বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বেশ কিছুদিন ধরেই ছাত্রদের সঙ্গে মাঠে দেখা যাচ্ছে ঢাকাই ছবির নায়ক সিয়াম আহমেদকে। গতকাল প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে দেশের চলমান পরিস্থিতিসহ নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিক আল মামুন।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কী ভাবছেন?
সিয়াম আহমেদ : শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির পক্ষে সুন্দর সমাধান আগেই হতে পারত। এ সময়ে এসে সরকার থেকে যে প্রস্তাব দেওয়া হলো, এটি শুরুর দিকে করতে পারলে ছাত্র-ছাত্রীসহ এতগুলো মানুষ মারা যেত না। আমার পরিবারের মানুষ মারা না যাওয়া পর্যন্ত কি আমি সচেতন হব না? ন্যায্য কথা বলব না? নাকি পরিবারের মানুষ মারা যাওয়া পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব? তারপর আমরা প্রতিবাদ করব? অনেক হয়েছে, অনেক।
অনেক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে...
সিয়াম আহমেদ : যে বাচ্চাগুলো মারা গেছে, এই বাচ্চাগুলো আমার ভাই, এই বাচ্চাগুলো আমার বোন, যে শিশুটি মারা গেছে সে আমার মেয়ে হতে পারত। এসব বিষয় নিয়ে যদি প্রত্যেক মানুষ চিন্তা করতে পারত, তাহলে আমরা আগেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারতাম। অনেক কিছুর সুন্দর সমাধান হতো। সরকার যদি ভুলও করত, তাহলে সুন্দরভাবে তা শোধরানোর সুযোগও পেত। সম্মানের সঙ্গে সুযোগ পেত। এভাবে হত্যাযজ্ঞ করে, ধ্বংস করার কোনো দরকার ছিল না।
কিন্তু এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত কী ফলাফল বয়ে আনবে বলে মনে করেন?
সিয়াম আহমেদ : আমাদের দেশ আবার জেগে উঠবে। হয়তো নতুনভাবে জেগে উঠবে, নতুন হাতে জেগে উঠবে। যদি ছাত্ররা রাজনৈতিকভাবে সোচ্চার থাকে, তাহলে। আমরা সবাই ভাবতাম, এ প্রজন্ম রাজনীতি নিয়ে চিন্তাই করে না। এরা টিকটক করে, গেম খেলে, ইন্টারনেটে নিজেকে ব্যস্ত রাখে। এরা দেখাচ্ছে এবার।
এ প্রজন্ম নিয়ে এমন উপলব্ধির কারণ কী?
সিয়াম আহমেদ : আমাদের সমস্যা হলো, আমরা এই প্রজন্মের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে চর্চা, রাজনীতি নিয়ে কথা বলি না। কথা বলার যোগ্যতা নেই, জ্ঞান নেই আমাদের। আমরা কথা বলি না দেখে, যাদের যোগ্যতা শেষ হয়ে গেছে মানে তারা এখনো কথা বলে। আধুনিক সময় এসে যারা এখন অচল। আমাদের তরুণদের মধ্যে আমরা রাজনীতির জ্ঞান দিতে পারিনি, এটা আমাদের ব্যর্থতা। এবার এই প্রজন্ম যদি বিজয়ী বেশে ঘরে ফেরে, কথা বলা শুরু করে, রাজনীতি ও দেশ নিয়ে সচেতন থাকে, তাহলে একটা নতুন বাংলাদেশ তৈরি হবে।
শুরু থেকে মাঠে ছিলেন না?
সিয়াম আহমেদ : আমার শুটিং ছিল। কিন্তু আমি ১৫ জুলাই থেকেই নিজের ফেসবুক আইডিতে ছাত্রদের ন্যায্য দাবির পক্ষে লেখালেখি শুরু করেছি। যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আক্রমণ হয়েছে, আমি যখন মাঠে গেছি নিজের কাছে কষ্ট লেগেছে, আফসোস লেগেছে, লজ্জা লেগেছে। ১৫ জুলাই থেকেই যদি মাঠে নামতে পারতাম, তাহলে একটি-দুটো প্রাণ হলেও বাঁচাতে পারতাম। আমরা পারিনি, আমরা কাপুরুষ।
‘জংলি’ সিনেমার সবশেষ খবর কী?
সিয়াম আহমেদ : ‘জংলি’র কাজ শেষ। এটি নিয়ে পরে কথা বলব। লাগলে একটা স্বাধীন দেশে উপযুক্তভাবে সিনেমা মুক্তি দেব আমরা। আগে মানুষ সুন্দর একটি দেশ ফিরে পাক, শান্তি ফিরে পাক। তারপর সিনেমা নিয়ে ভাবা যাবে।