায় মুক্তি পেয়েছে ‘ময়ূরাক্ষী’। রাশীদ পলাশ পরিচালিত ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুদীপ বিশ্বাস দীপ। মুক্তির অপেক্ষায় আছে আরও একটি চলচ্চিত্র। কথাবার্তা চলছে একাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয়ের। এসব নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বললেন মনজুর কাদের

প্রশ্ন

‘দহন’, ‘মিশন এক্সট্রিম’ ও ‘সুতপার ঠিকানা’ ছবি তিনটি মুক্তি পেলেও নায়ক হিসেবে ময়ূরাক্ষী প্রথম। নায়কের অভিষেক কেমন হলো মনে হয়?

সুদীপ বিশ্বাস দীপ: ‘মিশন এক্সট্রিম’, ‘দহন’, ‘সুতপার ঠিকানা’—প্রতিটি সিনেমায় অভিনয়শিল্পী হিসেবে প্রশংসা পেয়েছি। খুব ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। এবার ‘ময়ূরাক্ষী’ মুক্তির পর শুধু দর্শকের কাছ থেকে নয়, বিনোদন অঙ্গনের পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কাছ থেকেও প্রশংসা পেয়েছি। নায়ক হিসেবে যেহেতু প্রথম ছবি, তাই আমার জন্য চ্যালেঞ্জও ছিল। তারপরও যেভাবে সবাই ফোনে, ফেসবুকে ও মেসেঞ্জারে শুভকামনা জানিয়েছেন, তা আমার জন্য ভীষণ অনুপ্রেরণার। আমার তো মনে হয়েছে আর্ট হাউসের ছবিতে অভিনয় করাটা সহজ, কিন্তু বাণিজ্যিক ঘরানার ছবিতে অভিনয় অনেক কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং, সেটা উতরাতে পেরেছি ভেবে ভালো লাগছে।

প্রশ্ন

এখনো ‘ময়ূরাক্ষী’ ছবিটি যাঁরা দেখেননি, তাঁদের উদ্দেশে কী বলবেন?

সুদীপ বিশ্বাস দীপ: এই সপ্তাহে প্রেক্ষাগৃহে অবশ্য ছবিটি নেই। তবে শিগগিরই আবার মুক্তির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কারণ, আমরা পর্যাপ্ত হলে মুক্তি দিতে পারিনি। টেকনিক্যাল কিছু বিষয়ও ছিল। দেশের বাইরের দর্শকদের জন্য সুখবর, কিছুদিনের মধ্যে ছবিটি বাইরের দেশেও মুক্তি পাবে। একই সময়ে দেশেও মুক্তি পাবে।

২০১০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত প্রাচ্যনাটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সুদীপ বিশ্বাস দীপ
প্রশ্ন

ছবিটি নিয়ে সেভাবে আলোচনা কম হলেও আপনার চরিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গ্রুপে চর্চা হচ্ছে। এটা আনন্দের, নাকি আক্ষেপেরও?

সুদীপ বিশ্বাস দীপ: এটা একধরনের আক্ষেপের। আমি আমার কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গেও এটা নিয়ে আলাপ করছিলাম। থাকে না, সবই খারাপ হয়েছে, তখন কিছুই বলার থাকে না। কিন্তু হতাশা লাগে তখন, যখন বলে যে ভাই আপনি দুর্দান্ত পারফর্ম করছেন, গল্পটা ভালো ছিল, কিন্তু ছবিটা আরও অনেক জায়গায় পৌঁছে যেতে পারত, তখন আক্ষেপটা আসলে আরও বেড়ে যায়। আমরা তো আসলে পরিশ্রম কম করিনি। ছবিটা নিয়ে আড়াই বছরের পরিশ্রম। আমার ক্ষেত্রে এটা আরও অনেক বেশি। এই সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে, সিনেমা করতে অনেক ধৈর্য লাগে। নাটক বা অন্য কিছু খুবই সহজে হয়। শুটিং করে চলে এলাম, এরপর মুক্তি পেল, তারপর সবাই দেখার পর প্রশংসা করল। সিনেমা অনেক ধৈর্য ও পরিশ্রমের ব্যাপার। ছবিটা আরও বেশি মানুষ দেখলে বেশি ভালো লাগত। কারণ, গল্পটা তো অসম্ভব বড় স্কেলের।

প্রশ্ন

অনেক বেশি মানুষের কাছে ছবিটা যেতে পারল না কেন?

সুদীপ বিশ্বাস দীপ: এখানে আসলে পরিবেশক ও প্রযোজকদের মিস কমিউনিকেশন বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিনেমা কত হলে রিলিজ হবে, কীভাবে প্রচারণা হবে, প্রযোজক-পরিচালক-পরিবেশকেরাই এসব ঠিক করে। সিনেমার পুরো জিনিসটা তো অভিনয়শিল্পীর হাতে থাকে না। ওই জায়গা থেকে আমি ব্যাপারটা পরিষ্কার করে জানিও না।

রাশীদ পলাশ পরিচালিত ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুদীপ বিশ্বাস দীপ
প্রশ্ন

ঈদে মুক্তি পাওয়া অন্য কোনো ছবি দেখা হয়েছে?

সুদীপ বিশ্বাস দীপ: আমার ছবির ব্যস্ততার কারণে দুই সপ্তাহে পারিনি। এই সপ্তাহে ‘তুফান’ দেখার ইচ্ছা আছে।

প্রশ্ন

‘ময়ূরাক্ষী’ ছবিটা আপনার পরের কাজের ক্ষেত্রে কতটা প্রভাব পেলতে পারে?

সুদীপ বিশ্বাস দীপ: এটা দারুণ ভূমিকা রাখবে। এরই মধ্যে কয়েকজন পরিচালক ছবিটি দেখে তাঁদের নতুন ছবিতে অভিনয়ের ব্যাপারে কথা বলেছেন। আমার জন্য যা বিরাট আশীর্বাদ। তারা আমাকে হিরো হিসেবে অ্যাপ্রিশিয়েট করছে। তারা এ–ও বলছে, আমি আরও ভালো গল্পের কাজ করতে পারব। আমি আসলে ‘ময়ূরাক্ষী’ মুক্তির জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। তাই তো ছবিটি মুক্তির আগে অন্য কোনো কাজও হাতে নিইনি, যদিও প্রস্তাব ছিল। কারণ, আমি সিনেমাই করতে চেয়েছি। এখন পুরোপুরি সিনেমায় মনোনিবেশ করতে চাই।

সুদীপ বিশ্বাস দীপ
প্রশ্ন

সিনেমাই কেন করতে চেয়েছেন?

সুদীপ বিশ্বাস দীপ: আমার কাছে মনে হয়েছে, সিনেমা অসাধারণ যে অভিজ্ঞতা দেয়, তা অন্য কোনো মাধ্যম থেকে পাওয়া যায় না। ওটিটির জায়গায়ও একটা সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। সিনেমার প্রভাবটা যে কী, তা আমি টের পেয়েছি ২০১৬ সালে, যখন থেকে নিয়মিত প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখা শুরু করি। বাংলা সিনেমা বলি, অন্য ভাষারও—সব ছবিই হলে গিয়ে দেখি। কারণ, আমি মানসিকভাবে সিনেমার জন্য তৈরি হতে চেয়েছি। সিনেমায় অভিনয় করতে গেলে শুধু অভিনয় জানলে হয় না, সিনেমার অ্যাকটিং জানতে হয়। সিনেমার অ্যাকটিং বুঝতে হলে সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে হবে। দর্শক আসলে কোন সংলাপে, কোন বডি ল্যাঙ্গুয়েজে, কোন ধরনের ইমোশনে কি রিঅ্যাক্ট করে, তা বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।

প্রশ্ন

আপনার পরিবারে কেউ অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল?

সুদীপ বিশ্বাস দীপ: না, তবে আমার খালাতো ভাইবোনেরা উদীচী করতেন, যশোরে। পেশাদার অভিনয়শিল্পী হিসেবে আমার বংশে আমিই প্রথম। পরিবার শুরুর দিকে অভিনয়টা পছন্দ করত না। তাদের বক্তব্য ছিল, ঠিক আছে অভিনয় করো, কিন্তু চাকরিও করতে হবে। সবারই একটা ধারণা হয়েছে, অভিনয়শিল্পীরা শেষ বয়সে এসে না খেয়ে মারা যায়। ভবিষ্যৎ অনেক খারাপ। তাঁরা হয়তো আমার নিরাপত্তার কথা ভেবে এমনটা করেছেন। কিন্তু আমি অভিনয়ে সবচেয়ে বেশি আনন্দ পাই। তাই ঝুঁকি নিয়েছি। এখনো ঝুঁকি নিয়েই চলছি, তবে কিছুটা মসৃণ হয়েছে।

প্রশ্ন

‘প্রিয় প্রাক্তন’ ছবিতে আপনি সাতটি চরিত্রে আসছেন?

সুদীপ বিশ্বাস দীপ: আমি শুধু নই, আমার সহশিল্পী দীঘিও এই ছবিতে সাত চরিত্রে পর্দায় হাজির হবেন। যদিও এটা খুবই টাফ জব ছিল কিন্তু আমার পরিচালক এই অসাধ্য সাধন করেছেন। দীঘি তো অভিনেত্রী। এমন ভালো অভিনেত্রী, ভালো গল্প এবং পরিচালক থাকলে অনেক কিছু করে দেখানো যায়। কঠিনটাও সহজ হয়েছে। যাঁরা এরই মধ্যে রাশপ্রিন্ট দেখেছেন, তাঁরাও দীপ-দীঘিকে নিয়ে প্রশংসা করেছেন।

গেল ঈদুল আজহায় মুক্তি পেয়েছে ‘ময়ূরাক্ষী’
প্রশ্ন

সিনেমা নিয়ে দীপের স্বপ্ন কী?

সুদীপ বিশ্বাস দীপ: আমি আসলে বড় ক্যানভাসে মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমা করতে চাই, যেটা মানুষকে কমপ্লিটলি বিনোদিত করবে।