গীতিকবি পরিচয়ের বাইরে লতিফুল ইসলাম শিবলী একাধারে কবি, গায়ক,মডেল, ঔপন্যাসিক, অভিনেতাও। লিখেছেন নাটক ও চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য। নাট্যকার হিসেবে তাঁর লেখা প্রথম সাড়াজাগানো নাটক ‘তোমার চোখে দেখি’। নিজের লেখা নাটক ‘রাজকুমারী’তে মির্জা গালিবের চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ও করেন তিনি। নব্বইয়ের দশকজুড়ে ৪০০টির বেশি গান লিখেছিলেন তিনি। আইয়ুব বাচ্চুর ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’, ‘সুখেরই পৃথিবী সুখেরই অভিনয়’, ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘মাকে বলিস’; জেমসের ‘জেল থেকে বলছি’, ‘প্রিয় আকাশী’, ‘বিবাগী’, ‘পালাবে কোথায়’, ‘মন্নান মিয়ার তিতাস মলম’, ‘গিটার কাঁদতে জানে’; তপন চৌধুরী-শাকিলা জাফরের ‘তুমি আমার প্রথম সকাল’; মাইলসের ‘পলাশীর প্রান্তর; সোলসের ‘হাজার বর্ষা রাত’সহ বেশ কিছু সাড়াজাগানো গানের গীতিকবি লতিফুল ইসলাম শিবলীর জন্মদিন ছিল গতকাল ১৪ এপ্রিল। তবে কততম জন্মদিন, তা খোলাসা করতে চাইলেন না তিনি। শুক্রবার সন্ধ্যায় জন্মদিনে মুঠোফোনে বিনোদনের সঙ্গে কথা বললেন তিনি।
শুভ জন্মদিন। দিনটি কেমন কাটল?
পয়লা বৈশাখ, জন্মদিন, আমার ভাইদের সঙ্গে আর আমার দুই ছেলে ওমর–ওসমান ও ভাতিজাদের সান্নিধ্য—সবকিছু মিলিয়ে খুব ভালো কাটল আলহামদুলিল্লাহ।
ফেলে আসা জীবনটাকে কীভাবে দেখেন? আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
আলহামদুলিল্লাহ, একটা সুন্দর জীবন কাটিয়েছি। অ্যাটলিস্ট এটুকু বলতে পারি, এই জীবন নিয়ে আমার কোনো হতাশা নেই। জীবনের একটা অংশ গেছে গান আর কবিতায়, এখন যাচ্ছে উপন্যাসে। ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছর আমার উপন্যাস বের হয়েছে, এ পর্যন্ত ৭টি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। এখন উপন্যাসই আমার ধ্যানজ্ঞান। আমার নিজস্ব পাঠক তৈরি হয়েছে, একসময় যারা আমার গান শুনত, তারা এখন আমার উপন্যাস পড়ে।
উপন্যাস লেখায় গুরুত্ব দেওয়ার কারণ কী?
বাংলা উপন্যাসে তারুণ্যকে পথ দেখানোর মতো আদর্শবাদের ঘাটতি ছিল, তারুণ্যকে গাইড করার মতো কোনো কিছু উপন্যাসের ভেতর দিয়ে ঘটানো হয়নি। আমি আমার উপন্যাসে সেই কাজ করার চেষ্টা করছি। এ কারণেই আমার ‘আসমান’ উপন্যাসটা পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। আমি এখন তরুণদের হাতে পৌঁছে দিতে ‘এক মিলিয়ন কপি প্রজেক্ট’ নিয়ে কাজ করছি। উপন্যাসটি তরুণদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে—বহু তরুণ নেশা থেকে, বিপথগামিতা থেকে, হতাশা থেকে ফিরে এসেছে। এমনকি কেউ কেউ সুইসাইড অ্যাটেম্পট থেকেও ফিরে এসেছে। আমি এই বইয়ের রয়্যালটি ছেড়ে দিয়েছি, বইটাকে চ্যারিটি হিসেবে নিয়েছি। এখন এই বইয়ের এক মিলিয়ন কপি প্রজেক্টের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
সেই প্রকল্প কতটা এগিয়েছে?
২০১৯ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার কপি বিক্রি হয়েছে হয়েছে।
যাচ্ছি।
আপনার ‘দখল’ উপন্যাস থেকে একটা ওয়েব সিরিজ নির্মিত হবে বলে বছর দুয়েক আগে জানিয়েছিলেন। সেই কাজের কী খবর?
ওটার কাজ অনেকটা এগিয়েছিল। পরে চুক্তির জটিলতার কারণে আর এগোয়নি।
আপনার বাকি উপন্যাস থেকে সিনেমা, ওয়েব সিরিজ নির্মাণের পরিকল্পনা আছে?
আমি ফ্রেম বাই ফ্রেম লিখি, ফলে আমার প্রতিটি উপন্যাসকে সহজেই ভিজ্যুয়ালাইজ করা যায়। আমার উপন্যাসকে এক রাতের মধ্যেই চিত্রনাট্যে পরিণত করা সম্ভব।
আপনার কোনো পরিকল্পনা আছে?
সারা পৃথিবীতে উপন্যাসকে সিনেমায় অ্যাডপ্ট করার ট্রেন্ড আছে। তাই অবশ্যই আমারও সে পরিকল্পনা আছে। আর আমি একা পরিকল্পনা করলে তো হবে না। উপন্যাস নিয়ে সিনেমা বানানোর ট্রেন্ডটা দেশে প্রচলিত নেই। আমার উপন্যাস নিয়ে কেউ করতে চাইলে করতে পারবে।
সারা পৃথিবীতে উপন্যাসকে সিনেমায় অ্যাডপ্ট করার ট্রেন্ড আছে। তাই অবশ্যই আমারও সে পরিকল্পনা আছে। আর আমি একা পরিকল্পনা করলে তো হবে না। উপন্যাস নিয়ে সিনেমা বানানোর ট্রেন্ডটা দেশে প্রচলিত নেই।
গানে আপনাকে নিয়মিত পাওয়া যায় না...
আই হ্যাভ ডান মাই জব। নব্বইয়ের দশকে বাচ্চু ভাই, জেমস ভাইয়ের সঙ্গে গান লিখেছি। তখনকার কাজটা হয়ে গেছে, এখনকার গান এখনকার গীতিকারেরা লিখবে। আমি উপন্যাস নিয়েই আছি।
তাহলে গানে আপনাকে আর পাওয়া যাবে না?
একেবারে পাওয়া যাবে না, ব্যাপারটা এমন নয়। আগের মতো নিয়মিত পাওয়া যাবে না। হয়তো এমন হতে পারে, চিত্রনাট্যের প্রয়োজনেই আমাকে গান লিখতে হতে পারে। রোজার আগে কিছু কাজ করে রেখেছি। আমি আর রাজীব নামের এক শিল্পী মিলে কিছু গান তৈরি করেছি, ঈদের পর গানগুলো আসবে।
নব্বইয়ের দশকে বাচ্চু ভাই, জেমস ভাইয়ের সঙ্গে গান লিখেছি। তখনকার কাজটা হয়ে গেছে, এখনকার গান এখনকার গীতিকারেরা লিখবে। আমি উপন্যাস নিয়েই আছি।
ভক্তরা তো আপনার গানের জন্য অপেক্ষা করেন...
তারা এখন আমার উপন্যাস পড়বে।
আগামী ১০ বছরে কম করে হলেও ১০টি উপন্যাস লেখার পরিকল্পনা আছে। এখন একটা করে আসছে।
আগামী ১০ বছরের পরিকল্পনা কী?
আগামী ১০ বছরে কম করে হলেও ১০টি উপন্যাস লেখার পরিকল্পনা আছে। এখন একটা করে আসছে। আগামী বইমেলা থেকে হয়তো দুটি করে আসবে, ইনশা আল্লাহ।