গত ঈদে মুক্তি পাওয়া আলোচিত ‘প্রিয়তমা’ সিনেমায় খল চরিত্রে অভিনয় করেছেন এল আর খান সীমান্ত। হিমেল আশরাফ পরিচালিত ছবিটিতে অভিনয়ে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের নজর কেড়েছেন তিনি। ‘প্রিয়তমা’সহ সীমান্তর ঢালিউড-যাত্রার গল্পের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানার চেষ্টা করেছে বিনোদন
‘প্রিয়তমা’ ছবিতে আপনার উপস্থিতি অল্প সময়ের ছিল। নিজেকে প্রমাণ করা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
উপস্থিতি কম হলেও আমার চরিত্রটি কিন্তু খুব মজার ছিল। এটাও ঠিক, উপস্থিতি কম থাকলে চরিত্র ফুটিয়ে তোলা চ্যালেঞ্জের হয়। কিন্তু পরিচালক হিমেল আশরাফ ভাই আমাকে ডেকে নিয়ে যেভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাতে ওই চরিত্রটা ফুটিয়ে তোলা একদম সহজ হয়ে যায়। কারণ, আমি নিজেকে পুরোপুরি পরিচালকনির্ভর অভিনয়শিল্পী মনে করি।
এই ছবিতে আপনাকে টক্কর দিতে হয়েছে শহীদুজ্জামান সেলিমের মতো শক্তিমান একজন অভিনেতার সঙ্গে। চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সময় যখন এমনটা শুনেছিলেন, প্রস্তুতিটা কীভাবে নিয়েছিলেন?
একদমই ঠিক, সেলিম ভাইয়ের মতো একজন শক্তিশালী অভিনেতার সঙ্গে টক্কর দিতে হয়েছে। চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সময়ই এটা জানতে পারি। তবে আমি ততটা ঘাবড়ে যাইনি এই কারণে বা খুব সহজভাবে বিষয়টা নিয়েছি এই ভেবে, তাঁর সঙ্গে এর আগেও তিন-চারটা কাজ আমার হয়েছে। আমি জানি, তিনি কতটা সহযোগিতাপরায়ণ একজন অভিনয়শিল্পী। তাই আমি বিষয়টাকে সহজভাবে নিই, পরিচালকের সঙ্গে পরামর্শ করে সেভাবে প্রতিনিয়ত প্রস্তুতি নিতে থাকি।
‘প্রিয়তমা’ ছবিতে আপনার যুক্ত হওয়াটা কীভাবে হয়েছিল? উপস্থিতি অল্প সময়ের জেনেও কী ভেবে যুক্ত হয়েছিলেন? এই ছবিটা এমন কী যুক্ত করেছে আপনার অভিনয় ক্যারিয়ারে?
‘প্রিয়তমা’ ছবিতে যুক্ত হওয়াটা আমার জন্য অন্য রকম একটা ভালো লাগার ব্যাপার। শাকিব খান ভাইয়া আছেন, এই ব্যাপারটাও তো আছে। ২০১৭ সালে ‘প্রিয়তমা’র পরিচালক যখন ‘সুলতানা বিবিয়ানা’ পরিচালনা করেন, তখনই আমি ছবিটির প্রচারণা করেছিলাম। এবার যখন ‘প্রিয়তমা’ ছবির ঘোষণা দিলেন, আমি সরাসরি বলেছিলাম, আপনার ছবিতে কাজ করতে চাই। তিনি বলেছেন, ‘অবশ্যই কাজ করবেন এবং আপনার চরিত্রটি একেবারে ভিন্নধর্মী।’ তিনি এ–ও বলেছিলেন, ‘আমি জানি যে আপনি নেগেটিভ চরিত্র করেন, কিন্তু এটা নেগেটিভ আর পজিটিভ মিলিয়ে।’ আমাকে ডেকে নিয়ে যখন গল্পটা বললেন এবং চরিত্রটা বুঝিয়ে দিলেন, তখনই খুব ভালো লেগেছে। এটা আমার অভিনয়জীবনে একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে। কারণ, দর্শকেরাও আমাকে একেবারে ভিন্নভাবে গ্রহণ করেছেন। আমি এই চরিত্রটা জন্য খুবই গ্রেটফুল ভার্সেটাইল মিডিয়া, পরিচালক হিমেল আশরাফ ভাই এবং বিশেষভাবে শাকিব ভাইয়ের কাছে। কারণ, আমার নামটি যখন শাকিব ভাইয়ের কাছে বলা হয়, তখন তিনি একবাক্যে বলেছেন, ‘সীমান্ত এই চরিত্রের জন্য একেবারেই পারফেক্ট।’
এ পর্যন্ত কতটি ছবিতে খলচরিত্রে অভিনয় করেছেন?
আমার অভিনীত প্রথম ছবিটি ছিল ‘ক্যাসিনো’, ২০১৯ সালে এর শুটিং শুরু করি। একই সময়ে ‘আনন্দ অশ্রু’ নামে আরেকটি ছবির শুটিংও করেছিলাম। এরপর গত কয়েক বছরে ১৩ থেকে ১৪টি ছবিতে খল চরিত্রে অভিনয় করেছি।
প্রেক্ষাগৃহে বসে যখনই আপনার ছবি দেখা হয়েছে, প্রায়ই দর্শকদের অনেককে বলতে শোনায় যায়, দেখতে তামিল ভিলেনের মতো লাগে! আপনিও কি এমনটা শুনেছেন?
মুক্তির পর যমুনা ব্লকবাস্টারে প্রথম ‘প্রিয়তমা’ ছবিটি দেখি। বন্ধুরাসহ মাস্ক ও ক্যাপ পরেই গিয়েছিলাম। বিরতির পর যখন আমার চরিত্রটি সবার সামনে আসে, দর্শকেরা বলাবলি শুরু করে, এই চরিত্রটা মনে হয় বাইরের কেউ হবে। কেউ বলছিল, কলকাতার; আবার কাউকে শুনলাম তামিল বলতে। নানাজনের নানা কথা শুনে আমিও ব্যাপারটা খুব উপভোগ করছিলাম। যখন হল থেকে বের হলাম, দর্শকেরা আমাকে দেখে ঘিরে ধরেন। ছবি তোলেন। আমি এটার একটা ভিডিও আমার ফেসবুক প্রোফাইল আপলোডও দিয়েছিলাম। আমি প্রায়ই চিন্তা করতাম যে শাকিব ভাইয়া যখন কোথাও যান, তখন যেমন দর্শক হুমড়ি খেয়ে পড়েন। অন্য নায়কেরাও যখন যান, তাঁদের ঘিরে ধরেন। অভিনয় শুরুর পর ভাবতাম, এমন দৃশ্য কি কখনো আমার জীবনে আসবে? ‘প্রিয়তমা’ মুক্তির পর নতুনভাবে এটা উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম। তাই নির্দ্বিধায় বলতে পারি, আমার ক্যারিয়ারে এই সফলতার জন্য ‘প্রিয়তমা’র অবদান অনেক বেশি।
কী ভেবে চলচ্চিত্রে খল অভিনেতার চরিত্রটি বেছে নিয়েছেন?
আমার সব সময় মনে হয়, পর্দায় নেগেটিভ চরিত্র খুব ভালো করতে পারব। পজিটিভ তো সবাই করছেন, আমি নাহয় নেগেটিভটা বেছে নিলাম আরকি। দেশে হিরো তো অনেক আছেন, কিন্তু ভিলেন কম। পর্দায় আমার মধ্যে নেগেটিভ ব্যাপারটা কাজ করে বেশি। ওটাতেই আমি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।
খল চরিত্রের অভিনয়ের আগে কী করতেন?
একটি পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছাদূত ছিলাম। তার আগে আমি ডিফেন্সে চাকরিতে ছিলাম। ভালো লাগছিল না চাকরি, তাই ছেড়ে দিই। চাকরি থেকে বের হয়ে অভিনয় করছি, পাশাপাশি ব্যবসাও করছি।
আপনার পরিবারে কেউ অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন? আপনার অভিনয় পরিবারের সদস্যরা কীভাবে দেখেন? কতটা উৎসাহ দেন?
পরিবারের কেউই অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত নেই। কখনো কেউ ছিলও না। তারপরও পরিবারের সবার সাপোর্ট পাই, শুধু আম্মু নিষেধ করেন।
খলচরিত্রে দেশ-বিদেশে আপনার প্রিয় অভিনয়শিল্পী কারা?
খল চরিত্রের অভিনেতাদের মধ্যে প্রয়াত হুমায়ুন ফরীদি স্যার আমার পছন্দের তালিকায় সব সময় ১ নম্বরে। দ্বিতীয় রাজীব স্যার। তাঁরা তো কেউই এখন বেঁচে নেই। বর্তমানে মিশা সওদাগর ভাই আছেন, তিনি অসাধারণ একজন অভিনেতা। এর বাইরে বাংলাদেশের তেমন কেউ আমার চোখে পড়ে না। ভারতে কবির দুহান সিং, প্রকাশ রাজ, নাসির উদ্দিন শাহকে ভালো লাগে। তাঁদের মধ্যে প্রকাশ রাজকে খুব বেশি অনুসরণ করি।
খল অভিনেতা হিসেবে সিনেমার পর্দায় নায়কের সঙ্গে মারামারি করতে দেখা যায়। এখন পর্যন্ত যে কয়টি ছবিতে অভিনয় করেছেন, তার মধ্যে কোন নায়কের সঙ্গে টক্কর বেশি উপভোগ্য লেগেছে?
পর্দায় আমার সবচেয়ে বেশি টক্কর হয়েছে শাকিব ভাইয়ের সঙ্গে। প্রথমবার ‘নবাব এলএলবি’ সিনেমায়। এরপর ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’ সিনেমায় আরেকটা ফাইট হয় পানির চৌবাচ্চায়, সেটাও শাকিব ভাইয়ের সঙ্গে ছিল। তাঁর সঙ্গে মন খুলে ফাইট করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’ ছবিতে তিনি আমার বুকে খুবই স্মার্টলি একটা কিক করেন। কিকটা যখন করছিলেন, মনে হচ্ছিল অনেক জোরে আসছে। কিন্তু যখন তিনি টাচ করলেন, তখন ওভাবে কিছুই বোঝা গেল না। খুবই কমফোর্টেবল ফাইট করেন তিনি। এত অসাধারণ এক্সপ্রেশন, শাকিব ভাইয়ের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। দ্বিতীয় টক্কর হয় জিয়াউল রোশানের সঙ্গে ‘সাইকো’ সিনেমায়, তার সঙ্গে আমার বন্ডিংটা খুব ভালো। সে ভবিষ্যতে খুব ভালো করবে বলে আমার বিশ্বাস।