পরিচালক শরাফ আহমেদ জীবন এখন অভিনয়েও পরিচিত মুখ। সম্প্রতি নাটকে তাঁর অভিনীত দুটি চরিত্র ‘বোরহান ভাই’ ও ‘লাবু কমিশনার’ জনপ্রিয় হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বিঞ্জে মুক্তি পাওয়া সিরিজ ‘অগোচরা’র গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এ ছাড়া নানা প্রসঙ্গে মঙ্গলবার বিকেলে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে বিনোদন।
আপনার অভিনীত নাটক কিংবা সিরিজের চরিত্রগুলো মজার হয়। ‘অগোচরা’র চরিত্রটা কেমন?
এটাতে এমন একটা চরিত্রে অভিনয় করেছি, যেটা খুব উপভোগ্য ছিল। যদিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গত ১৫ দিন সক্রিয় না থাকায় বুঝতে পারছি না। এটার শুটিং মানিকগঞ্জ ও ঢাকা মিলিয়ে করেছিলাম। পরিচালক সিদ্দিক আহমেদ কিন্তু আমার সহকারী ছিল। তবে অল্প কিছুদিন। ওর লেখার হাত খুব ভালো ছিল। শুটিংয়ের সময় সিদ্দিক বলছিল, ‘আমার গুরু, ওনার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখছি।’ এমনটা শোনার পর তো আমার ভীষণ লজ্জাই লেগেছিল। আমি বলেছি, ‘তোমাকে তো আমি কিছু শেখাইতে পারি নাই।’
আপনিও তো একসময় মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সহযোগীদের একজন ছিলেন। তা শিষ্যর পরিচালনায় কাজের আনন্দ কেমন?
শিষ্যর সঙ্গে যখন কাজ করি, তখন তাকে গুরু হিসেবেই দেখেছি। কারণ, শুটিং সেটে সেই গুরু। কাজল আরেফিন অমি আমার অনেক জুনিয়র। প্রথম দিকে আমার সঙ্গে কাজ করতে এসেছিল, আমি নিরুৎসাহিত করেছিলাম। কিন্তু এখন সে পরিচালক, আমি অভিনেতা; ওর চিন্তাটাকেই পর্দায় উপস্থাপনের চেষ্টা করি। এখন সিদ্দিক ও অমিকে আমি প্রাধান্য দেব, সরয়ার ফারুকী ভাই তো অবশ্যই আছেন, তাঁর সঙ্গে আমার অনেক কাজ হয়েছে। কিন্তু এই দুজন আমার চরিত্রটাকে অন্য রকমভাবে উপস্থাপন করে। অমির সঙ্গে এখন পর্যন্ত যত কাজ হয়েছে, প্রোডাকশন হিসেবে কেমন হয়েছে, তা আমি জানি না, তবে আমার সব কটা চরিত্র ভালো হয়েছে।
অমি ও সিদ্দিকরা দীর্ঘদিন আপনার সঙ্গে পথচলায় চরিত্রগুলোর অন্য রকম উপস্থাপন করতে পেরেছেন?
আমার মনে হয়, ওরা আমাকে বুঝতে পারে। অমির সঙ্গে তো প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে আমার কথা হয়। আর সিদ্দিকের সঙ্গে প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে দুই-তিনবার কথা হয়। অমির ‘কিডনি’ নাটকের কথা যদি বলি, ওখানে আমার চরিত্র খুব বড় নয়, কিন্তু ব্যাপক ভাইরাল। তবে এই চিত্রনাট্যে অন্য কেউ থাকলে বা পরিচালক অন্য কেউ থাকলে এতটা সাড়া ফেলত বলে মনে হয় না। জানি না, এটা বেশি বলা হচ্ছে কি না, কিন্তু এটা সত্যি। পরিচালকের সঙ্গে বোঝাপড়াটা খুব জরুরি। যেমন মোশাররফ করিম ভাইয়ের সঙ্গে ওয়াদা করেছিলাম, আমাদের প্রথম সিনেমা একসঙ্গে হবে এবং সেটা হচ্ছে। আমার মনে হয়, মোশাররফ করিম যখন আমার সেটে থাকেন, উদ্দীপনা ৫০ ভাগ বেড়ে যায়। আত্মবিশ্বাস বেশি পাই।
অভিনেতা জীবনের কথা শুনতে চাই, এই বোরহান ও লাবু কমিশনারের চরিত্র, এসব নিয়ে কেমন অভিজ্ঞতা হয় আপনার?
প্রতিনিয়ত অন্য রকম সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই। মানুষ আমাকে এখন ‘বোরহান ভাই’ হিসেবে চেনেন। একটা মানুষের নাম বদলে যায়! কী করব? সম্প্রতি গিয়েছিলাম জগন্নাথ ইউনিভার্সিটিতে। ওখানে পোলাপাইন ‘বোরহান ভাই’, ‘বোরহান ভাই’ বলে ডাকতেছে। লাবু কমিশনারও বলে অনেকে। এখন মানুষ আসল নামও জানতেছে, এই যেমন জীবন ভাই বলেও ডাকে।
এই দুটো চরিত্র নিয়ে আপনার নিজস্ব ভাবনা কী?
হাইপোথিটিক্যালি বললে এক রকম। আর অনেস্ট রিভিউ দিলে বলব, মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে নিজের প্রচার–প্রসার চাওয়া। অন স্ত্রিন কাজ করলে তো এটা হয়। আমি তো ওই অর্থে জিনিয়াস মানুষ নই, খুবই সাধারণ একজন—তাই জনপ্রিয়তার বিষয়টা খুব উপভোগ করি। পাশাপাশি এটাও চাই, আমার যেহেতু মূল পরিচয় নির্মাতা, পর্দার পেছনে কাজ করা, কিছু সৃষ্টি করা—ওই জায়গা থেকে সেই পরিচয়টা যদি সামনে বেশি করে আসে, তাহলে আরও বেশি ভালো লাগত।
অভিনীত চরিত্র নিয়ে যেমন কথা শোনেন, নির্মাণের বিষয় নিয়েও কি কেউ কিছু বলেন?
আজকে কয়েকজন ছেলেপেলে বলছিল, ‘আপনি নিজে প্রোডাকশন বানাচ্ছেন না? আমরা তো আপনার প্রোডাকশন মিস করি।’ জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী দেখছ?’ বলল, ‘আপনার অনেক নাটক আমরা সিডি–ডিভিডি কিনে দেখছি। সিনিয়র ভাইয়েরা যখন দেখত, তাদের কাছ থেকে সিডি–ডিভিডি চেয়ে নিয়েও দেখছি। আপনার নামের সাথে তো আমাদের এভাবে পরিচয়।’ এই যেমন ‘সিরিয়াস একটা কথা আছে’, ‘সিরিয়াস কথার পরের কথা’, ‘হাওয়াই মিঠাই’, ‘উচ্চমাধ্যমিক সমাধান’—এসবসহ আরও কয়েকটি নাটকের কথা বলে। এটা ঠিক, বোরহান ভাই, লাবু কমিশনার শরাফ আহমেদ জীবনকে যতটা আন্দোলিত করে, তার চেয়ে বেশি আনন্দ দেয় যখন আমাকে ডিরেক্টর হিসেবে কেউ কিছু বলে।
পরিচালকদের বড় স্বপ্ন থাকে সিনেমা বানানো। আপনি সেটাও শুরু করেছেন। এই ব্যাপারটা এখন পর্যন্ত কতটা আন্দোলিত করছে?
গল্পটার কাজ শুরু যখন করি, তখন চিন্তা ছিল ওটিটির জন্য করব। স্ক্রিপ্ট করার পর আমার প্রধান সহকারী পরিচালক নাহিদ হাসনাত বলল, অনুদানের বিষয়টা। আমরাও খামখেয়ালিভাবে ‘বিচারালয়’ অনুদানের জন্য জমা দিই। এরপর ওকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘অনুদান কি পাব?’ ও বলল, ‘কেন জানি মনে হচ্ছে দিই।’ কয় টাকাই আর খরচ হবে, ১৪–১৫ হাজার টাকার মতো। দেওয়ার পর জানতে পারলাম, শর্টলিস্টেড হয়েছে। এরপর তো নানা ধাপ পেরিয়ে ২৫ জুলাই শুটিং শুরু করি। শুটিংয়ের শুরুতে একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। একটু নার্ভাস ছিলাম। তবে আমাকে মোশাররফ করিম ভাই, গাওসুল আলম শাওন ভাই আর সানিয়াত ভাই বলেছেন, ভাববে তুমি নরমাল একটা জিনিস শুটিং করতেছ। মাথায় চাপ নিও না। আমিও সেভাবে নিচ্ছি। মনে হয়, খুব অসাধারণ একটা টিম পেয়েছি।
প্রথম ছবির শুটিং নীরবে শুরু করলেন?
আমরা নীরবেই কাজটা করতে চেয়েছি। ছবির শুটিংয়ের কারণে এখন আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সক্রিয় নই। না হলে দেখা যেত, একটা সুন্দর শট নেওয়ার পর ফেসবুকে দিই। তারপর সেটা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা, এতে মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটত। তাই আমার মনে হয়েছে, মনোযাগটা ছবিতে দিই। শুটিং শেষ করি, তারপর না হয় যত দরকার, আলোচনা করলাম।
আপনার প্রথম ছবি মুক্তির কোনো পরিকল্পনা করে রেখেছেন কি?
শীতের শেষে বলতে পারেন, জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারির দিকে। আমি কোনো কম্পিটিশনে যেতে চাই না। এই যেমন একসঙ্গে কয়েকটা ছবি মুক্তি দিল, আমারটাও দিলাম এ রকম। ঈদের সময়টায় ছবি মুক্তি দিতেই হবে, এমনটাও চাই না। মনে মনে চাই যে আমাদের ছবিটা যখন মুক্তি দেব, তখন যেন উৎসবের আমেজ থাকে। এখন তো মানুষ ছবি দেখে। এর মধ্যে আমার সঙ্গে অনেকের কথা হলো—আমার শুক্রবারে ঝামেলা আছে ছবি দেখতে যাব বা মঙ্গলবারে ছবি দেখতে যাব। অনেক মানুষের কাছে এমন কথা শুনছি। বহু বছর পর এমন কথা শুনছি।
এমন কথা শুনতে কেমন লাগে?
সবার কাছ থেকে এমন কথা শোনার পর প্রায়ই মনে হয়, ইশ কবে ছবিটার শুটিং শেষ হবে। কবে রিলিজ দেব। আমার ছবি সম্বন্ধেও যদি মানুষ এভাবে বলে, শুনতে কী রকম আনন্দ হতো বলে বোঝাতে পারব না। অন্যের ছবি দেখার জন্য সবাই যে এভাবে বলছে, এটাও একরকম আনন্দ দেয়, নিজের ছবি হলে তো আনন্দও আরও বেশি।
আপনার প্রথম ছবি ‘বিচারালয়’ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেবেন কি?
এটা ড্রামা জনরার। একটা সম্পর্কের গল্প, মানুষের সম্পর্কের। গল্পটা আমরা বলছি মার্ডার মিস্ট্রি দিয়ে। আপাতত এটুকুই বলব।