নতুন করে আবার কাজে ফিরেছেন অ্যালেন শুভ্র। সাম্প্রতিক ব্যস্ততা, ক্যারিয়ারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে এই অভিনেতার মুখোমুখি হয়েছিলেন নাজমুল হক
বিরতি নিয়েছিলেন কেন?
অ্যালেন শুভ্র : একবারেই কাজ করিনি, তা কিন্তু নয়। তবে খুব কম হয়েছে। যেগুলো হয়েছে, সেগুলোও নির্মাতারা অনেক দেরিতে মুক্তি দিয়েছেন। ফলে সবার মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে, অ্যালেন বিরতিতে, কাজ কম করে। এ জন্য আমাকে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে।
আপনি বৈচিত্র্যময় চরিত্রে কাজ করতে চান। এ কারণেই কি কাজের সংখ্যা কম?
অ্যালেন শুভ্র : একটি নাটক যখন খুব জনপ্রিয়তা পায়, তখন সবাই সেটাকে আদর্শ মেনে পরিকল্পনা করেন। সবাই আমাকে ইমোশনাল ক্যারেক্টারে দেখাতে চান, কান্নাকাটি করাতে চান। কিন্তু আমি তো প্রথম জীবনে কমেডি করেছি, সিরিয়াস ক্যারেক্টার করেছি।
সম্প্রতি কী কাজ করেছেন?
অ্যালেন শুভ্র : নুহাশ হুমায়ূনের পেট কাটা ষ–র দ্বিতীয় মৌসুমে কাজ করেছি। কিন্তু এটি নিয়ে আর কিছুই বলা যাবে না। দেনা-পাওনা নামের একটি মিনি সিরিয়াল শেষ করেছি। সৈয়দ রিশাদের খিল্লী খালাইবা নামে একটি ভিন্ন ঘরানার কাজ করেছি। আর কিছু চিত্রনাট্য নিয়ে কথা চলছে।
‘খিল্লী খালাইবা’ ভিন্ন ধরনের কাজ বলছিলেন। কেন?
অ্যালেন শুভ্র : এখানে বেশ মজার একটা চরিত্র করেছি। এলাকায় ডিশ ব্যবসায়ী বাবার একমাত্র সন্তান মান্না। খুবই ভদ্র ও মিশুক প্রকৃতির ছেলে। নিজেও বাবার ব্যবসায় সময় দিয়ে ব্যবসা বড় করেছে। এলাকার সুন্দরী জুলেখার সঙ্গে বিয়ের কথা হয়। কিন্তু সিনেমা, নায়ক-নায়িকা পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝামেলা হয়, যা বিচ্ছেদে গড়ায়। শুরু হয় মজার এক প্রতিযোগিতা। সহজ-সরল মান্না থেকে সে হয়ে ওঠে এলাকার ‘আন্না ভাই’। তামিল সিনেমার নায়কদের আদলে শুরু হয় তার চালচলন। এভাবেই এগিয়ে যায় গল্প।
২০০৮ সালে ‘ইচ্ছে হলো’ সিরিয়াল দিয়ে শুরু, সবশেষ ‘দেনা পাওনা’। ১৬ বছরে ক্যারিয়ারের দেনা–পাওনা কতটা হলো...
অ্যালেন শুভ্র : আগে একটা জিনিস একদম উপলব্ধি করতাম না, এখন খুব করি। বয়স একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অভিনেতা হিসেবে পূর্ণতা পেতে হলেও বয়সের একটা ম্যাচুরিটি প্রয়োজন। ৩৫ বছরের বেশি বয়সে আমার এখনকার চিন্তা আর আগের চিন্তায় বিস্তর ফারাক। এখন আমাকে একজন লাশবাহী ভ্যানের ড্রাইভার থেকে যেকোনো নিরীক্ষাধর্মী চরিত্র দিক, ‘না’ করব না। কিন্তু কিছুদিন আগেও এ ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতাম না।
অনেক নির্মাতার সঙ্গেই তো কাজ করেছেন, এই সময়ে ইন্ডাস্ট্রিতে কী পরিবর্তন দেখছেন?
অ্যালেন শুভ্র : এখন কাজের অনেক সুযোগ। টেলিভিশনের সঙ্গে ইউটিউব, ওটিটিতে প্রচুর কাজ হচ্ছে। তবে একটা জিনিসে ঘাটতি আছে। চিত্রনাট্য নিয়ে এখনকার নির্মাতারা তেমন ভাবেন না। আগে মনমতো চিত্রনাট্য পেলে শুটিংয়ের আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতাম, কিছু ইম্প্রোভাইজেশন করার থাকলে সময় পাওয়া যেত। কিন্তু এখন শুটিংয়ে গিয়ে একটা ডায়ালগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরেরটা কী হবে, তা মাথায় আনতে হয়।
আপনার সমসাময়িক অনেকেই এখন বড় তারকা, নিজের জন্য আফসোস হয় না?
অ্যালেন শুভ্র : আমি বিষয়টাকে এভাবে দেখি না। হয়তো নিয়মিত থাকলে তাদের চেয়েও ভালো অবস্থানে আমার থাকার কথা ছিল। কিন্তু সত্যিই আমি এগুলো নিয়ে ভাবি না। আমার টাকাপয়সা হতে হবে, তা–ও কখনো ভাবিনি। শুধু অভিনয়টা করতে চেয়েছি, তা–ই করে যেতে চাই। এসব নিয়ে আফসোস বা আক্ষেপ আমার কখনোই হবে না। আর আমার বন্ধুদের গাড়ি হয়েছে, আমার একদিন অ্যারোপ্লেন হবে (মজা করে)।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক ভক্তই আপনাকে নিয়ে আক্ষেপ করেন...
অ্যালেন শুভ্র : মন্তব্যগুলো আমারও চোখে পড়ে। সবার মন্তব্য পড়ে নিজেকে প্রশ্ন করি, আমি কি তাঁদের এই ভালোবাসার প্রতিদান দিতে পেরেছি? আমার উপলব্ধি হয়েছে, তাঁদের জন্যই কাজ করে যেতে হবে।
২০১৮ সালে কয়েক মাস নিষিদ্ধ ছিলেন...
অ্যালেন শুভ্র : আসলে এখন আর এসব টানতে চাই না। এটার জন্য হয়তো আমার ক্যারিয়ারে অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে আবার ফেরাটাকে আমি কামব্যাক বলছি, তাই নেতিবাচক কিছু আর না টানি। ভালো কাজ করতে চাই, ভালো কাজের সঙ্গে থাকতে চাই।
অনেকেই বলেন, মাদকের কারণেই আপনি ক্যারিয়ারে এগিয়ে যেতে পারেননি
অ্যালেন শুভ্র : এ বিষয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রশ্নের মুখে পড়েছি। যাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় নেই, কোনো কাজও হয়নি, তিনিই এক আড্ডায় বলে ফেললেন, ‘অ্যালেন তো অ্যাডিক্টেড।’ তখন কী হয়, আড্ডার বাকি অন্যদেরও আমাকে নিয়ে নেতিবাচক ধারণা হয়, আমাকে তাঁরাও কাজে নিতে চান না। কাজ ছাড়া অন্য কিছুতে অ্যালেন শুভ্র আসক্ত নয়।