চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন ঘিরে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমান সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক ডিপজলের সঙ্গে সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিপুণের দ্বন্দ্ব এখন চরমে ও দৃশ্যমান। এরই মধ্যে নিপুণ বর্তমান কমিটির কার্যক্রম পরিচালনায় স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন। এমন খবর জানার পর, বেশ চটেছেন মিশা ও ডিপজল। এসব নিয়ে আজ শনিবার বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টায় যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলস থেকে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন নিপুণ। প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য সেই কথোপকথন তুলে ধরেছেন মনজুর কাদের।
শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর আপনার করা রিট প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘যিনি সংবিধানকে ক্ষত–বিক্ষত করেছেন, তাঁকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বুঝিয়ে দেব শিল্পী সমিতির সংগঠন কী? এবার শিল্পী সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কে? এবার শিল্পী সমিতির কেবিনেটটা কী?’ অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক ডিপজল বিরুপ মন্তব্য করেছেন। এ ব্যাপারে আপনার কোনো বক্তব্য আছে কি?
নিপুণ: এসব নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আমার আদালতে দেখা হবে। যেহেতু আমি হাইকোর্টে রিট করেছি, তাই এসবের জবাব সেখান থেকে আসবে। কারণ, কথা যত বলব, ততই কথা বাড়বে, তা–ই না। যেহেতু আমি অনিয়ম নিয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় হেঁটেছি, তাই আইনিভাবে সব মোকাবিলা হবে। তবে একটা কথা বলব, মূর্খ লোকদের সঙ্গে কথা বলার একদমই ইচ্ছা আমার নেই।
আসলে আপনি কাদের মূর্খ বলতে চাইছেন?
নিপুণ: অবশ্যই মূর্খ মিশা-ডিপজল দুজনেই। তাঁদের সঙ্গে কথা বলার কোনো ধরনের ইচ্ছাই আমার নেই। তা ছাড়া মিশা ভাই তো ভীষণ মিথ্যুক একজন মানুষ। ওনাদের সঙ্গে এখন এই বিষয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে কথা হবে। এটাই সবচেয়ে ভালো উপায়।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে কবে ফিরবেন?
নিপুণ: আমার ফিরতে একটু সময় লাগবে। আমার মেয়ে তানিশা মাস্টার্সে ভর্তি হবে। তাঁর ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ হতে একটু সময় লাগবে। সব গুছিয়ে দিয়ে তবেই ফিরব। তবে এর মধ্যে আইনি ব্যাপারগুলো চলবে। সমিতি সমিতি করে তো দুই বছরের বেশি অনেক সময় দিলাম। সমিতিটা যে কোথায় পিছিয়ে আছে, তা কারোর চিন্তায় নেই। এই বিষয়ে সবাইকে ভাবতে হবে, এই ধরনের সংগঠন কীভাবে চলছে, চলা উচিত। নইলে সমিতি নিয়ে ওনারা কেউ কাজ করতে পারবেন না। শুধু গ্রিনকার্ড নিয়ে আমেরিকায় বসে থাকলে চলবে না। আমি কিন্তু আমেরিকা থেকে গ্রিনকার্ড ছেড়ে বাংলাদেশে এসেছি। নায়িকা হয়ে আমেরিকার ভিসা করাইনি। ২৪ বছর যখন ফিল্মে আসিনি, তার আগেই আমি গ্রিনকার্ড পেয়েছিলাম। আমি কিন্তু এই জায়গাগুলো ও বিলাসীজীবন ছেড়ে বাংলা ছবিতে নাম লিখিয়েছি। আজ আমার যা কিছু অর্জন, সবকিছু এই বাংলা ছবি থেকে।
আচ্ছা ডিপজল যে বললেন, আপনি রক্তকে অস্বীকার করেছেন, বিষয়টা আসলে কী?
নিপুণ: একটা বিষয় দেখেন, শিল্পী সমিতির ফলাফল ঘোষণার সময় যখন প্রেস ব্রিফিং হচ্ছিল, তখন আমি কয়েকটি কথা বলেছি। প্রথমত, আমি চিন্তাও করিনি, ডিপজল সাহেবের বিপরীতে আমি যখন দাঁড়াব, ভোট পাব সর্বোচ্চ ৫০টি, সেখানে ভোট পেলাম ২০৯টি। হেরেছি মাত্র ১৬ ভোটে। এতেই প্রমাণ হলো যে শিল্পী সমিতির ভাই–বোনেরা আমাকে কতটা ভালোবাসেন। এত সম্মান দেওয়ার জন্য তাঁদের ধন্যবাদ জানাই। এমনকি সেদিন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্য নিজেকেই কৃতিত্ব দিয়েছি। আমি কি ওখানে ডিপজলকে (ভাই) বলেছি, তিনি আমার বাবার মতো! আসলে আমি সেখানে তাঁকে এই ধরনের কোনো কথাই বলিনি। কেন আমি ওই কয়েকটা কথা বলেছি, তা শুধু আমিই জানি। সকাল সাতটা পর্যন্ত আমি জানিই না, এত ভোট পেয়েছি। আমি তো বলব, ১৯ তারিখ রাতটা ছিল কালরাত। ওই রাতটা ডিপজল-মিশাবাহিনী পুরো এফডিসিকে দখল করে যা ইচ্ছা, তা–ই করল। এটা কখনো কোনো শিল্পীদের জায়গা হতে পারে না। শিল্পীদের জায়গা হবে খুবই নমনীয়তার, ভদ্রতার। উনি যে এখন বলছেন, তিনি ভদ্র ব্যবহার চান, তিনি কি আদৌ কোনো ভদ্র ব্যবহার করেছেন আমার সঙ্গে?
কী অভদ্র ব্যবহার করেছেন আপনার সঙ্গে?
নিপুণ: কী অভদ্র ব্যবহার করেননি? কোনো সৌজন্যতা দেখায়নি তাঁরা। শেষ দুই বছর তাঁরা তো এফডিসি–সমিতিতে আসেননি। শেষ দুই বছর ধরে যে বেয়াদব ছেলেটা ছিল, যেটাকে বেয়াদব বলতে হয়, যার নাম জায়েদ খান, সে যা ইচ্ছা মিডিয়াতে বলে বেড়াচ্ছিল, তখন তাঁরা কোথায় ছিলেন। এই বেয়াদবকে কি থামিয়েছেন? তখন কি তিনি বলেছেন, আমরা কিন্তু ভদ্রতা চাই, সুষ্ঠুতা চাই। তার মানে কী দাঁড়ায়, তাঁরা বেয়াদবিটাই পছন্দ করেন।
ডিপজল সরাসরি আপনাকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন...
নিপুণ: আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, একজন বিসিএস ক্যাডারও। তাই ওনার (ডিপজলের) মতো লোকদের নিয়ে আমি কথাই বলতে চাই না। উনিও আমার সঙ্গে কথা বলার যোগ্যতা রাখেন না। সিনেমায় অভিনয় করতে এসেছি বলে ওনার মতো মানুষ নিয়ে কথা বলছি। নয়তো তাঁর মতো লোককে নিয়ে কথা বলার প্রশ্নই আসত না। আমার লস অ্যাঞ্জেলেসের বন্ধুরা তো হাসে, বলে, ‘হু ইজ ডিপজল? সে কী করে? সিনেমায় তাঁর কী অবদান, অশ্লীলতা ছড়ানো ছাড়া? তাঁর সময় তো সিনেমা অশ্লীলতায় ছেয়ে যায়।’ সিনেমায় না এলে আমিও হয়তো আমার এসব বন্ধুদের মতো ওনাদের নাম শুনলে হাসতাম, নাক সিঁটকাতাম! আজ আমি ফিল্মে আসছি বলেই হয়তো আমার নাম নিয়ে কথা বলতে পারতেছেন। কিন্তু এটাও সত্য, আমাদের মতো মানুষ এই সেক্টরে না থাকলে এই অঙ্গন ঠিক হবে না। আমাদেরকে আসতে হবে। ফাইট করতে হবে। কাউকে না কাউকে কথা বলতেই হবে। নইলে অনিয়ম, অপরাধ আরও বাড়বে। আরেকটা কথা, এই ধরনের অপরাধী সংখ্যায় কম। তাঁরা বুঝে না বুঝে চিৎকার–চেঁচামেচি ও উল্টাপাল্টা এবং অসম্মানজনক কথা বলে বেড়ান, যাতে প্রকৃত কোনো শিল্পী এখানে না আসেন। প্রকৃত শিল্পীরা একত্র হলে, তাঁরা কিন্তু পালাবেন। এটাও সত্য, আমার কাছে ওনার কথার কোনো ভ্যালু নেই। আগে তো এই মানুষকে ভ্যালু দিতে হবে, তারপরই না তাঁকে নিয়ে ভাবব।
ডিপজলের কথা শুনে তাৎক্ষণিকভাবে কী মনে হয়েছে?
নিপুণ: ওনার (ডিপজলের) মুখ থেকে এর চেয়ে ভালো ভাষায় কথা আশা করাটাই তো বোকামি। ওনার মুখ থেকে কী, ওকে, উই সি ইউ বা আমরা আদালতে গিয়ে কথা বলব, এগুলো শুনবেন? ওই যে বললাম, মূর্খ, মূর্খের কাছ থেকে তো এমন ভাষায় কথা বের হবে।
চলচ্চিত্রের মানুষদের মধ্যে এই যে কাদা–ছোড়াছুড়ি হচ্ছে, এসবে তো সাধারণ মানুষের হাসির খোরাক হতে হচ্ছে?
নিপুণ: তা তো হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, উনি (ডিপজল) যদি নিজেকে শিল্পী দাবি করেন, তবে তাঁর সিনেমা হলের জায়গায় বার বানাতেন না। আমার যদি ওনার মতো একটা সিনেমা হল থাকত, তাহলে আমি সেখানে কী করতাম? অবশ্যই সেখানে সিনেপ্লেক্স বানাতাম। সময়োপযোগী কিছু করতাম। আমি সেখানে মোটেও মদের বার বানাতাম না। বেশি টাকার লোভে ভাড়া দিতাম না।
এটা কবে থেকে জানেন আপনি?
নিপুণ: অনেক দিন ধরে জানি। আমার কথা হচ্ছে, আমাকে আপনি খোঁচাতে আসবেন না, আমিও খোঁচাব না।
এই বিষয়টা এত দিন বললেন না কেন?
নিপুণ: ডিপজল ভাইকে অনেকবার বলেছি। অনুরোধও করেছি। তাঁর সামনেও বলেছি, ডিপজল ভাই আপনি আপনার এশিয়া সিনেমা হলটাকে সিনেপ্লেক্স করছেন না কেন? জবাবে তিনি বলেছেন, আরে না না, সিনেপ্লেক্স চলবে না।