অভিনয় না জেনেই শৈশবে নাট্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কার জিতেছিলেন। সবার প্রেরণায় একসময় অভিনয় শুরু করেন আবদুল্লাহ আল সেন্টু। কিন্তু বারবার হোঁচট খেতে থাকেন। এর মধ্যেই সাফল্য হয়ে ধরা দেয় ‘বাংকার বয়’, ‘শুক্লপক্ষ’। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘কারাগার’সহ একাধিক কাজ। তাঁর সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে এল নানা প্রসঙ্গ।
অনেক শব্দ হচ্ছে, কোথায় আপনি?
ট্রেনের মধ্যে আছি। এখন কুমিল্লায়। ছোট বোন অসুস্থ। ওকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে ফিরছি।
সম্প্রতি হইচইয়ে ‘কারাগার’ মুক্তি পেল, এর আগে চরকিতে ‘বাংকার বয়’, ‘শুক্লপক্ষ’ মুক্তি পেয়েছিল। কোন কাজ থেকে বেশি সাড়া পেয়েছিলেন?
‘কারাগার’ সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে। অনেকেই বলেছেন, অভিনয় ভালো হয়েছে। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সাড়া পেয়েছি ‘বাংকার বয়’ থেকে। অনেকেই জানত না আমি ‘বাংকার বয়’–এর সেই ছেলেটি। পরে যখনই জেনেছে, বুকে টেনে নিয়েছে। ‘শুক্লপক্ষ’ থেকেও দারুণ সাড়া পেয়েছি। আমার সব কটি চরিত্রই আলাদা এবং বৈচিত্র্যময়।
বলছিলেন প্রথম সাড়া পেয়েছিলেন ‘বাংকার বয়’ থেকে, কাজটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন কীভাবে?
আমি কিছুই জানতাম না। হঠাৎ একদিন শুনলাম, আমিই প্রধান চরিত্র। বিশ্বাস হচ্ছিল না। শুরুর পর চরিত্রের জন্য কোনো ছাড় দিতে চাইনি। কাজটির জন্য শাওকি ভাই, তানিম ভাইসহ আরও অনেকের কাছে কৃতজ্ঞ। মুন্না ভাই, মাসুদসহ আরও অনেকের কাছে কৃতজ্ঞ।
ক্যারিয়ার নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
এখন পুরোদস্তুর অভিনেতা হয়ে উঠতে চাই। চাকরির চেষ্টা করেছিলাম, পেয়েছিলামও। কিন্তু অভিনয় ছেড়ে থাকতে পারিনি। প্রথমে ভালো একজন মানুষ হতে চাই, পরে আমৃত্যু অভিনয় করব। চরিত্রের মধ্যেই নিজেকে আবিষ্কার করব। অভিনয় আমার কাছে একটা পরীক্ষা। এই পরীক্ষার মাধ্যমেই আগামী দিনগুলোতে এগোতে চাই।
অভিনয় নিয়ে আপনার পরিবার থেকে কেউ কিছু বলেন?
প্রথম দিকে পরিবার থেকে বলত। আমি বড় ছেলে। বাবা মারা গিয়েছেন। ছোট বোন আছে। মা দরজির কাজ করে যা পেতেন, তা–ই দিয়ে আমাদের সংসার চলত। মা চাইতেন সংসারে একটু সাহায্য করি। তখন গ্রামের মানুষও মাকে নানা রকম উল্টাপাল্টা বোঝাত। আমিও মাকে বোঝাতাম—তোমার দরজির কাজ আর আমার অভিনয়ের টুকটাক আয়ের টাকা দিয়ে ডালভাত খেয়ে চলতে পারব। আমি তো চুরি, বাটপারি, মানুষ ঠকানো, দুই নম্বরি করে আয় করছি না। তখন মা সায় দিতেন। আমাদের কাছে মনে হয় সুখের থাকার জন্য বেশি কিছু দরকার নেই।
গ্রামের মানুষেরা কী বলতেন?
গ্রামের কেউ কেউ মাকে উল্টাপাল্টা বোঝানোর চেষ্টা করতেন। তাঁরা বলতেন, সেন্টু কালো, খাটো। ও মিডিয়ায় কিছু করতে পারবে না। খামাখা জীবনটা নষ্ট করবে। এসব কথা শুনে অনেক কষ্ট লাগত। মানুষের অবহেলাই আমাকে সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আমার মধ্যে জেদ কাজ করত, আমি কেন পারব না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মাত্র অভিনয়ে পা রেখেছি, তাতেই তাঁরা এখন নিজেদের ভুল স্বীকার করছেন। তবে কিছু লোক এখনো অবহেলা করে। আমি আমার মতো করেই শিখে অভিনয়ের মাধ্যমে নিজেকে জানার চেষ্টা করে যেতে চাই। সংকট আছে, কিন্তু পরিবার নিয়ে সুখে থাকতে চাই।
কী ধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে?
জীবন চলতে গিয়ে বারবার থেমে যেতে হয়েছে। মায়ের আয় দিয়ে জীবন চলা খুবই কঠিন ছিল। তারপর ঢাকায় এসে পড়াশোনা করা, থিয়েটার করা কঠিন ছিল। এর মধ্যে আবার অরণ্যক নাট্যদল থেকে রিজেক্টও হয়েছিলাম।
আপনার অভিনয়ের শুরুটা কীভাবে?
আমার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় আমাদের এখানে একটি নাট্য উৎসবের আয়োজন করা হয়। সেটা ২০০৯ সালের ঘটনা। সেখানে আমরা ১২ জনের দল অংশ নিই। তখনো অভিনয়ের কিছুই জানতাম না। আমাদের মতো করে ছেলেদের মেয়ে সাজিয়ে, দাড়ি–গোঁফ লাগিয়ে অভিনয় করি। আমিই নির্দেশনা দিই। তখন সিনিয়রেরা আমাদের চেষ্টার প্রশংসা করেছিল। অনেকেই পরামর্শ দেন থিয়েটারে অভিনয় শেখার। তখন আমি ১৫৩ জনের মধ্য থেকে চন্দ্রবতী থিয়েটারে অভিনয় শেখার সুযোগ পাই। ৬ বছর পর আমি ঢাকার কবি নজরুল কলেজে ভর্তি হয়ে বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করতে থাকি। টুকটাক সিনেমা, স্বল্পদৈর্ঘ্যে সিনেমায় অভিনয় শুরু করি। পাশাপাশি অভিনয় নিয়ে চর্চা করছি।
প্রথম অভিনয় করেন কবে?
২০১৮ সালে মাসুদ আহমেদের শর্ট ফিল্মে অভিনয় করি। পরে খন্দকার সুমনের ‘সাঁতাও’ সিনেমায় কাজ করি।
বর্তমান ব্যস্ততা কী নিয়ে?
রাজিব রাফি ভাইয়ে একটি সিনেমার কাজ করছি। এ ছাড়া আছে ‘মেসমেট’সহ বেশ কিছু কাজ। চুক্তিবদ্ধ কাজ নিয়ে এখনই কিছু বলা যাবে না। কাজ দেখে কিছু পরিচালক কাজের জন্য ডাকেন, এটাই আমার অন্য রকম প্রাপ্তি।