ছটকু আহমেদের ‘বুকের ভিতর আগুন’ দিয়ে অভিনয়ের ক্যারিয়ার শুরু হয় নায়ক ফেরদৌস আহমেদের। সেই ছবির ২৫ বছর পর আবারও ছটকু আহমেদের সঙ্গে অভিনয় করতে যাচ্ছেন তিনি। সরকারি অনুদানের ছবি ‘আহারে জীবন’-এ দেখা যাবে এই নায়ক-পরিচালকের জুটি। এই ছবি ও অন্যান্য নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন ফেরদৌস আহমেদ।
দীর্ঘদিন পর আবারও ছটকু আহমেদের ছবিতে...
করোনার মধ্যে ছটকু ভাইয়ের সঙ্গে একদিন কথা হলো। আমি বললাম, একটা গল্প লেখেন, চলেন সিনেমা বানাই। তারপর একটা গল্প শোনালেন, খুবই ইন্টারেস্টিং মনে হলো। বললাম, ছবিটা অনুদানের জন্য জমা দেন। আমি অনেক খুশি, লম্বা সময় পর আবারও তাঁর সঙ্গে কাজ করব।
আপনার প্রথম সিনেমা ‘বুকের ভিতর আগুন’-এর পরিচালক তিনি। সেটা ছিল সালমান শাহর অসমাপ্ত ছবি।
ছবিটির জন্য ছটকু আহমেদ আমাকে নির্বাচন করেছিলেন। তখন সালমান শাহর অনেক জনপ্রিয়তা...এ রকম একটা সময়ে এমন একটা ছবি করা উচিত হবে কি না, তা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। অনেকে না করেছে। সবার ধারণা ছিল, আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। আমি হারিয়ে যাব। আমার কাছে মনে হয়েছিল, পরিশ্রম করলে পারব।
আপনার ক্যারিয়ারে টার্নিং পয়েন্ট?
‘বুকের ভিতর আগুন’ আমার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এ ছবি দেখেই বাসু চ্যাটার্জি ‘হঠাৎ বৃষ্টি’তে নিলেন। ‘বুকের ভিতর আগুন’ তখনো মুক্তি পায়নি, ছবির রাশ প্রিন্ট দেখেই তিনি আমাকে নিয়েছিলেন। ছবিটি আমার ক্যারিয়ারে বড় ভূমিকা রেখেছে। এ জন্য আমি সব সময় ছটকু ভাইকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। ছটকু ভাইয়ের সঙ্গে আমার ভালো একটা সম্পর্ক, বন্ধুর মতো সম্পর্ক।
দুই যুগের বেশি সময় ধরে অভিনয় করছেন...
অভিনয়ের দীর্ঘ সময় পার করে ফেলেছি। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, এই তো সেদিন শুরু করেছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই বদলে যায়, আমরাও বদলে গেছি। যেহেতু নিজেকে অনুভব করা যায় না, মনে হয় সেই আগের জায়গায় আছি। অভিনয়ে আমার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, পরিচালকদের কাছে শিখেছি। এখনো শিখছি—প্রতিনিয়ত অভিনয়ের কলাকৌশল পরিবর্তন হতে থাকে। এখন চিত্রনাট্যের ভাষা বদলে গেছে। প্ল্যাটফর্ম বদলে গেছে। শুধু হলে গিয়ে মানুষ আর সিনেমা দেখে না। হাতের মোবাইলেও দেখে। অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমরাই মনে হয় সবচেয়ে ভাগ্যবান প্রজন্ম। আমরা ৩৫ মিলিমিটারেও কাজ করেছি, ডিজিটাল প্রযুক্তিতেও কাজ করেছি, ভার্চ্যুয়াল মিডিয়াতেও করছি। জানি না সামনে আর কোন নতুন মাধ্যম চলে আসে।
আপনার দীর্ঘ ক্যারিয়ার মূল্যায়ন করতে বললে কীভাবে করবেন?
অনেক ভালো সিনেমায় কাজ করেছি, অনেক ব্যবসাসফল সিনেমায় অভিনয় করেছি। হুমায়ূন আহমেদের মতো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি। আমজাদ হোসেনকে পেয়েছি, দিলীপ বিশ্বাসকে পেয়েছি। একটা বড় ব্যাপার হচ্ছে, অনেক পরিচালক আছেন, যাঁদের প্রথম সিনেমা আমি করেছি। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আছেন, সামিয়া জামান এমনকি বাসু চ্যাটার্জির প্রথম বাংলা ছবি আমি করেছি। এ রকম একটা তালিকা করেছিলাম—২৫ থেকে ৩০ জন পরিচালকের প্রথম ছবিতে অভিনয় করেছি। এ ছাড়া ভারতীয় বাংলা চ্যানেল জি বাংলায় কাজের পাশাপাশি কলকাতার অনেক ছবিতে অভিনয় করেছি। এভাবে আমি যে একটা ধারা তৈরি করেছি, সেটাতে এখন অনেকেই হাঁটছে। ভালো লাগে যখন আমাদের দেশের অভিনয়শিল্পীরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করে।
‘আহারে জীবন’ ছবিতে পূর্ণিমার সঙ্গে জুটি বাঁধবেন। আপনারা একসঙ্গে ‘গাঙচিল’, ‘জ্যাম’ করেছেন। ছবিগুলো এখন কোন পর্যায়ে আছে?
‘গাঙচিল’-এর কাজ প্রায় শেষ। এ বছর ছবিটি মুক্তি পেতে পারে। এর মধ্যে ‘আহারে জীবন’ এল। ‘জ্যাম’ ছবির কিছু কাজ বাকি আছে। একটা ছবির শুটিং যদি লম্বা সময় ধরে চলে, তখন মাথা থেকে অনেক কিছু চলে যায়, আগ্রহ কমে যায়, রিকানেক্ট করা যায় না। প্রযোজকের লগ্নি বাড়ে। একটা সিনেমা নির্মাণে নির্দিষ্ট সময় থাকা দরকার। একটা টাইম চেন থাকা দরকার।
অভিনয় নিয়ে কোনো অতৃপ্তি আছে কি না?
আমার কাছে মনে হয়, পূর্ণিমার সঙ্গে আমার জুটি ভালোভাবে এখনো কাজে লাগানো হয়নি। এটা একটা অতৃপ্তি। আমাদের দুজনকে আরও ভালোভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ আছে। এতে আমরা যেমন লাভবান হব, আমাদের সিনেমার জন্যও ভালো হবে। আমাদের যে ম্যাচুরিটি, যে রসায়ন—এই ব্যাপারগুলো কোনো পরিচালক পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে পারেননি। জানি না ‘আহারে জীবন’-এর মাধ্যমে এটা পূরণ হবে কি না। আর না হলে তো ওই...আহারে জীবন।
সরকারি অনুদানের সিনেমা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
চলচ্চিত্রের উন্নয়নের জন্য সরকার অনুদান দিচ্ছে। এটা দিয়ে অনেকে ব্যক্তিগত উন্নয়নে ব্যস্ত। কোনো সিনেমাই সময়মতো শেষ হয় না। সরকার আমাদের সাহায্য করছে, সহযোগিতা করছে। সময়মতো কাজ শেষ করা আমাদের দায়িত্ব। অনেকগুলো সিনেমা আছে ছয়-সাত বছর ধরে তৈরি হচ্ছে। এটা সিনেমায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। একটা সময় তো সেই সিনেমার গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। আমাদের ইচ্ছা ‘আহারে জীবন’ এক থেকে দুই মাসের মধ্যে শেষ করব। পরিকল্পনা আছে, অক্টোবর ও নভেম্বরে শুটিং করার। বাকিটা প্রযোজক যখন করেন আরকি।
আপনাকে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক প্রচারণায় দেখা যায়। ভবিষ্যতে রাজনীতিতে আশার ইচ্ছা আছে কি না?
মানুষের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য রাজনীতিতে আশার চিন্তাভাবনা আছে। সেটা যেকোনো সময় হতে পারে। ঠিক কোন সময় রাজনীতিতে আসব, সেটা জানি না। আমার ইচ্ছা, মানুষের জন্য ভালো কিছু করা। আমি যে অভিনয়টা করি, এতে মানুষ বিনোদন পায়। আমি আমার জায়গা থেকে মানুষের কল্যাণের জন্য যতটা পারি করি। আরও বৃহৎ আকারে করতে গেলে সে ক্ষেত্রে আমাকে রাজনীতিতে আসতে হবে।