চরকিতে আজ মুক্তি পাচ্ছে ওয়েব সিরিজ ‘প্রচলিত’-এর নতুন পর্ব ‘কলিংবেল’। এতে অভিনয় করেছেন তরুণ অভিনয়শিল্পী সাদিয়া আয়মান। এই সিরিজসহ নানা প্রসঙ্গে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে কথা বলল বিনোদন
শুটিংয়ে, নাকি বাসায়?
শুটিং করছি। আমার জন্মস্থান বরিশালে। এর আগে বরিশালে এই পরিচালকেরই (সুব্রত কুমার সন্ধি) আরেকটি নাটকে অভিনয় করেছি। এবার একসঙ্গে দুটি নাটকের কাজ করেছি। পরিচালক নিজেও বরিশালের মানুষ। বরিশালভিত্তিক কাজগুলোই করেন। ঢাকায় যান না। তাঁর খুব ভালো কিছু প্রোডাকশন আছে।
বারবার বরিশালে শুটিং কেন, পরিচালকের কাছে জানতে চেয়েছেন?
তাঁরও হয়তো নিজের জন্মস্থানে কাজ করতে ভালো লাগে। আমারও ভালো লাগছে। দেখা যায়, উত্তরায় সেই একই ফ্রেম, একই রাস্তাঘাট-নতুনত্ব কিছু নেই। এখানে যেখানেই ক্যামেরা ধরছে, সেখানেই সুন্দর সব ফ্রেম। দারুণ ভিউ পাওয়া যায়। নাটকে আমার চরিত্রটা একদমই ‘র’। বরিশালের ভাষায় কথা বলতে হচ্ছে। ‘ইলিশের গন্ধ’ নাটকে আমি একজন আচার বিক্রেতা। আমার সহশিল্পী সৈয়দ জামান শাওন ইলিশের আড়তে কাজ করেন। শুটিং করতে গিয়ে ঘটেছে মজার ঘটনাও।
কী সেটা?
আমরা ইলিশের অরিজিনাল আড়তে কাজ করছি। গত সোমবার যখন শুটিং করছিলাম, কয়েকটা বাচ্চা আসছে। বলছে, আপু ৫ টাকার আচার দাও তো। ওরা বিশ্বাস করছিল, আমি সত্যিই আচার বিক্রেতা। এ রকম কয়েকবার হয়েছে। ভালো লাগছে। বরিশালে কাজ করেও আরাম। মানুষজনও ভীষণ আন্তরিক। যেখানে আমি শুটিং করছি, সব আমার চেনা জায়গা। আমার সহশিল্পীকে বলছিলাম, মেডিকেলের এই জায়গায় আমার অনেক স্মৃতি। কিন্তু কখনো ভাবিনি, এখানে শুটিং করব। আগে একভাবে জায়গাগুলো দেখেছি, এখন দেখছি ভিন্ন চোখে।
এগুলো সব কি ঈদের নাটক?
এই পরিচালকের তিনটি নাটকই ঈদে প্রচারিত হবে। কয়েক মাস আগে শেষ করেছি ‘রূপগঞ্জ’। এখন যে দুটি করছি, একটির নাম ‘ধানসিঁড়ি’ অন্যটি ‘ইলিশের গন্ধ’।
বরিশাল আপনার জন্ম কোথায়?
আমি বরিশাল শহরে জন্মেছি। বেড়ে ওঠাও এখানে। ২০ বছর পর্যন্ত এখানে থেকেছি। এরপর পড়াশোনা করতে ২০১৯ সালে ঢাকায় চলে আসি।
বরিশাল তো ইলিশের জন্য ভালো বিখ্যাত। সহশিল্পীকে আপনার বাড়িতে দাওয়াত করে ইলিশ খাইয়েছেন?
আমি শুটিংয়ে তো, তাই খাওয়াতে পারিনি। বাসায়ও যেতে পারিনি। আম্মুর হাতের রান্না করা ইলিশও খেতে পারিনি। কিন্তু আমাদের পরিচালক সুব্রতদা ইলিশপ্রেমী। এর আগেও শুটিংয়ে যখন এসেছিলাম, তিনি আমাদের বড় বড় ইলিশ খাইয়েছেন। খুবই ফ্রেশ। সেবার তো বউদি (পরিচালকের স্ত্রী) নিজের হাতে রান্না করে শর্ষে ইলিশ, পাটের শাক দিয়ে ডালসহ আরও কত কত মজার খাবার খেয়েছি। এবার বউদি কিছুটা অসুস্থ, তারপরও দুদিন আমাদের পাটের শাকের ডাল রান্না করে পাঠিয়েছেন।
আপনি বুঝি খেতে খুব পছন্দ করেন?
আমি খুব বেশি খেতে পছন্দ করি না। তবে বাঙালি খাবার বেশি ভালো লাগে। জাংক ফুড খুব একটা পছন্দ নয়। ভাতই আমার আমার লাগে। দিনে যদি একবারই ভাত খাই, সেটা প্রপারলি খেতে চাই আরকি। ভাতের সঙ্গে ভর্তা, শাকসবজি, মাছ, আলুভর্তা, চড়চড়ি আর পাতলা ডাল, সঙ্গে বোম্বাই মরিচ থাকবে। বরিশালের মানুষ তো বোম্বাই মরিচের ফ্যান।
আপনি নিজে রান্না করতে পারেন?
দেশীয় রান্না সব করতে পারি। ভর্তা, ভাজি, মাছ, ডাল, মাংস, পোলাও। রিচ ফুড বেশি পারি না। আমার রান্না করা খাবার খেয়ে আম্মু খুব বেশি কিছু একটা যদিও বলে না। তবে আব্বু খেয়ে আম্মুর কাছে রান্নার প্রশংসা করে। যদিও সামনাসামনি করে না। আমি যখন আব্বুকে জিজ্ঞেস করি, ‘কার রান্না ভালো লাগে?’ তখন বলে, ‘তোমার আম্মুর রান্না ভালো।’ আমি সরে গেলে আবার আম্মুর কাছে জানতে চায়, ‘ও এত ভালো রান্না শিখেছে কীভাবে।’ আমার আব্বুকে প্রথম ডিম ভুনা ও দেশি মুরগি রান্না করে খাইয়েছি। আব্বু এটা আম্মুর কাছে ফোন করে বলেছিল।
রান্না কি ঢাকায় এসে শিখেছেন?
ঢাকায় এসেই শিখেছি। নিজের রান্না একটু পচা হলেও খেতে ভালো লাগে। এখন অবশ্য ভালোই রান্না করতে পারি।
আজ চরকিতে আপনার একটা কনটেন্ট প্রচারিত হবে...
কাজটা করে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। আমি তো একটু রোমান্টিক ধাঁচের কাজ করি। অভিনয়ও যে নিয়মিত করছি, বেশি দিন হয়নি। ‘মায়া শালিক’-এর পর নিয়মিত হয়েছি। ‘কলিংবেল’-এ আমার চরিত্রটা ভিন্ন। এটাতে রোমান্স আছে, সাসপেন্সও আছে। আমিও ভিন্নভাবে করার চেষ্টা করেছি। লুক ও অ্যাক্টিং ওয়াইজ আমাকে অন্যভাবে দেখা যাবে। আশা করছি সবার ভালো লাগবে। চরকির সঙ্গে সেকেন্ড কাজ, দারুণ অভিজ্ঞতা।
সাদিয়া আয়মানকে বাড়ির মানুষ কী নামে ডাকে?
আমাকে বাসার সবাই সাদিয়া বলেই ডাকে। আম্মু মাঝেমধ্যে আদর করে সাদুমনি বলে ডাকে। যখন খুব মুড ভালো থাকে।
মা কি সাদিয়া ওপর রাগও করে নাকি?
এখন অবশ্য আর রাগ করে না, অভিমান করে। অভিমান করলে কথাবার্তা কম বলে। আম্মু সব সময় আমাকে নিয়ে টেনশন করে। যেহেতু সব সময় কাছে থাকতে পারে না, তাই টেনশনটা বেশি। আম্মুকে বলি, আমার তো কাজ আছে। দেখা গেল সকালবেলা বাসা থেকে কাজে বের হচ্ছি, রাতে কখন আসব, জানি না। একটা-দুইটাও বেজে যায়। এটার জন্য টেনশনটা বেশি। পরে অবশ্য আবার ঠিক হয়ে যায়। তখন আমি বুঝিও।
মায়ের সাদুমনিকে ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্ল্ডে যেন কি নামে ডাকে?
অনেকে বলে আমার চেহারার সঙ্গে আলিয়া ভাটের মিল আছে। তাই আমাকে সবাই আলিয়া ভাট বলে ডাকেন। তাঁদের বক্তব্য, আমাকে দেখতেও তাঁর মতো, অভিনয়ও নাকি তাঁর মতোই করি। এসব শুনতে আমার খুব ভালো লাগে। কারণ, আলিয়া ভাট আমারও ভীষণ পছন্দের একজন তারকা। আমার তো ওঁর অভিনয় দারুণ লাগে। তারকা হিসেবে তাঁর বিভিন্ন ইন্টারভিউ দেখেও ভালো লাগে। এত বড় ট্যালেন্টেড অভিনেত্রীর সঙ্গে যদি আমার তুলনা দেওয়া হয়, তাহলে তো ভালো লাগবেই। দ্বিতীয়ত, আমাকে হুমায়ূন আহমেদের কন্যা শীলা আহমেদ, যিনি আমার ভীষণ ভীষণ প্রিয়, তাঁর সঙ্গেও অনেকে তুলনা করেন। আবার এমনও শুনি, হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকলে নাকি আমাকে নিয়ে অবশ্যই কাজ করতেন। অনেক রকমের প্রশংসা পাই। আমিও অনুপ্রাণিত হই।
আচ্ছা আলিয়া ভাটের জীবনে রণবীর কাপুরের দেখা কি মিলেছে?
(হাসি)। আমি জানি না, রণবীর কাপুর বা যে-ই হোক, যখন সময় হবে তখন আসবে। এখনো সেই মানুষের খোঁজ পাইনি।
গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘কাজলরেখা’য় অভিনয় করেছেন...
হুম। শুনেছি, এটি ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পাবে। বড় পর্দায় এটাই আমার প্রথম কাজ। বিজ্ঞাপন থেকে সরাসরি সিনেমার ক্যামেরার সামনে, তাই একটু নার্ভাস ছিলাম। সেলিম ভাই ন্যাচারাল অভিনয় পছন্দ করেন, ভয়ে ছিলাম কীভাবে কী করব। আশা করছি এটি আমার অভিনয়জীবনের উল্লেখযোগ্য সংযোজন হবে।