শৈশব থেকেই নাজিয়া হক অর্ষার জন্মদিন উদযাপিত হতো ঘরোয়াভাবে। থাকত কেক, পেতেন উপহার। আগের মতোই এখনো দিনটি ঘরোয়াভাবেই পরিবারের সঙ্গে কাটছে। দিনটিতে ক্যারিয়ার, ভবিষৎ পরিকল্পনাসহ নানা প্রসঙ্গে কথা বললেন তিনি।
শুভ জন্মদিন। দিনটি কোথায় কাটছে?
ধন্যবাদ। জন্মদিন নিয়ে সেভাবে তো পরিকল্পনা থাকে না। বাসায়ই কাটছে। পরিবারের লোক, আমার স্বামী সবার সঙ্গে কাটছে। নিজের মতো করেই দিনটা কাটাতে চাই।
ফেসবুকে আপনার ব্যক্তিগত জীবন, আপনার অর্জন নিয়ে অনেকেই স্ট্যাটাস দিয়েছেন, সেগুলো দেখেন?
দেখা হয়। শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমাকে ভালোবাসেন। তাঁরা জীবন, কাজ, অর্জন নিয়ে লেখেন, এটা তো আনন্দের। এই যে সবাই এখন কত ব্যস্ত থাকেন। এর মধ্যে সময় বের করে আমাকে নিয়ে লিখেছেন, এতে মনে হয় আমার যোগ্যতার জন্য এই অর্জন প্রাপ্তির।
ভবিষ্যতে এটা করতে হবে, সেটা করতে হবে, এমন পরিকল্পনা কি মাথায় থাকে?
আমি কোনো পরিকল্পনা করে এগোতে চাই না। আমি যা অর্জন করেছি, তাতেই আমি খুশি। আমি কোনো কিছু নিয়েই হতাশ নই। আমি কারও সঙ্গে কাজ নিয়ে তুলনা করি না। তুলনা মানেই একটা হতাশার জায়গা, বিষণ্নতার জায়গা। তার চেয়ে আমি যা করেছি, করছিম তার মধ্যেই সুখ খুঁজি। এই জন্য আমার দর্শকেরা খাঁটি। আমি যা, সেটাকেই তাঁরা মূল্যায়ন করেন। প্রতিযোগিতায় গিয়ে জেনেবুঝে মানুষ হতাশ হবে কেন? এ কারণে যাঁর যেটুকু প্রাপ্তি, যেটুকু অর্জন, সেটা নিয়েই থাকা উচিত।
ইদানীং অনেক অভিনয়শিল্পী মূল জায়গা থেকে সরে ভাইরাল হওয়ার জন্য ভিন্নভাবে ফেসবুকে নিজেদের উপস্থাপন করছেন, এটাকে কীভাবে দেখেন?
এটাকে আমি ভালোভাবে দেখি না। ভাইরাল তো কেউ কাজের জন্য হবেন। অভিনেতা তাঁর অভিনয়ের জন্য হবেন। সেটা গঠনমূলক ও গ্রহণযোগ্য ইতিবাচক কাজের জন্য। আমি নিজের অভিনয়টা ঠিকমতো করছি, সেটা দেখে মানুষ আমাকে পছন্দ করছেন। সেটাই তো গ্রহণযোগ্য। কিন্তু আমি যদি নিজের কাজ ঠিকমতো না করি, অভিনয়ে মনোযোগ না দিই, অথচ আমি আউটলুক, শো–অফনেসে মনোনিবেশ করি, তাহলে ভাইরাল হওয়ার বিষয়টা বেশি দিন টিকে থাকে না। তাঁরা দু–এক বছর টিকবেন, তাঁর জায়গায় আরেকজন ভাইরাল চলে আসবেন।
মানসম্পন্ন কাজ দিয়েও অনেকে ভাইরাল হচ্ছেন...
মান দিয়েই তো ভাইরাল হওয়া উচিত। আবার ভাইরালের বিষয়টাও খুবই অনিশ্চিত। বুঝতে পারি না। কখনো হিরো আলম ভাইরাল হচ্ছে আবার অ্যালেন স্বপনও ভাইরাল হচ্ছে। ভালো কাজও ভাইরাল হচ্ছে। এটাই যে কখনো কোয়ালিটি ভাইরাল হয়, কখনো কোয়ানটিটি ভাইরাল হয়। দর্শক কখন কোনটাকে গ্রহণ করেন, আর কখন কোনটাকে ছেড়ে দেন, এটা বলা যায় না। আমার জায়গা থেকে মনে হয়, মানই ভাইরাল হওয়া উচিত। সেটারই স্থায়িত্ব থাকে। তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম ভালো কাজের জন্য তৈরি হবে, আগ্রহী হবে।
এখন তো তরুণেরাও অনেকে জ্যেষ্ঠ অভিনয়শিল্পীকে দেখে ভাইরালের পথে পা বাড়াচ্ছেন!
আমার কথা হচ্ছে, আমি অপ্রয়োজনীয় কোনো কিছু নিয়ে কখনো ভাবি না, মাতামাতিও করি না। এ জন্য সবাইকে বলে বা শিখিয়ে বোঝাতে পারব না। আপনি অন্যকে পরিবর্তন করতে যাবেন না। আপনার নিজের পরিবর্তন হলে আপনাকে যাঁরা পছন্দ করেন, তাঁরাও পরিবর্তিত হবেন। যে কারণে আমি এমন অগ্রহণযোগ্য কিছু করি না। ভুলভাল ভাইরাল স্রোতে গা ভাসিয়ে দেওয়া পছন্দ করি না। আমি এর মধ্যে নেইও। যা আমি করি না, সেখানে নাক গলানোও আমার অপছন্দ।
এ সময়ের তরুণ অভিনয়শিল্পীদের ভবিষৎ কী বা তাঁরা সঠিক পথে আছেন কি না বা তাঁদের দিকনির্দেশনা কী হওয়া উচিত, এখানে আপনার জায়গা থেকে কী করার আছে?
এখানে আমার জায়গা থেকে সচেতন থাকার চেষ্টা করি। আমার মন-মানসিকতার সঙ্গে মেলে, এমন সহকর্মী পেলে তাঁদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করা সম্ভব হলে, কথা বলি। আমরা তো চাই, টিকে যাবেন, এমন অভিনয়শিল্পী তৈরি হোক।
আপনার মেধা ও যোগ্যতার তুলনায় আরেকটু ব্যস্ত থাকা দরকার ছিল, এমনটা মনে হয় না?
মনে হয় না। বেশি ব্যস্ত থাকলে আমার প্রতিটি কাজ নিয়ে কমবেশি আলোচনা হতো না। তখন সবাই বলতেন, একই রকম চরিত্রে আমাকে দেখা যায়। আবার যে কাজ নিয়ে আলোচনা হয়, পরে দেখা যায়, সবাই সে ধরনের চিত্রনাট্যই আমার সামনে নিয়ে আসেন। এভাবে কি সংখ্যা বাড়াব? সংখ্যা বাড়লে আমাকে নিয়ে আলোচনা হতো না। এ জন্য মেধাবী শিল্পীর পাশাপাশি মেধাবী নির্মাতা লাগবে, ভালো ভালো প্ল্যাটফর্ম লাগবে। এখন ‘সাবরিনা’ জনপ্রিয়তা পেলে আরও ১০টা সাবরিনার মতো গল্প নিয়ে আসেন। সেটা না করে শিল্পীদের নিয়ে ভিন্ন কিছু পরিকল্পনার মানুষ দরকার। সেখানেও আমাদের ঘাটতি রয়েছে।
নিজেকে ভিন্নভাবে ধরে রাখাটাও চ্যালেঞ্জিং মনে হয় কি না?
এটা অনেক চ্যালেঞ্জিং। আমি মানুষটা তো অর্ষাই। আমি যতই চুলের রং করি, যতই মেকআপ পরিবর্তন করি না কেন, পুরো মানুষটাকে তো পরিবর্তন করা সহজ নয়। এমনকি সেটা হওয়ার জন্য যে সময় দেওয়া দরকার, আমাদের ইন্ড্রাস্টিতে সেই সময় দেওয়া হয় না। এখানে একটা চরিত্র থেকে আরেকটা চরিত্রে যেতে হয়।
সাক্ষাৎকার: মনজুরুল আলম, ঢাকা