চরকির ওয়েবফিল্ম পুনর্মিলনে দিয়ে পরিচিতি পেয়েছেন তরুণ অভিনেত্রী নওবা তাহিয়া। সম্প্রতি এনটিভিতে প্রচারিত হয়েছে তাঁর অভিনীত নাটক ‘বুনোহাঁস’। নতুন কাজ ও নানা প্রসঙ্গে গত বুধবার মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে কথা বলল বিনোদন
‘বুনোহাঁস’-এর গল্পটা কী নিয়ে?
এটি ২০০০ বা ২০০৫ সালের দিকের গল্প। একটি পরিবারকে কেন্দ্র করে গল্প, এর মধ্যে উঠতি বয়সের দুই তরুণ-তরুণীর প্রেমের দিকও আছে। এই সম্পর্ক পরিণতি পায়, নাকি বুনোহাঁসের মতো হারিয়ে যায়, সেটাই দেখানো হয়েছে।
নাটকটি যে সময়ের গল্প, সে সময় তো আপনি অনেক ছোট ছিলেন। নিজের চরিত্রের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন?
তখন স্মার্টফোন ছিল না, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছিল না; প্রেম বিষয়টা এত সহজলভ্য ছিল না। ওই সময় প্রেম খুব সরল ছিল, একসঙ্গে রিকশায় ঘোরাটাই অনেক বড় ব্যাপার ছিল। এটা পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে খুবটা একটা সমস্যা হয়নি। গল্পকার রুবেল আনুশ ও পরিচালক জিনাত তামান্না খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আমার সহ–অভিনেতা পার্থ শেখও সাহায্য করেছেন।
ওই সময়ের প্রেম বেশি মজার নাকি এখনকার?
ওই সময়ই বেশি মজার ছিল। এখনকার প্রেম আসে আর যায়, সেই গভীরতা থাকে না। তখন একবার চোখে দেখাটাও বড় ব্যাপার ছিল।
আপনার অভিনয়ের শুরুটা কীভাবে?
খুব ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে যুক্ত থাকতাম, মা খুব উৎসাহ দিতেন। আমার শুরুটা আবৃত্তি দিয়ে, বিটিভিতে ছোটদের অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করতাম। এরপর বিটিভিতেই উপস্থাপনা শুরু করি। আমার প্রথম একক নাটক; সেটাও বিটিভিতে। ফেরার গল্প নাটকটি সম্ভবত ২০২১ সালে প্রচারিত হয়। এরপর বিজ্ঞাপনচিত্র ও অন্যান্য চ্যানেলে কাজ করতে শুরু করি।
মিজানুর রহমান আরিয়ানের ওয়েবফিল্ম ‘পুনর্মিলনে’ দিয়ে তো পরিচিতি পেলেন।
‘পুনর্মিলনে’ আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। যদিও শুরুতে এই ফিল্মের অন্য একটা চরিত্রে আমার অভিনয় করার কথা ছিল। যখন অডিশন দিতে যাই, তখন সবাই বললেন, ‘তুমি একটু সিনথি চরিত্রটা করে দেখাও তো।’ করে দেখানোর পর আরিয়ান ভাই বললেন, ‘আমরা সিনথি পেয়ে গেছি।’
এই ওয়েবফিল্মে তো সিয়াম আহমেদ, তাসনিয়া ফারিণদের মতো জনপ্রিয় শিল্পীরা ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
অসাধারণ। মিজানুর রহমান আরিয়ানের মতো পরিচালক, সিয়াম আহমেদ, তাসনিয়া ফারিণদের মতো তারকারা থাকবেন—সব মিলিয়ে প্রথম স্ক্রিপ্ট রিডিংয়ের দিন আমি একটু নার্ভাস ছিলাম। কিন্তু প্রথমেই ফারিণ আপু আমাকে সহজ করে দেন। সিয়াম ভাই যখন ঢুকলেন, আমি তো খুব রোমাঞ্চিত—তিনি একজন নায়ক, পর্দায় তাঁর সিনেমা দেখেছি; তাঁর সঙ্গে কাজ করব! তাঁর সামনে বসে থাকা স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল। তিনি প্রথমেই আমাকে সিনথি ডেকে বলেন, ‘তুই কোথায় পড়িস? পড়াশোনার সঙ্গে কাজ করতে কষ্ট হয় না?’ তাঁর কথা শুনে দ্রুতই নার্ভাসনেস কেটে যায়।
অনেকেই নাকি বলেন, আপনি তাসনিয়া ফারিণের মতো দেখতে?
এটা অনেকেই বলেছেন। ফারিণ আপুকে এটা প্রথম দেখাতেই বলেছিলাম, আমি নাকি তোমার মতো দেখতে। পরে ফিল্মটির প্রদর্শনীর দিন আমি একটা সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলাম, তখন ফারিণ আপু আমাকে বলেন, ‘মনে হচ্ছিল, আমিই কথা বলছি।’
আপনি কোথায় পড়ছেন?
ঢাকার একটি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে।
উচ্চমাধ্যমিকে তো অনেক পড়ার চাপ। কীভাবে সামলাচ্ছেন?
এটার বড় কৃতিত্ব আমার মায়ের। উনি সব সময় কাজ করতে উৎসাহ দেন, একই সঙ্গে পড়াশোনার গুরুত্বের কথাও মনে করিয়ে দেন। সবার কথা একটাই, যা খুশি করো কিন্তু পড়াশোনাটা ঠিক রাখতে হবে। দুটো একসঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে খুব কষ্ট হয়। কিন্তু অভিনয় যেহেতু আমার নেশা, এটা চালিয়ে যেতে আমি যেকোনো কষ্ট করতে রাজি। গাড়িতে তো বটেই, শুটিং সেটেও বই-খাতা নিয়ে যাই।
আপনার কাজ নিয়ে বন্ধুরা কী বলেন?
‘পুনর্মিলনে’র কথা ওদের বলার পর থেকেই রোমাঞ্চিত ছিল। যেদিন মুক্তি পেল, সেদিনই আমার এক বন্ধু দেখে আমাকে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘কেন সিয়াম ভাই মারা গেল?’ এখন কলেজে গেলেও শিক্ষকেরা আমাকে অন্য চোখে দেখেন। অনেক তারকা সম্পর্কে জানতে চান।
অভিনয় নিয়ে পরিকল্পনা কী? পাঁচ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
এমন কিছু করতে চাই, যা আমাকে গর্বিত করবে, পরিবারকে সম্মানিত করবে। আর পড়াশোনায়ও খুব ভালো কিছু করতে চাই। আমার ইচ্ছা চিকিৎসক হওয়ার।