গতকাল শুক্রবার দেশের ১৮টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে সরকারি অনুদানের চলচ্চিত্র ‘বৃদ্ধাশ্রম’। অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্রটি পরিচালনাও করেছেন কণ্ঠশিল্পী এস ডি রুবেল। নতুন চলচ্চিত্র সূত্রে শুক্রবার দুপুরে কথা হলো এস ডি রুবেলের সঙ্গে।
আগে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। পরিচালক হিসেবে আপনার প্রথম ছবি ‘বৃদ্ধাশ্রম’। প্রথম দিন কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
মনে হচ্ছে তো ভালোই চলছে। আমি এখন জয়দেবপুর উল্কা সিনেমা হলে এসেছি। দর্শকের উপস্থিতি বেশ ভালো। বিকেলের শো দর্শকের সঙ্গে বসে দেখব। এরপর শ্রীপুরের চন্দ্রিমা হলে যাব। তা ছাড়া আমার ফেসবুকে পেজে ছবিটি নিয়ে রিভিউগুলোয় লক্ষ করলে দেখবেন, সবাই চাচ্ছেন ‘বৃদ্ধাশ্রম’–এর মতো আরও বেশি বেশি ছবি এ দেশে হওয়া উচিত। এটি শুধু চলচ্চিত্রই নয়, এখানে সামাজিক বার্তাও আছে। এখানে প্রেম আছে, গল্প আছে, আছে জীবনের কাহিনি। যদি আরও সিনেমা হল পেতাম, তাহলে ভালো হতো।
বেশি হল না পাওয়ার কারণ কী?
অবশ্যই আমদানির ছবি ‘জওয়ান’–এর কারণে। নাম বলছি না, একটি সিনেমা হলের কর্তৃপক্ষকে বলেছিলাম, আমাদের ছবিটা চালান। তারা বলেছে, ‘সাত দিন ধরে হাউসফুল। শো খালি নেই। আমরা হল দিতে পারব না!’ আমি বলেছি, হাউসফুল যাচ্ছে ঠিক আছে। কিন্তু আমার ছবিটিও যে হাউসফুল যাবে না, সেটা তো আপনি মুক্তির আগেই বলতে পারেন না। আমি যে এক শ কোটি, দুই শ কোটি বাজেটের আন্তর্জাতিক মানের ছবি বানাব, আপনি কি আমাকে উৎসাহ দিচ্ছেন? আমাদের নির্মাতাদের কি উৎসাহ দিচ্ছেন? দেশকে ভালোবাসলে দেশের সংস্কৃতিকেও ভালোবাসতে হবে, সংস্কৃতিকে এগিয়ে দিতে হবে। আমি আমদানির ছবির বিরুদ্ধে নই, কিন্তু দেশীয় ছবির জন্যও জায়গা করে দিতে হবে। আমরা এক কোটি টাকার ছবি বানাই। পার্শ্ববর্তী বন্ধু দেশ ছবি বানায় তিন শ কোটি দিয়ে। এখন সেই ছবির প্রতি দর্শকের আগ্রহ তো থাকবেই, তার মধ্য থেকেই আমাদের সংস্কৃতিকেও বাঁচাতে হবে। বাইরের ছবি এনে ব্যবসাও করবেন, হলও বাঁচাবেন, ঠিক আছে। এটা জরুরি। তবে এটিও খেয়াল রাখতে হবে—দেশীয় সিনেমার জন্য জায়গায় করে দেওয়া, দেশীয় সিনেমাকে বাঁচানো।
ছবিটির সেন্সর হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে, মুক্তি দিতে এত দেরি হলো কেন?
২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত শুটিং করেছি। ২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর সেন্সর পায় ছবিটি। মূলত কোভিডের কারণেই ছবিটি মুক্তি দিতে পারিনি। তা না হলে আরও আগেই মুক্তি পেত। আবার কোভিডের পরপরই মুক্তি দিলে বড় লোকসানে পড়তাম। কোটি টাকা আমি পানিতে ফেলতে চাইনি। আরেকটি ব্যাপার ছিল বিদেশি ছবি। এর আগে একবার মুক্তির শিডিউল করেছিলাম। বিদেশি ছবির কারণে পেছাতে হয়েছে। ওই সময় হলমালিকেরা ছবিটি আরও পরে মুক্তির ব্যাপারে বলেছিলেন। তাঁদের কথামতো তখন আমি ছবির মুক্তি পিছিয়ে দিয়েছিলাম। চলতি মাসে গুলজার ভাইয়ের দুঃসাহসী খোকা ছবির ভাগ্যেও এমন ঘটনা ঘটেছিল। বিদেশি ছবির কারণে ওই ছবির শিডিউল পেছাতে হয়েছিল।
আপনি গানের মানুষ, সিনেমায় অভিনয় ও পরিচালনায় এলেন কেন?
আমি দীর্ঘদিন চাঁদপুরে অনন্যা গ্রুপ থিয়েটার করেছি। আমি মিউজিক ভিডিও বানিয়েছি প্রায় ১০০টি। ডকুড্রামা, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছি অনেকগুলো। এ ছাড়া এর আগে ২০১১ সালে মনতাজুর রহমান আকবরের পরিচালনায় ‘এভাবেই ভালোবাসা হয়’ নামের সিনেমায় অভিনয়ও করেছি। আমার নায়িকা ছিলেন শাবনূর। ওই ছবিতেও গানের শুটিংয়ে আমার কিছু মতামত ছিল। পরিচালনা সম্পর্কে জানাবোঝার ব্যাপার আগে থেকেই ছিল আমার। তা ছাড়া গানের সঙ্গে সিনেমার গভীর সম্পর্ক আছে। ফলে সংগীতশিল্পী হিসেবে কাজটি আমার জন্য কিছুটা সহজও হচ্ছে। আর এখানে গানকেও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার সুযোগ পাচ্ছি।
নিয়মিত অভিনয় ও পরিচালনা করবেন?
হ্যাঁ, করার ইচ্ছা আছে। সামনে তিনটি ছবির প্রস্তুতি নিচ্ছি। এর মধ্যে ‘নীল আকাশে পাখি ওড়ে’ নামে একটি ছবির প্রস্তুতি প্রায় শেষ। আগামী নভেম্বর থেকে শুটিং শুরু হতে পারে। এটি আমি পরিচালনা করব। বাকি দুটি পরিচালনা করবেন অন্য দুজন। তবে তিনটি ছবিতেই আমি অভিনয় করব।