কিশোর অভিনেত্রী সাফানা নমনি এখন নাটকের দর্শকদের কাছে পরিচিত মুখ। দীর্ঘ ধারাবাহিক ‘মাশরাফি জুনিয়র’ নাটকের প্রধান চরিত্রের অভিনেত্রী সে। নাটকটি তাকে এত তাড়াতাড়ি পরিচিতি দেবে, এটা কখনোই ভাবেনি এই সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এখন ক্লাস বা কোনো আড্ডায় শুনতে হয় অভিনয়ের প্রশংসা। বাড়ছে ব্যস্ততা। এসব নিয়েই কথা বলল সে
দীর্ঘ ধারাবাহিক নাটকের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছ, কেমন সাড়া পাচ্ছ?
নাটকটির শুটিং শুরু করার সময় মনেই হয়নি এটা ৫০০ পর্ব যাবে। পরে দেখলাম, দর্শকেরা আমাদের নাটকের গল্পকে ভালোবেসে ফেলেছেন। বাইরে বের হলে বুঝতে পারতাম, দর্শক আমাকে চিনছেন। তখন মনে হতো, আমি সফলভাবে চরিত্রটি তুলে ধরতে পারছি। দর্শকদের ভালোবাসার জন্যই নাটকটি নিয়ে এত দূর আসতে পেরেছি। তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞতা।
বাইরে বের হলে দর্শক কী বলেন?
তাঁরা প্রথম চিনতে পারেন না। কনফিউজড থাকেন। কারণ, আমাকে একবার ছেলের চরিত্রে দেখেন, সেখানে চুল ছোট। আবার মেয়ের চরিত্রে দেখেন অন্য রকম লুকে। এ জন্য পরে জিজ্ঞাসা করেন, ‘তুমি কি মণি?’ এটা আমার চরিত্রের নাম। কখনো সাফানা নামেও ডাকেন। আমিই সেই মেয়ে জানার পরে বেশির ভাগ দর্শক নাটকটির স্পয়লার জানতে চান। তখন মনে হয় পরিশ্রম সফল। আর এখন যেখানেই যাই, শুধু নাটক নিয়েই কথা হয়।
অভিনয়ে কীভাবে আসা?
আমার মা–বাবা, মামা—তাঁরা আমাকে শৈশব থেকেই অভিনেত্রী হিসেবে দেখতে চাইতেন। এভাবেই আমার মধ্যে অভিনয়ের ইচ্ছা জাগে। আমিও তখন থেকেই নাটক–সিনেমা দেখলেই লক্ষ করতাম, তারকারা কীভাবে অভিনয় করেন। শৈশব থেকে বাফার নাচ শিখি, পরে কারাতেতে ভর্তি হই, বই পড়ি। পরে ২০১২ সাল থেকে অভিনয় শুরু করি। ২০১৪ সালে একুশে টিভির ফ্যাশন শো থেকে বিজ্ঞাপনে ডাক পাই। প্রথম ‘বিকেল বেলার পাখি’ নাটকে অভিনয় করেছিলাম। কিন্তু বিজ্ঞাপন বেশি করেছি। মাশরাফি জুনিয়র নাটকের অডিশনের সময় মা বলেছিলেন, ‘অভিনয় করে দেখাবি।’ ভয়ে ভয়ে অভিনয় করে পরে জানতে পারি আমিই সুযোগ পেয়েছি। এটা আমার দ্বিতীয় নাটক।
কোন অভিনয়শিল্পীদের কাজগুলো ভালো লাগত?
অনেকের কাজ ভালো লাগত। শাবনূর আপা, জয়া আপার অভিনয় অনেক দেখেছি। শাবনূর আপা আমার পছন্দের অভিনেত্রী আর জয়া আপা আমার আইডল। আমি জয়া আপার মতো হতে চাই। সব সময় আপাকে ফলো করি। আমি যেহেতু থিয়েটার করিনি, তাই অভিনয় দেখে শিখতাম। এভাবেই নিয়মিত অভিনয় শিখছি। এখন আমার অভিনয় দেখে সবাই বলে আমি গডগিফটেড। এটাই আমার বড় অনুপ্রেরণা। আমি পড়াশোনাকে প্রথম প্রায়োরিটি দিয়ে অভিনয়টাই করে যেতে চাই। ভবিষ্যতে আমি পারফেক্ট অভিনেত্রী হতে চাই।
পড়াশোনা ও অভিনয় সামলাও কীভাবে?
আমি মাসে ১০ দিন নাটকে অভিনয় করি। দেখা যায়, বৃহস্পতি ও শুক্রবার এর মধ্যে থাকে। বাকি সময়টা স্কুলের ক্লাস শেষ হওয়ার পরে টাইমিং মিলিয়ে করি। এ জন্য স্কুল ও নাটকের টিম, বিশেষ করে পরিচালক সাজ্জাদ ভাইয়া খুবই সহযোগিতা করে। আবার বেশি দেরিও করি না। সে ক্ষেত্রে ব্যালেন্স করেই কাজ করি। পরিবার থেকেও শতভাগ সাপোর্ট আছে।
তোমরা কয় ভাইবোন?
আমরা দুই ভাই, এক বোন। আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি। সবাই চায়, আমি অভিনয়টাই করে যাই।
অভিনয়ের প্রথম দিকে কতটা আত্মবিশ্বাস ছিল?
প্রথম দিকে একটু ভয় পেতাম। যেমন ‘মাশরাফি জুনিয়র’ নাটকের অডিশনে এসে দেখি, মণি চরিত্রের জন্য অনেক মেয়ে এসেছে। আমি তখন প্রচণ্ড নার্ভাস ছিলাম। ভাবছিলাম, তারা কি আমাকে নেবে। টিকব কি টিকব না, সেটা না ভেবেই আমি আমার মতো করে অডিশন দিই। পরে শুনতে পাই আমাকে ডেকেছে। অবাক লেগেছিল প্রথম ধারাবাহিক নাটকেই প্রধান চরিত্রে। এখন আরও বেশি ভালো লাগে নাটকটি আমাকে পরিচিতি দিয়েছে। আমি জয়া আপার মতো আত্মবিশ্বাসী হতে চাই। আমি আপার মতো কাজ করে যেতে চাই। আপা সিনেমায় কাজ করেছেন, আমিও করব। ইচ্ছা আছে।
বর্তমান ব্যস্ততা কী নিয়ে?
পড়াশোনার জন্য আর নাটকে অভিনয় করতে পারছি না। আর এখন দর্শকদের একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। ভালো কাজের গল্প হলেই নাম লেখাব। আমি একটু বেছে বেছে কাজ করতে চাই। সংখ্যা বাড়াতে চাই না। সামনে নাটক ও সিনেমায় অভিনয়ের কথা চলছে। এগুলো এখনো চূড়ান্ত নয়।