মাত্র আড়াই বছর বয়সে নৃত্যের সঙ্গে যুক্ত হন। সাত বছর বয়স থেকে অভিনয়ে। আজ তিনি ৭৫ বছর শেষ করে ৭৬–এ পদার্পণ করলেন। তিনি বাংলাদেশের প্রখ্যাত নৃত্য ও অভিনয়শিল্পী লায়লা হাসান। এই মুহূর্তে তিনি আছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় কথা হলো তাঁর সঙ্গে
শুভ জন্মদিন।
ধন্যবাদ। জন্মদিন অবশ্যই আনন্দের দিন। এই দিনে পৃথিবীতে এসেছি। আস্তে আস্তে সুন্দর পৃথিবীকে দেখা শুরু করেছি। তাই প্রথমে সৃষ্টিকর্তা, তারপর মা–বাবার কাছে কৃতজ্ঞতা। কারণ, সুন্দর একটা পরিবেশেও বড় হয়েছি। টিকাটুলীর অভয় দাস লেনে আমাদের বাড়ি ছিল, বাড়িতে রাজনীতি ও সংস্কৃতিচর্চা—দুটোই ছিল। নানা, মামা-মামি—সবাই রাজনীতি করতেন। মা–বাবা দুজনই সংস্কৃতির চর্চা করতেন। বাড়িতে যত অনুষ্ঠান হতো, ওই সময়ের সংস্কৃতি অঙ্গনের শীর্ষ পর্যায়ের সবাই থাকতেন। আমার নানার বন্ধু ছিলেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, বেগম সুফিয়া কামাল। আমরা এক পাড়ায় ছিলাম। তাঁদের ছেলেমেয়েরাও আমাদের বন্ধু ছিল। চমৎকার পরিবেশে বড় হয়েছি।
ছোটবেলায় জন্মদিন কি পালন করা হতো?
পালন করা হতো। তবে বাসায় কেক কাটা হতো না। ভালো রান্নাবান্না হতো। নতুন একটা ফ্রক পরতাম। রান্নাটা সব সময় স্পেশাল হতো। বন্ধুবান্ধব আসত। বই উপহার পেতাম। বিয়ের পর তো স্বামীর কাছ থেকে উপহার পেতাম। ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন ও ননদেরা আসত। আমাকে রান্নাটা করতেই হতো। যখন বাচ্চারা বড় হলো, তারা কেক কাটার প্রচলন করল। ঠিকই রাত ১২টার সময় বাড়ির লাইট অফ, আমি তখন দোতলায় থাকতাম। মেয়ে সংগীতা ছোট–বড় সবাইকে এক করে মোমবাতি জালিয়ে ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ গাইতে গাইতে ওপরে উঠে আসত। শুধু আমার নয়, ওর দাদা-দাদি, ভাই, বাবা—সবার ক্ষেত্রে এমনটা হতো। বাচ্চারা যতই বড় হতে থাকল, ততই মা–বাবাকে এই দিনে চমকে দিতে চাইত। এখনো করে, যদিও পশ্চিমা কালচার, তারপরও আনন্দ লাগে।
জন্মদিনে আপনাকে নিয়ে ফেসবুকে নানা কিছু লেখেন ভক্তরা, দেখা হয়?
আমি দেখি। খুব ভালো লাগে। উত্তরও দিই। এত ভালোবাসা পাই, আমি তো অবাক হয়ে যাই। এত ভালোবাসার কি আমি যোগ্য! এই দিনে আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগার ব্যাপার হচ্ছে, ফজিলাতুন্নেছা মুজিবেরও এই দিনে জন্মদিন। এটা ভাবলেই খুব আনন্দ পাই। আমি খুবই সৌভাগ্যবান এ জন্য যে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর লেখা পলাশী থেকে ধানমন্ডি নাটকে বেগম মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করেছি, সৈয়দ হাসান ইমাম সাহেবের পরিচালনায়। নাটকটি ২০০৪ সালে লন্ডনে মঞ্চস্থ হওয়ার সময় শেখ রেহানা দেখতে এসে কান্নাকাটি করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রেও এই নাটকের শো করেছিলাম। নবাব সিরাজউদ্দৌলা থেকে শুরু করে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত এ নাটকের বিষয়বস্তু ছিল।
বেগম মুজিবের সঙ্গে কি আপনার দেখা হয়েছিল?
আমার মামি নূরজাহান মুর্শিদ তো বঙ্গবন্ধুর ক্যাবিনেটে মন্ত্রী ছিলেন। সেই সূত্রে কয়েকবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসায় গিয়েছি। আমার মামাতো বোনের বিয়ের দাওয়াত করতেও গিয়েছিলাম। খাবার টেবিলে বেগম মুজিবের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। আমি তাঁর ভীষণ আদর ও স্নেহ পেয়েছি। দেখা হলেই বলতেন, দেখছি দেখছি, তোমার নাচ দেখছি। ভালো নাচো তো। সব সময় উৎসাহ দিতেন। বড় মনের মানুষ ছিলেন তো, খুবই সাধারণ ও সহজ–সরলভাবে চলতেন।
আপনি ফেসবুকে সক্রিয়। আপনার সমসাময়িক কাউকে এতটা দেখা যায় না।
আমি সময়ের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করি। যদিও সব সময় পারি না। আজকাল বাচ্চারা তো অনেক এগিয়ে গেছে। একটুখানি মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা আরকি। যদিও নানা ব্যস্ততার মধ্যে থাকি। তারপরও মেসেঞ্জারে যারা আমাকে কিছু লেখে, উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি। কেউ কিছু লিখলে, উত্তর না দিলে খারাপ লাগে। আমার সবচেয়ে ভালো লাগে, অনেক দিন আমি দেশে নেই, তারপরও অনেকে নানা সময় ফোন করে বলে, রোজী আপা (লায়লা হাসানের ডাকনাম), আপনি দেশে নেই। আপনি থাকলে পরিস্থিতি এ রকম হতো না। অনেকে আমাকে আশ্রয়স্থল মনে করে। বড়রা তো আছেনই মাথার ওপর। ছোটরা যে আমাকে আশ্রয়স্থল মনে করে, এটা অনেক বড় পাওয়া।