গতকাল পাঁচটি হলে মুক্তি পেয়েছে আহসান সারোয়ারের সিনেমা ‘রংঢং’। সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোহেল মন্ডল। এটা ছাড়াও অভিনেতার আরও কয়েকটি নাটক সম্প্রতি আলোচিত হয়েছে। কাজসহ নানা প্রসঙ্গে গত বৃহস্পতিবার অভিনেতার সঙ্গে কথা বলেছেন নাজমুল হক।
অভিনন্দন। আপনার অভিনীত নতুন চলচ্চিত্র ‘রংঢং’ মুক্তি পেল
সোহেল মন্ডল : আপনার কাছ থেকেই শুনলাম! আসলে প্রায় ৯ বছর আগে শুটিং করেছিলাম। এরপর সেন্সরে আটকে ছিল। বলতে পারেন ভুলেই গিয়েছিলাম। তবে ভালো লাগছে, অবশেষে সিনেমাটি মুক্তি পেল। সিনেমা আটকে থাকা নির্মাতা থেকে অভিনেতা—সবার জন্যই কষ্টের।
তার মানে মুক্তির আগে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি?
সোহেল মন্ডল : না। তবে তাদের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু এই সিনেমার একজন অভিনেতা হিসেবে মনে করি, ন্যূনতম সৌজন্যের জায়গা থেকে যোগাযোগ করা উচিত ছিল। আবার মনে হয়, সিনেমাটা যেহেতু আট-নয় বছর আগের, এটা নিয়ে তাদের মধ্যে সেই আবেদনই হয়তো কাজ করছে না। আমি এটাকে দায়সারা বলব না, এটা বললে সরাসরি নির্মাতাকে দায়ী করা হয়। একজন নির্মাতার কোনো প্রজেক্ট যখন আট-নয় বছর আটকে থাকে, তাঁর উৎসাহ শেষ হয়ে যায়।
ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিনয়ের কথা শোনা গিয়েছিল, কাজটা কত দূর?
সোহেল মন্ডল : এটা অনুদানের স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘বাকিটা ইতিহাস’। সিংহভাগ শুটিং শেষ। একসঙ্গে পুরো টিমের কিছু ক্লাইমেক্স দৃশ্যের শুটিং বাকি আছে। গল্পটা সুন্দর। নির্মাতা শুভ পাল খুবই যত্ন নিয়ে বানিয়েছেন। আমরা প্রায়ই অনুদানের সিনেমায় অযত্নের কথা শুনি, কিন্তু আমি ভাগ্যবান; এখন পর্যন্ত যতগুলো অনুদানের সিনেমায় কাজের সৌভাগ্য হয়েছে, সব কটিতেই নির্মাতাদের যত্ন নিতে দেখেছি।
এর মধ্যে শুনলাম ‘বনলতা সেন’ সিনেমার কাজ শেষ করেছেন। মুক্তির পাবে কবে?
সোহেল মন্ডল : মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের সিনেমাটির শুটিং, পোস্টপ্রোডাকশন—সব শেষ। জুলাই-আগস্টে আমরা প্রচারের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। বছর শেষে মুক্তির পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেশে তো একটা অভ্যুত্থান হলো, চারপাশের পরিবেশ–পরিস্থিতি আমাদের হাতের নাগালে ছিল না; এখনো মানুষ যে সিনেমা দেখার জন্য খুব বেশি প্রস্তুত হয়ে আছে, তা–ও আমরা মনে করছি না। তো সেই জায়গা থেকেই আমরা অপেক্ষা করছি। একটা ভালো সময়ের অপেক্ষায় আছি সবাই।
আপনার চরিত্রটি নিয়ে যদি কিছু বলেন...
সোহেল মন্ডল : জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে খুব ভালো একটা সিনেমা করার চেষ্টা করা হয়েছে। অনেক দিনের গবেষণার পর নির্মাতা সিনেমাটি বানিয়েছেন। জীবনানন্দ দাশের পয়েটিক জার্নিটা দর্শক পর্দায় দেখতে পাবেন। আশা করি, দর্শকদের বেশ ভালো লাগবে। আমি এতে ‘মহীন’ চরিত্রে অভিনয় করেছি, জীবনানন্দ দাশের ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ থেকে এই নাম এসেছে। আমার চরিত্র নিয়ে আর বিস্তারিত বলব না। বলা নিষেধ। আমার সঙ্গে খায়রুল বাসারও অভিনয় করেছেন। গল্পে আমাদের দুজনের চরিত্র একে অন্যের পরিপূরক বলা যেতে পারে।
ইতিহাসনির্ভর কাজের জন্য প্রস্তুতি কীভাবে নেন?
সোহেল মন্ডল : ইতিহাসনির্ভর গল্পের ক্ষেত্রে অনেক প্রস্তুতি থাকে। চরিত্রের আচরণ থেকে অবয়ব, হাঁটাচলা—এগুলোকে ধারণ করতে হয়। সব চরিত্রের জন্যই তো প্রস্তুতি নিতে হয়, তবে এ ধরনের চরিত্রের জন্য ভিন্ন প্রস্তুতি থাকে। এ ছাড়া শুটিংয়ের আগে কর্মশালা হয়।
‘মায়ার জঞ্জাল’ সিনেমায় অভিনয় করে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেলেন। পশ্চিমবঙ্গেও আপনার কাজ নিয়ে কথা হয়...
সোহেল মন্ডল : ওখানকার দর্শকেরা আমার ‘তাকদীর, ‘বলি’, ‘আন্তঃনগর’সহ ওটিটির বেশ কিছু কাজ দেখেছেন। এরপর ‘মায়ার জঞ্জাল’ করে ফিল্মফেয়ার পেলাম। স্বাভাবিকভাবেই সেখানকার দর্শকদের কাছে আমার দায়িত্ব বেড়ে গেছে। কী ধরনের প্রোডাকশনে কাজ করব বা চরিত্র বাছাইয়ে কী গুরুত্ব দেব, তা মাথায় রেখেই চিত্রনাট্য নির্বাচন করতে হচ্ছে।
সেখানে পরবর্তী কোন কাজ...
সোহেল মন্ডল : কলকাতায় বেশ কিছু বড় কাজে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলাম। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ভিসা জটিলতায় সেগুলো করা হচ্ছে না। প্রোডাকশন টিমের সঙ্গে আলাপ করে কাজগুলো থেকে সরে এসেছি। এ নিয়ে আর আফসোস করতে চাই না। জীবনে হয়তো এমন সুযোগ আরও আসবে। গত কয়েক মাসে দেশেও তো অনেক কাজ আটকে গেছে। আসলে জীবনে চলার পথে কখনো কখনো এমন থমকে যেতে হয়, এরপর আবার নতুন করে শুরু করতে হয়।
সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া আপনার ‘সুইচ’ নাটকটি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে...
সোহেল মন্ডল : নাটকটি নিয়ে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। নির্মাতা আতিফ আসলাম থেকে আমার সহশিল্পীরা অনেক পরিশ্রম করেছি। মজার ব্যাপার, নাটকটি মুক্তি পেয়েছিল বারফি নামে নতুন একটি ইউটিউব চ্যানেলে। সেখানে কোনো সাবস্ক্রাইবারই ছিল না। এরপরও তিন দিনে নাটকটির ১০ লাখ ভিউ হয়েছে! শিল্পী হিসেবে এটা অনেক বড় প্রাপ্তি।
অনেকের অভিযোগ, আপনি এখন মঞ্চে নিয়মিত সময় দেন না...
সোহেল মন্ডল : অভিযোগ হয়তো কিছুটা সত্য। ব্যস্ততার কারণেই থিয়েটারকে সময় কম দেওয়া হচ্ছে। পুরোনো নাটকগুলোর প্রদর্শনী যখন হয়, অংশ নেওয়ার চেষ্টা করি। যেহেতু নতুন কাজে পাঁচ–ছয় মাসের মতো সময় লাগে, তাই যুক্ত হওয়া হয়নি। যদি গুছিয়ে উঠতে পারি, তবে হয়তো নতুন প্রোডাকশনে যুক্ত হব।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আপনি সক্রিয় ছিলেন। অভ্যুত্থানের পর বিনোদনজগতের সংস্কার নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। কাজ কত দূর এগোল?
সোহেল মন্ডল : সত্যি বলতে কাজের পরিবেশ বা পেশাদারত্বের জায়গাটা নিয়ে আমি বারবার কথা বলব। সবাই মিলে বসে, কীভাবে কাজের পরিবেশ ফেরানো যায়, সেভাবে কাজ করতে হবে। বিএফডিসিকে পূর্ণাঙ্গভাবে কাজে লাগানো উচিত। কবিরপুরের ফিল্ম সিটিতে কিছু অবকাঠামো হয়েছে, এটা কীভাবে পুরোপুরিভাবে আরও দ্রুত চালু করা যায়, সে চেষ্টা করা উচিত। আসলে আমাদের প্রতিষ্ঠান থাকলেও সেগুলো যথাযথ ব্যবহৃত হচ্ছে না।