সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য দুই বছরের শিল্পকলা একাডেমি পদকপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। যন্ত্রসংগীতে ২০২২ সালের এ পদক পাচ্ছেন ব্যান্ড ফিডব্যাকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সংগীত পরিচালক ফোয়াদ নাসের বাবু। শিল্পকলা একাডেমি পদকপ্রাপ্তির ঘোষণার পর সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে কথা বলল ‘বিনোদন’
শিল্পকলা একাডেমি পদকপ্রাপ্তদের তালিকায় আপনার নাম দেখে কেমন অনুভূতি হয়েছে?
ফোয়াদ নাসের বাবু: প্রথমত, আমি বিস্মিত। আমার মনে হয়, আমি তো আসলে সে রকম কাজ করতে পারিনি। তবে এই অঙ্গনে আমার অবস্থান দীর্ঘ। শিল্পের এই পথচলায় রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এত বড় একটা স্বীকৃতি বিরাট প্রাপ্তি।
এ ধরনের সম্মাননা কতটা অনুপ্রেরণার বলে মনে করেন?
ফোয়াদ নাসের বাবু: অবশ্যই অনেক অনুপ্রেরণার। দীর্ঘদিন কাজ করার পর একটা ক্লান্তি চলে আসছিল, এখন মনে হচ্ছে সব ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে জেগে উঠতে হবে। নতুন করে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। দায়িত্বও বেড়ে গেল। মনে হয়, এই সম্মাননাপ্রাপ্তি সংগীতে আমার পথচলা আরও গতিশীল করবে।
নতুন কী করতে চান?
ফোয়াদ নাসের বাবু: গান ছাড়া তো আর কিছুই শিখিনি। নতুন করে আবার গানের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। নতুন কয়েকটি গান করছি। থিম সং করে থাকি। তবে বিজ্ঞাপনচিত্রের কাজ এখন সেভাবে করা হচ্ছে না।
নতুন গানগুলো কারা গাইছেন?
ফোয়াদ নাসের বাবু: নতুন একজন শিল্পীর জন্য গান বানালাম, তিনি দেশের বাইরে থাকেন। এ ছাড়া গীতিকবি গোলাম মুরশিদ ভাইয়ের লেখা একটা গান বানালাম, তিনি বেশ কিছুদিন ধরে খুব করে চাইছেন, আমি যেন সেই গানটা গাই। তিনি ভীষণ রসিক মানুষ। তাঁর লেখা প্রথম কোনো গান গাওয়া হবে আমার।
আপনি তো অনেক বছর নিজে গাননি...
ফোয়াদ নাসের বাবু: একদমই তা–ই। ফিডব্যাকের জন্য একটা গান গেয়েছিলাম, ‘মন মুনিয়া’ শিরোনামে, তা-ও ২০-২২ বছর হবে। এত বছর পর গাইছি ‘ভালোবেসে’ শিরোনামের আরেকটি গান। আমি নিজেও খুব এক্সাইটেড গানটি নিয়ে। দ্বৈত কণ্ঠের এই গানে আমার সহশিল্পী যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সালমা। এরই মধ্যে তিনি গানটি গেয়ে পাঠিয়েছেন। মাসের শেষ দিকে গানটি প্রকাশের পরিকল্পনা। এটা পুরোপুরি রোমান্টিক ধাঁচের গান।
খুব সম্ভবত এটি আপনার গাওয়া প্রথম কোনো দ্বৈত কণ্ঠের গান হতে যাচ্ছে...
ফোয়াদ নাসের বাবু: সত্যিই তা–ই। তবে মনে হচ্ছে, গানটা দারুণ হয়েছে। এই শিল্পী এর আগে বাপ্পা মজুমদার ও লাকী আখান্দ্ ভাইয়ের সুরে গান গেয়েছেন।
যে যন্ত্রসংগীতে শিল্পকলা একাডেমি পদক পাচ্ছেন, তা নিয়ে আপনার বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে?
ফোয়াদ নাসের বাবু: আমাদের দেশে যন্ত্রসংগীতের এই ক্ষেত্রটা তো অনগ্রসর। সর্বশেষ বড় পরিসরে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সময় ১০০ যন্ত্রশিল্পী নিয়ে একটা কাজ করা হলো। এটা অনেক বড় কাজ। এতজন যন্ত্রশিল্পী নিয়ে রেকর্ডেড নয়, লাইভ বাজানো অনেক বড় বিষয়, এটা কিন্তু করা হয়েছে। এখন তো ১০০ জন যন্ত্রশিল্পী পাওয়াও মুশকিল। যন্ত্রশিল্পীদের নিয়ে অনেক কাজ করতে চাই। আমাদের ভালো প্রতিষ্ঠানও দরকার, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাও দরকার। দেশের বাইরে থেকে কাউকে এনে হলেও। যে অবস্থা চলছে, বিভিন্ন যন্ত্রানুষঙ্গও তো কয়েক বছর পর আর খুঁজেও পাওয়া যাবে না। দুর্লভ হয়ে উঠছে যন্ত্রানুষঙ্গ আর বিপন্ন প্রজাতির মতো হবে যন্ত্রশিল্পীরা। তবে শিল্পকলা একাডেমি চাইলে যন্ত্রশিল্পী তৈরি ও যন্ত্রানুষঙ্গ নিয়ে কাজ করতে পারে। বাংলাদেশ বেতার কিন্তু বাইরে থেকে প্রশিক্ষক নিয়ে কাজ করেছে, অনেককে স্টাফ নোটেশনে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। পিয়ানো ও ভায়োলিন বাজানো শিখিয়েছে। এ রকম যদি শিল্পকলা একাডেমি উদ্যোগ নেয়, তাহলে হয়তো ভালো কিছু হবে। আমরা যারা আছি, তারা যুক্ত হয়ে এদিকটা এগিয়ে নিতে হবে। আমরা অবশ্য একবার বামবা (বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশন) থেকে এ রকম একটা উদ্যোগের কথা ভেবেছিলাম, কিন্তু বামবা হলে হয় কি, একটা গ্রুপ অব ইনস্ট্রুমেন্ট হয়ে যায়—ড্রামস, কি-বোর্ড, গিটার। পাশ্চাত্য মিউজিক। আমরা চাইছি শিকড়ে ফিরে যেতে। আমি দেখেছি, অনেক আগ্রহী আছে, যারা শিখতে চায়, নানান যন্ত্রানুষঙ্গ বাজাতে চায়। মানুষেরও কিন্তু যন্ত্রানুষঙ্গে আগ্রহ আছে।
ফিডব্যাকের কী খবর?
ফোয়াদ নাসের বাবু: নির্বাচনের কারণে স্টেজ শো থেমে ছিল। তবে ছোট পরিসরে মহড়া চালিয়েছি। এখন আবার পুরোদমে চলছে। নতুন গান বানাচ্ছি। একটা-দুটো করে। গান বানানো থামানো যাবে না। শিগগিরই নতুন গান প্রকাশ করব।