স্বামী চিত্রনায়ক শরীফুল রাজের ফেসবুকে সোমবার দিবাগত রাতে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের ব্যক্তিগত মুহূর্তের কিছু ছবি ও ভিডিও ক্লিপস প্রকাশিত হয়। সুনেরাহ দাবি করেন, ভিডিওগুলো পরীমনি নিজেই রাজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন। কিন্তু পরীমনি বলছেন, এটা ডাহা মিথ্যা। এসব নিয়ে আজ বুধবার দুপুরে প্রথম আলো বিনোদন কথা বলে পরীমনির সঙ্গে।
আপনার স্বামী চিত্রনায়ক শরীফুল রাজের ফেসবুক থেকে কয়েকটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। অভিনেত্রী সুনেরাহ বিনতে কামালের দাবি, ভিডিওগুলো আপনি পোস্ট করেছেন।
সুনেরাহ কে? ওই মেয়েকে তো আমি চিনিই না! ওর সঙ্গে আমার কখনো কোনো কথাই হয়নি। হুট করে কেন সে আমাকে নিয়ে এমন মন্তব্য করবে? মনে হয় সে আলোচনায় আসতেই আমার নাম নিয়ে এসব বলছে। এখন যদি এই কারণে রাজের সঙ্গে আমার বিচ্ছেদ হয়, তাহলে আমি ওই মেয়েকেই দায়ী করব।
এ বিষয় নিয়ে আজ বুধবার দুপুর পর্যন্ত শরীফুল রাজের সঙ্গে কথা হয়েছে?
এখন পর্যন্ত কথা হয়নি। আমি বেশ কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সম্ভব হয়নি। আমার তো সন্দেহ হচ্ছে, ও–ই পরিকল্পনা করে এসব করেছে।
কেন এমনটা মনে হলো আপনার?
ঘুম থেকে উঠেই যদি এ রকম একটা ঘটনা আমার সঙ্গে ঘটতে দেখতাম, তাহলে নাওয়া–খাওয়া বাদ দিয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে ছুটতাম। কিন্তু তাদের কারও মধ্যে সে ধরনের কিছুই তো দেখলাম না। আমি তো অবশ্যই খুঁজে বের করার চেষ্টা করতাম, কে বা কারা এসবের পেছনে জড়িত। সারাটা দিন গেল, আজ দুপুর পর্যন্তও কোনো পদক্ষেপের কিছুই চোখে পড়ল না। আমি পরিষ্কার বলে দিচ্ছি, এই মেয়েটা আমার সঙ্গে যে নাটক করেছে, তার ফল ভোগ করবে সে।
সুনেরাহ বিনতে কামাল এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলছেন?
এটা পূর্বপরিকল্পিত। পুরো প্ল্যান করে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছিল। একটা সময় দেখল যে আর ব্লেম দেওয়া সম্ভব নয়। আমিও তো কম নয়। আমার দিকে আঙুল তুলবে, তা তো হতে দেব না। আমি যখন ইস্যুটা নিয়ে কথা বলা শুরু করেছি, নগদে বাসা থেকে মামলা দেওয়ার জন্য বেরও হয়েছি, ঠিক সেই সময় দেখলাম, মেয়েটা তার ফেসবুকে পোস্ট এডিট করেছে। আমাকে নিয়ে যে লাইনগুলো লিখেছিল, তার ওপরে আমি খ্যাপা—এসব লাইন ফেলে দিয়েছে। তার স্ট্যাটাসে দেখলাম, রাজ ও আমার বিয়ের পর একদম নো কন্ট্যাক্ট। আমার কথা হচ্ছে, সেই মেয়ে যে ১০ বছরের বন্ধুত্বের ব্যাখ্যা দিয়েছে, তার কাছে কি কেউ ব্যাখ্যা চেয়েছে? অতি উৎসাহী হয়ে এসব করেছে। অতি উৎসাহ থেকে আমার নামও নিল! রাজের নাম নিল। ফেসবুক হ্যাকড হয়েছে বলল! কে এসব ভিডিও ছাড়ছে আমরা জানি, এটাও বলল! ওই মেয়েকে কেউ এসব লিখতে বলেছে। ও কে আমার জীবনের। কেন লিখছে এগুলো!
উনি কেন লিখছেন বলে মনে করছেন?
আমার পারসোনাল লাইফে রাজ যে কয়েক দিন ধরে বাসায় নেই, এসব কি কেউ এত দিন জানত! আমি কিন্তু কাউকে বুঝতেও দিইনি। গোপন রাখার চেষ্টা করেছি। ভেবেছি, আমরা যাঁদের মুরব্বি মানি, তাঁদের দিয়ে বিষয়টা সমাধান করব। কিন্তু এই মেয়ে কী করল, এই সার্কেলটাই এমন—আমরা যে একসঙ্গে নেই, এটা কীভাবে পাবলিশ করে দিল! সম্পূর্ণ এই মেয়ের প্ল্যান। এত দিন যে খবর কেউ জানত না, ওই মেয়ের নোংরা কাজের জন্য সবাই তা জানল। এই মেয়ে কোত্থেকে আমার জীবনে ঢুকে গেল! কোনো কারণ খুঁজে পাই না। হুট করেই আমাকে নিয়ে কথা বলা শুরু করল। রাত দেড়টায় যখন রাজের ফেসবুক থেকে এসব আপলোড হয়, কত মিনিট পর নেই হয়ে গেল। ওমা, ঠিক দুই ঘণ্টার মাথায় ওই মেয়ে স্ট্যাটাস দিল। মানে ওই মেয়ের ভোররাতেই স্ট্যাটাস দিতে হবে! সাজানো–গোছানো, একদম প্ল্যান করা। তা না হলে সারা দিন গেল, পরদিন দুপুর হলো—এটার পেছনে কারা আছে, কিছুই বের করল না। আমার তো এখন মনে হচ্ছে, সাইবার ক্রাইমে গিয়ে এসব আমারই বের করা উচিত। যে একদম গাধা, সে–ও বুঝবে, এটার পেছনে একটা চক্র কাজ করছে। এই চক্রই এসব করছে। মানলাম, বন্ধুরা সবাই চিল মুডে আছে। আমার তো মনে হয় না, এই সব বন্ধু রাজের ভালো চায়। কোনো বন্ধুর ভালো চাইলে আমরা কি বলব না, ‘এই তোর বউ আছে, বাচ্চা আছে। তুই ১০ দিন ধরে বাইরে কেন! বাসায় যাস না কেন!’ ১০ দিন হয়ে গেল, তোমরা খালি আড্ডাই মারো, চিলই করো! আজাইরা কথা। আমি তো আরও বেশি অবাক হয়েছি, যখন ভিডিওগুলো দেখলাম।
ভিডিওতে কী দেখে অবাক হলেন?
১০ বছরের ফ্রেন্ডশিপ, এটা মুখের ভাষা। কথাবার্তার কোনো আগামাথা কিছু নেই। এসব ভাষায় বন্ধুবান্ধবেরা কথা বলে, আবার সেসব ভিডিও করে রাখে! ওই মেয়ে লিখল, রাজের সঙ্গে তার ১০ বছরের বন্ধুত্ব। কথা হচ্ছে, রাজের ১০ বছরের বন্ধুদের সঙ্গে তো আমি সবচেয়ে বেশি ক্লোজ হব, তা–ই না। আমার বাসাতেই ওদের ওঠাবসা হবে। সেই ১০ বছরের মেয়েদেরকে আমি কেন এত দিন খুঁজে পাইনি। ওই মেয়ে লিখছে, বিয়ের পর যোগাযোগ রাখিনি। কথা হচ্ছে, আমি কি না করেছি বিয়ের পর যোগাযোগ রাখতে! তাহলে সমস্যা কি আমার! এই ১০ দিন রাজ বাসায় নেই, তাহলে এই ১০ দিনে তোমাদের কেন এত যোগাযোগ বাড়ছে। কয়েক বছর আগের এসব ভিডিও নিয়ে কী হতো, কিচ্ছু হতো না। এমনিতে সব ঠান্ডা হয়ে যেত। আমি শতভাগ নিশ্চিত, সুনেরাহ ইচ্ছা করে এসব ভিডিও ছড়াইছে। সবারটা গণহারে দিয়েছে, যাতে আমারে ব্লেম করা যায়। এগুলো সব ওই মেয়েরই মাস্টারপ্ল্যান। আমি আমার জামাইয়ের সঙ্গে আলাপ করতে পারতেছি না। অথচ ওই মেয়ে বলতেছে, এটা যদি রাজ বলে...! আরে অদ্ভুত, তুই কি রাজকে শিখিয়ে দিবি, কী বলবে? তার মানে রাজ নিশ্চয় ওই মেয়ের কাছে কোনো কিছুতে ধরা আছে। ওই মেয়ে হয়তো রাজকে ব্ল্যাকমেল করবে—আমার তো এটাই আশঙ্কা হচ্ছে। আমি তো এখন নিশ্চিত, রাজ কারও দ্বারা ব্ল্যাকমেল হচ্ছে। না হলে রাজ কি কোথাও বলেছে, পরীকে সন্দেহ হয়? তাহলে ওই মেয়ে কেন বলল, রাজ যদি বলে...। ওই মেয়ে এত কনফিডেন্ট কেন।
আপনার কথামতো, সুনেরাহ আপনাকে নিয়ে অনেক কিছু বলছেন। এসব নিয়ে কী ভাবছেন, কিছু বলবেন?
কিছু বলতে চাই না। আমি অবশ্যই এই মেয়ের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছি। যেখানে আমাদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে জটিলতা চলছে, সেখানে এই মেয়ে কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে আমার জামাইয়ের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে কথা বলছে। আমি একদম শিওর, ওদের আমার জামাইয়ের ফেসবুকে অ্যাকসেস আছে। ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে যারা যারা আছে, তাদের কেউ না কেউ এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এই ব্লেমটা আমার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আপনার স্বামী শরীফুল রাজ এত দিন ধরে বাসায় নেই কেন? ফোনও ধরছেন না বলছেন...
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কত কিছুই তো হয়। তবে বাসা থেকে বের হওয়ার মতো কিছু আমাদের হয়নি। অথচ রাজ বাসায় নেই কত দিন! এত দিন বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, একটিবারও আমার ও বাচ্চার খোঁজ নেয়নি। হতে পারে বন্ধুদের নিয়ে ব্যস্ত ছিল, পার্টি করছিল। কিন্তু আমি মনে করি, বিয়ের পর এতটা ফ্রি থাকা উচিত নয়। অন্তত কিছুটা হলেও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।
এভাবে যে আলাদা থাকছেন, এটা বিচ্ছেদের ইঙ্গিত নয় তো?
কী ইঙ্গিত দিচ্ছে, সেটা বুঝতে পারছি না। কিন্তু আমি সংসার করার কম চেষ্টা তো করছি না, পারছি কই! একটার পর একটা ইস্যু আসছে। তারপরও আমি যে রাজকে বিয়ে করেছিলাম, সেই রাজকে অনেক ভালোবাসি।